গুঞ্জন নয়, বাজারে এবার বাস্তবেই নকল ডিম!
হাঁস-মুরগিকে যেন ডিম পাড়া থেকে অবসর দেওয়া হয়েছে। কারখানাতেই তৈরি হচ্ছে নকল ডিম। এতদিন এ সংবাদকে অনেকে গুঞ্জন বলে উড়িয়ে দিলেও এবার কলকাতার কয়েকটি বাজারেই পাওয়া গেল প্লাস্টিকের ডিম। আর নকল ডিম উৎপাদন ও বিক্রি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকায় কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। কলকাতার পাশাপাশি বর্ধমানের কাটোয়ার বাজারেও এদিন এক ‘ক্রেস্ট’ ডিম পুলিশ আটক করেছে।
কলকাতায় ডিমের প্রধান পাইকারি বাজার শিয়ালদহ বৈঠকখানাসহ বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে শুক্রবার কয়েক বাক্স নকল ডিম জব্দ করে পুলিশ। চীনের তৈরি বা চীনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এসব ডিম কলকাতার বাজারে আসে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে। কলকাতা পুলিশ এসব ডিম বাংলাদেশের বাজারে ঢোকারও আশঙ্কা করছে। আর সেটা হলে তা হবে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি। কারণ, এসব ডিম খেলে বা ব্যবহার করলে ক্যান্সারের শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে কলকাতার খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধক বিভাগ।
নকল ডিম চেনার উপায়
কলকাতার ইন্সটিটিউট অব হাইজিনের পুষ্টি বিজ্ঞানী ডা. প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নকল ডিম তুলনামূলকভাবে বেশি সাদা, চকচকে এবং ভারি। সাধারণ ডিম ভাঙার পরই কুসুমের সঙ্গে কিছুটা জলীয় অংশ বেরিয়ে আসে। কিন্তু প্লাস্টিক ডিমে তা হয় না। এছাড়া এর কুসুমও ভাঙতে চায় না। ক্যালশিয়াম অক্সালেট দিয়ে তৈরি হওয়ায় এই ডিমের খোল আগুনে দিলে পুড়ে গন্ধ বের হচ্ছে।
যেভাবে ধরা পড়লো নকল ডিম
গত বৃহস্পতিবার রাতে তিলজলায় ডিম ওমলেট করতে গিয়ে সন্দেহ হয় অনিতা কুমার নামের স্কুল শিক্ষিকার। তিনি নানাভাবে পরীক্ষা করে বোঝার চেষ্টা করেন। পরে নিশ্চিত হন ডিম নকল। বুঝতে পেরেই অভিযোগ জানান পুলিশে। এরপরই অভিযানে নামে পুলিশ। শুক্রবার সকালেই পার্ক সার্কাস বাজারের শামিম আনসারি নামে এক ডিম বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ।
এরপর কলকাতার প্রধান ডিম বাজার শিয়ালদহের বৈঠকখানা থেকে আরও তিন বাক্স ডিম আটক করে। ডিমগুলো এদিনই ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
কলকাতা পৌরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ট্রাকে চেপে আসা ডিমের সঙ্গেই এই নকল ডিম কলকাতায় ঢুকছে।
এদিকে ক্যালসিয়াম অক্সালেট দিয়ে তৈরি প্লাস্টিকের এই ডিমে স্নায়ুরোগ ও ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ হতে পারে।
বিষয়টি জানাজানি হতেই কলকাতায় তীব্র আতঙ্ক সৃৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ডিমের বাজারেও। নকল ডিমের কারণে মানুষ আসল ডিম কিনতেও ভয় পাচ্ছে। এদিকে এই ডিম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কলকাতা পুলিশ। যেহেতু এক স্কুল শিক্ষিকার অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে অনেকটা কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা হয়েছে। সেহেতু এই প্লাস্টিকের ডিম এরইমধ্যে বাংলাদেশের বাজারে ঢুকে পড়েছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে একটু সচেতন হলেই নকল ডিম শনাক্ত করা সম্ভব।
মন্তব্য চালু নেই