গুলশান-বনানী থেকে রাজনৈতিক কার্যালয় সরানোর পক্ষে আ.লীগ, বিপক্ষে বিএনপি-জাপা

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় কূটনীতিক পাড়ায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া শুরু করেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে কূটনীতিক পাড়া গুলশান-বনানীতে থাকা বিএনপি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) রাজনৈতিক কার্যালয় সরানোর ব্যাপারে সরকার ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ক্ষমতাসীনরা যৌক্তিক মনে করলেও অযৌক্তিক বলে মনে করছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মিত্র জাতীয় পার্টি। উল্লেখ্য, গুলশানে রয়েছে বিএনপির আর বনানীতে রয়েছে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কার্যালয়।

এ প্রসঙ্গে দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, গুলশান ও বনানীতে যে কার্যালয় রয়েছে, সেখানে গণমানুষের যাতায়াত নেই। সেখানে ‘হাই-প্রোফাইল’ ব্যক্তিরা বসেন। এখানে মূলত দলের প্রধান ব্যক্তির কার্যালয় রয়েছে। এছাড়া কখনও কূটনীতিকদের সঙ্গে মিটিং থাকলে এ কার্যালয়েই তা অনুষ্ঠিত হয়। দলের সর্বোচ্চ ফোরামের বৈঠকগুলোও হয় এখানে। তাও সবসময় নয়, দুই-তিন মাস পরপর হয় এসব বৈঠক। গণমানুষের যাতায়াত এই কার্যালয়গুলোতে নেই।

বিএনপির নেতারা এ প্রসঙ্গে বলেন, কার্যালয় সরিয়ে ফেললে যে জঙ্গি হামলা বন্ধ হয়ে যাবে, তার নিশ্চয়তা সরকার দিতে পারবে? তাহলে সরিয়ে নেওয়া হবে কার্যালয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কূটনীতিক জোনে রাজনৈতিক দলের কার্যালয় সরানোর পরামর্শ দিয়েছে সরকারকে। সরকার এই পরামর্শ যুক্তিযুক্ত মনে করছে। নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। এখানে কোনও মহলের ষড়যন্ত্র খোঁজা ঠিক হবে না।

অবশ্য অন্য একটি সূত্র জানায়, সরকার মনে করছে গুলশান কার্যালয়ে বসে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরকারবিরোধী কার্যক্রম চালান। গুলশানে বসে এটি পরিচালনা করতে সহজ হয়। গুলশানে রয়েছে পাকিস্তান অ্যাম্বেসি। রয়েছে সরকারবিরোধী কিছু কূটনীতিক অফিসও। গুলশান কার্যালয় থাকায় এসব কার্যক্রম করতে সহজ হয় বিএনপির জন্য। নিরাপত্তা ইস্যু ছাড়াও এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির গুলশান-বনানী থেকে কার্যালয় সরিয়ে নেওয়ার জন্যে শিগগিরই চিঠি দেওয়া হবে। নিজেদের কার্যালয় নিজেরা গুটিয়ে না নিলে প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে সেসব উচ্ছেদ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এমন নিশ্চয়তা কি দেওয়া হবে যে গুলশান থেকে খালেদা জিয়ার কার্যালয় সরিয়ে দিলে দেশে আর কোনও ঘটনা ঘটবে না? গুলশান থেকে কার্যালয় সরানোর পরও যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তাহলে এর দায়িত্ব কে নেবে? তিনি বলেন, এটি কার্যালয় সরিয়ে দেওয়ার সরকারের একটি ষড়যন্ত্র। জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কার্যালয় সরানোর সিদ্ধান্ত ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, এই সিদ্ধান্তের ভেতরে সরকারের ষড়যন্ত্র দেখা ঠিক হবে না। গুলশান ও বনানী কূটনীতিক পাড়া। সেখানে বিশেষ নিরাপত্তা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে নানান ধরনের লোকজন আসা-যাওয়া করেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট রয়েছে। সেই জোটে জঙ্গিরাও আছে। এটি আতঙ্কের কথা। তিনি বলেন, তাছাড়া সরকার তো তাদের মূল রাজনৈতিক কার্যালয় বন্ধ করছে না। তিনি বলেন, তারা গুলশানের কার্যালয় বন্ধ করে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে কার্যালয় ঠিক করুক। তিনি বলেন, কার্যালয় সরানোর সিদ্ধান্তকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখার মানে হলো জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদকে আস্কারা দেওয়া।

আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজি জাফরউল্যাহ বলেন, রাজনৈতিক কার্যালয় সরিয়ে ফেলার জন্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ষড়যন্ত্র নয়। তার যৌক্তিক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সেখানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বসবাস করছেন। তাই এ এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার সেখানে রাজনৈতিক কার্যালয় সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটাকে বিএনপিও ইতিবাচকভাবে নিতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, রাজনৈতিক কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার যুক্তিসঙ্গত কোনও কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। বনানীতে আমাদের দলের চেয়ারম্যানের কার্যালয় রয়েছে। সেখানে কিছু গণ্যমান্য ও কূটনীতিকদের সঙ্গে শুধু বৈঠক করা হয়। এছাড়া দলের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয় এ কার্যালয়ে। এখানে গণ-মানুষের যাতায়াত নেই। সুতরাং কার্যালয় সরিয়ে দেওয়ার যৌক্তিক কোনও কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। তিনি বলেন, মানুষকে সিন্দুকের ভেতর প্রবেশ করিয়ে নিরাপত্তা দেওয়ার ধারণা থেকে সরকারকে বেরিয়ে আসতে হবে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিয়িাম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, এটা সরকারের যৌক্তিক কোনও সিদ্ধান্ত নয়। বনানীতে আমাদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়। এ কার্যালয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে না।



মন্তব্য চালু নেই