“গাধা! দোয়া কালেকশন করে লাভ নেই, প্রশ্নপত্র কালেকশন কর”

আমার বড় মেয়ের কাছে তার খালা বিদেশ থেকে ফোন করেছে।

-খালামনি দোয়া কালেকশন করছি। খুব করে দোয়া কর। সামনে ভর্তি পরীক্ষা।
-গাধা! দোয়া কালেকশন করে লাভ নেই। প্রশ্নপত্র কালেকশন কর।
-আগের দোয়া না করলেও, এইবার দোয়া কর যেন এই কথা জীবনে আর শুনতে না হয়।

আমরাও দোয়া করি, আমাদের বাচ্চাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাক “প্রশ্নপত্র ফাঁস” বাক্যটি। আমি আশাবাদী, একদিন আমাদের জীবন থেকে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবন থেকে সব অবক্ষয় মুছে যাবে। শুধু উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে আমাদের।

আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করেন, আমাদের উত্তরণের পথ বা উপায় কি? এক কথায় উত্তর খুঁজে পাই না। চুপ করে থাকি। অন্ধকারে হাতড়াতে থাকি, কিভাবে? কিভাবে তা সম্ভব??

এক বোন ইনবক্স করেছিল সমস্যা জানিয়ে। সমাধান দিতে পারিনি। একক সমাধান দিতে পারলেও সামগ্রিক সমাধানের কোন রাস্তা জানি না। তিনি জানিয়েছিলেন, “ভাই আমার আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বাচ্চাকে সব বিষয়ে টিচারের কাছে পড়াতে পারি না। অথচ বাচ্চার স্কুলের শিক্ষকরা ক্লাসে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়, তার কাছে কোচিং না করলে ফেল”। আমার তো সেই সামর্থ্য নেই, আমি কি করব, একটু বলবেন?? জ্বলতে থাকা আশার প্রদীপ ধপ করে নিভে গেল যেন!!

মাঝে মাঝে মনে হয়, এই জন্যই বোধহয় শিক্ষকরা স্কুলে বাচ্চাদের আর নীতি নৈতিকতার গল্প বলেন না। হারিয়ে গেছে ইশপের গল্প আর মোরাল বলা কাহিনী।

মেতে আছে আমাদের সন্তানেরা ইয়াবা আর পর্ণগ্রাফি নিয়ে!!

বাবার অবৈধ আয় তো আজ সন্তানদের অহংকারের বিষয়। আমরা যে এলাকায় থাকতাম, স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপর ঘুষ খেতে এমন একজন লোকের কথা জানতাম। সেই এলাকায় তিনি একমাত্র ঘুষখোর ব্যক্তি ছিলেন বলে জানি। তার ছেলেকে “তোর বাবা ঘুসখোর” বললে, সে লজ্জায় মাথা নত করে চলে যেত। তিনদিন আর তার চেহারা দেখা যেত না। এখন আর তা বলার মানুষ নেই। কে কাকে বলবে? সবাই ঐ কাজে জড়িত।

একদিন জুম্মার নামাজের আগে, একজন লোক হটাত অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। খুৎবা তখনও শুরু হয়নি। সাথে স্বজন কেউ ছিল না। তিন চারজন মুসুল্লি তাকে ধরাধরি করে হাসপাতাল নিয়ে গেল। পাশে কয়েকজন আফসোস করছিলেন, “অজ্ঞান হওয়ার আর সময় পেল না! আহা! বেচারারা জুম্মার নামাজ মিস করল!!”

মরণাপন্ন অপারেশনের রোগী রেখে ডাক্তার চলে যান চিল্লায়। সারারাত ওয়াজ করা হয়, হাজার হাজার মানুষের শান্তি নষ্ট করে।

দ্বিখণ্ডিত চাঁদের ছবি বানিয়ে, মরুভূমিতে, পানিতে, নৌকায়, পাহাড়ের উপরে, জমিতে নামাজের ছবি দিয়ে আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হয় আমাদের। আলুর উপর মাংসের উপর আল্লাহু লেখা দেখে বুঝতে পারি যে, আসলেই আল্লাহ্‌ আছেন।

আল্লাহ্‌র মহান বাণী এবং রসুল(সা) এঁর জীবনী থাকা সত্ত্বেও মহান আল্লাহ্‌র সত্ত্বা এবং অস্তিত্ব খোঁজার জন্য হয়রান হয়ে ঘুরতে হয় আমাদের!!

কিভাবে এবং কি উদাহরণ সৃষ্টি করব আমরা, আমাদের সন্তানদের সামনে?? রাজনীতি, সমাজনীতি, পরিবারনীতি, শিক্ষা………!! কোথায় সেই উদাহরণ, যা শিখবে আমাদের বাচ্চারা!!

জানি না উত্তর, জানি না পথ, জানি না দিক। তবুও পথ চলি আমি! আশার আলো আর কথার ঝুলি নিয়ে!!

mahbub



মন্তব্য চালু নেই