গহন অরণ্যে প্রাণ হাতে মধু সংগ্রহ!
জলে কুমির ও ডাঙায় বাঘ- এই রোজ নামচার ওপর ভর করেই প্রতিবছর মধু সংগ্রহের কাজে নামেন মউলিরা। সুন্দরবনের গহন অরণ্য থেকে মধু সংগ্রহর ওপরই বছরের অনেকখানি জীবিকা নির্ভর করে এঁদের। তাই প্রতি০বছর এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে, বন দপ্তরের দেওয়া অনুমতিপত্র নিয়েই সুন্দরবনের জঙ্গলে মধু সংগ্রহের জন্য প্রবেশ করেন মউলিরা। এ বছরও ১ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনের বিভাগীয় বন দপ্তরের অধীন এলাকায় মধু সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, গত ৭ এপ্রিল থেকে ব্যাঘ্র প্রকল্পের চারটি রেঞ্জ এলাকায় মধু সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে মউলিদের।
জঙ্গলে প্রবেশের আগে বেশ কিছু নিয়ম-কানুন মাথায় রাখতে হয় মউলিদের। বন দপ্তরের দেওয়া অনুমতিপত্র নিয়ে প্রথমে সকলে মিলে মা বনবিবির পুজো করেন। তার পরে প্রত্যেকেই নিজেদের হাতে তাবিজ কবজ বেঁধে নেন। পরদিন ভোরবেলা সূর্যর আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে নৌকায় পুজো দিয়ে শুরু হয় মৌচাকের খোঁজে জঙ্গলের উদ্দেশে যাত্রা। সুন্দরবনের ছোট ছোট খাঁড়ি এলাকায় নিজেদের অদ্ভুত ঘ্রাণশক্তি ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মৌচাক খুঁজে বের করেন মধু সংগ্রহকারীরা।
এরপর সন্তর্পণে জঙ্গলের ভেতর প্রবেশ করে এক একটি মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন তাঁরা। মধু সংগ্রহর সময় সাধারণত কথা বলেন না মউলিরা। সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। মৌচাক খুঁজে পাওয়ার পরে কাঁচা হেতাল গাছের পাতা দিয়ে মশাল বানিয়ে, তার ধোঁয়া দিয়ে মৌচাক থেকে মৌমাছি তাড়িয়ে তা থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়।
তবে সব সময় সব জঙ্গলে মৌচাক পাওয়া যায়, এমনটা নয়। অনেক সময় এমনও হয় যে, সারাদিন ঘুরে ঘুরেও মেলে না মৌচাকের খোঁজ। প্রতিবছরের মতো এ বছরও মধুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে বন দপ্তর। এ বছর মোট কুড়ি মেট্রিক টন টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্য দিকে, এবার প্রায় ৭০০ জন মউলি ৯৭টি দলে ভাগ হয়ে এই মধু সংগ্রহের কাজে নেমেছেন।
মধু সংগ্রহের কাজে জীবনের ঝুঁকি থাকায় সরকারি উদ্যোগেই সমস্ত মউলিদের জীবনবিমার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত ৫ এপ্রিল দীননাথ জানা ও ধনঞ্জয় মান্না নামে দুই মউলি বাঘের থাবায় জখম হয়েছেন আজমলমারির জঙ্গলে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও বিপদ উপেক্ষা করেই প্রতিবছর মধু সংগ্রহে সুন্দরবনের জঙ্গলে প্রবেশ করেন মউলিরা। কারণ, তাঁদের সংসার নির্ভর করে এই জীবিকার ওপরই।
মন্তব্য চালু নেই