গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর ঝুট কাপড়ে তৈরী কম্বলে ওদের ভাগ্য ফিরেছে

সেলাই মেশিনের শব্দ কারো অচেনা-অজানা না হলেও, আজ আমরা যাদের কথা বলছি, তাদের কথা অনেকেরই অজানা। সূঁই-সুতো, সেলাই মেশিন আর বাহারী রঙের কম্বলের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে রয়েছে এদের সাফল্যের কাহিনী। নদী ভাঙ্গন কবলিত সংগ্রামী এই মানুষগুলো অভাব আর দারিদ্রতাকে পরাজিত করে আবারো সত্য বলে প্রমাণ করে দিয়েছে এই প্রবাদটিকে যে-পরিশ্রমই সৌভাগের চাবিকাঠি।
সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার যমুনার তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা ২৫ টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার নারী-পুরুষ এই সাফল্যের অধিকারী। গার্মেন্টেস ফ্যাক্টরীর ঝুট কাপড় দিয়ে উন্নত মানের ও বাহারী রকমের কম্বল তৈরী করে এরা অর্জন করেছে এই সাফল্য।

এখন থেকে প্রায় দুই দশক আগে যমুনার ভাঙ্গনে যখন এই অঞ্চলের মানুষ দিশেহারা, ঠিক তখনই জীবিকার তাগিদে কয়েকজন উদ্যমী ব্যক্তি বেছে নিয়েছিল ঝুট কাপড় দিয়ে কম্বল তৈরীর ব্যবসা। ঢাকাস্থ বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী থেকে কম দামে ঝুট কাপড় সংগ্রহ করে এনে সেলাই মেশিনে সেলাই করে তাতে দেয়া হয় কম্বলের রূপ। স্থানীয় বাজারে সস্তায় বিক্রি করে জীবন ও জীবিকা নির্বাহের এই প্রচেষ্টা হঠাৎ করেই রূপ নেয় বৃহত্তর ব্যবসায়। ঝুট কাপড়ে তৈরী বাহারী রকমের এই সস্তা কম্বল দারিদ্র পীড়িত শীতার্ত মানুষের শীত নিবারনের পাশাপাশি ধনী ও উচ্চবিত্তদেরও নজর কাড়তে কুন্ঠা বোধ করে না। ফলে জমে ওঠে কম্বলের জমজমাট বাজার।

ইতিমধ্যেই এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে চালিতাডাঙ্গায় গড়ে উঠেছে বৃহত্তর কম্বলের বাজার। স্থানীয়দের পাশাপশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে আসতে শুরু করেছে ক্রেতা ও বিক্রেতা। স্বল্প পূঁজির এই ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে শহরে। শুধু তাই নয়, এখানকার তৈরী কম্বলের মান ভালো হওয়ায় বর্তমানে তা দেশের চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে পার্শ্ববতী দেশ-ভারত, নেপাল ও ভূটানে।

কম্বল ব্যবসায়ীরা জানায়-ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী থেকে তারা পরিত্যক্ত ঝুট স্বল্প মুল্যে সংগ্রহ করে আনে। পরে স্থানীয় নারীও পুরুষেরা ওই সব ঝুট বাড়ী বাড়ী নিয়ে গিয়ে সেলাই মেশিনে সেলাই করে রূপ দেয় বাহারী রকমের কম্বলে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি কম্বল তৈরীর জন্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টাকা। প্রত্যেক নারী অথবা পুরুষ সংসারের কাজের ফাকে প্রতিদিন ৫-৭ টি কম্বল তৈরী করতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে তাদের দৈনিক আয় হয় দেড় থেকে দুইশত টাকা। আর এভাবেই এখানকার নারী ও পুরুষেরা বদলিয়েছে তাদের ভাগ্য, হয়ে উঠেছে সাবলম্বি। বর্তমানে তারা এই শিল্পকে বেছে নিয়েছে জীবন-জীবিকার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত সিরাজগঞ্জ জেলায় গড়ে ওঠা সম্বাভনাময় এ শিল্পটির আরো প্রসারের জন্য দেশে রাজনৈতিক স্থীতিশীলতাসহ সরকারী ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলোর পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তাদের দাবী সুদ মুক্ত অথবা সহজ শর্তে ঋৃণ প্রদান করা হলে এখানকার ব্যবসায়ীরা এই শিল্পটিকে আরো এগিয়ে নিতে পারবেন এবং দেশের অর্থনীতিতে যোগ করতে পারবেন আরো এক নতুন মাত্রা ।



মন্তব্য চালু নেই