গোদ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ বিষয়ে জানুন
গোদ রোগকে এলিফেন্টাইটিস বা লিম্ফেটিক ফাইলেরিয়াসিস ও বলে। আণুবীক্ষণিক ও সুতার মত দেখতে পরজীবী কীটের দ্বারা হয়ে থাকে এই রোগ যা নারী-মশার মাধ্যমে ছড়ায়। লসিকা তন্ত্র শরীরে তরলের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। পূর্ণবয়স্ক কীট মানুষের লসিকা তন্ত্রে বাস করে। এই পরজীবী মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের রক্তে প্রবেশ করে এবং লসিকা নালীতে ভ্রমণ করে এবং পূর্ণতা লাভ করে। ৫-৬ বছর এরা এভাবে থাকতে পারে এবং লক্ষ লক্ষ অণুজীবের জন্ম দেয়। এদের মাইক্রোফাইলেরিয়া বলে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শোষণের ফলে পরজীবী মশাতে যায় এবং এই মশা যখন একজন সুস্থ মানুষকে কামড় দেয় তখন সেই ব্যক্তির মধ্যেও ফাইলেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই ফাইলেরিয়া বিস্তার লাভ করে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যাডভান্স ষ্টেজে না যাওয়া পর্যন্ত গোদ রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়না। যার কারণে এটি নির্ণয় করাও কঠিন। গোদ রোগের প্রাথমিক লক্ষণের বিষয়ে জানলে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করাটা সহজ হয়। তাই চলুন জেনে নিই গোদ রোগের প্রাথমিক লক্ষণের বিষয়ে।
১। হাত এবং পা ফুলে যাওয়া
গোদ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে হাত ও পা ফুলে যাওয়া। হাতে ও পায়ে তরল জমা হওয়ার কারণে এমনটা হয়ে থাকে। একটি হাত অথবা একটি পা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকগুণ বেশি ফুলে যায়। এ রকম ভাবে ফুলে যাওয়া পা দেখতে হাতির পায়ের মত হয় বলে এই রোগকে এলিফেন্টাইটিস বলে।
২। ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই শরীরের আক্রান্ত স্থানটির চামড়া মোটা ও শুষ্ক হয়ে যায়। এছাড়াও ত্বকে ক্ষত বা গর্ত হতে দেখা যায় এবং ত্বকের বর্ণ গাঁড় হতে থাকে। একে হাইপারকেরাটোসিস বলে। আক্রান্ত স্থানে সঠিক ভাবে রক্ত প্রবাহিত হয়না বলে ত্বকে এমন সমস্যা দেখা দেয়।
৩। অসুস্থতা বোধ
গোদ রোগের আরেকটি সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে অসুস্থতা বোধ করা। রোগের অগ্রগতির সাথে সাথে অন্যান্য লক্ষণ যেমন – তীব্র জ্বর এবং শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার লক্ষণ ও প্রকাশ পায়। সংক্রমণ ও প্রদাহের কারণেই এমনটা হয়ে থাকে।
৪। স্ক্রুটাম বা অন্ডথলি বড় হওয়া
অন্ডথলি বড় হয়ে যাওয়া এলিফেন্টাইটিসের লক্ষণ। পেনিসের নীচের চামড়া সরে যায় বলে ব্যথা ও জ্বালা পোড়া হয়। ফাইলেরিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানের লসিকা তন্ত্রের ক্ষতি করে বলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলে যায়। লসিকা তন্ত্র শরীরে তরলের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
৫। ব্রেস্ট ফুলে যাওয়া
পুরুষের মত নারীদের ক্ষেত্রেও বাহ্যিক প্রজননতন্ত্র আক্রান্ত হয় ফাইলেরিয়া হলে। দুই উরুর মাঝামাঝি স্থানের ত্বকে ক্ষত হয় এবং ব্রেস্ট ফুলে যায়। লিম্ফ নোড ও ব্রেস্টে রক্ত প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হয় বলে লিম্ফ নোড ও ব্রেস্ট ফুলে যায়।
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে গোদ রোগ শনাক্ত করা যায়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে ডাইইথাইলকার্বামেজাইন (DEC) নামক ঔষধ দেয়া হয় যা রক্তের আণুবীক্ষণিক কীটকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। তবে এই ঔষধ সকল পূর্ণবয়স্ক কীটকে ধ্বংস করতে পারেনা। রোগটি যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্য কোন ব্যক্তিতে সংক্রমিত না হয় তা প্রতিরোধে সাহায্য করে এই ঔষধ। মশার কামড়কে প্রতিরোধ করাই হচ্ছে গোদরোগ প্রতিরোধের সহজ উপায়।
মন্তব্য চালু নেই