গল্প নয় সত্যি, মৃত্যুর মুখ থেকে মালিককে বাঁচিয়ে আনলো কুকুর
ঘাড় ভেঙে বরফের স্তূপে পড়েছিলেন। শরীর অসাড় হয়ে গিয়েছিল। প্রাণ বাঁচিয়ে আর বাড়ি ফেরা সম্ভব ছিল না। আশপাশে লোকজনও নেই। কে সাহায্য করবে? ঠিক সেই সময় ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তারই পোষা কুকুর।
এক আধ ঘণ্টা নয়, টানা ২৪ ঘণ্টা! মালিকের শরীরের উপর শুয়ে কাটিয়ে দেয় কুকুরটি। চারদিকে বরফ। তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবেই শূন্য ডিগ্রির চেয়েও কয়েকধাপ নিচে। মালিককে ওই বিপদের মুখে ছেড়ে যায়নি কুকুরটি। নিজের শরীরের উষ্ণতা দিয়ে মালিককে গরম রাখার চেষ্টা চালিয়ে যায়। টানা ২৪ ঘণ্টা!
সিনেমার গল্প নয়। সত্যি ঘটনা। ঘটনাটি ঘটেছে ১ জানুয়ারি। অ্যামেরিকার মিশিগান প্রদেশের পেটোস্কি শহরে। প্রতিদিনের মতো বাড়ি থেকে জ্বালানির কাঠ জোগাড় করতে বেরিয়েছিলেন পেটোস্কির বাসিন্দা বছর চোষট্টি বছর বয়সি বব। তখন প্রায় রাত সাড়ে দশটা। ভেবেছিলেন সামনে থেকে কয়েকটি কাঠের টুকরো নিয়ে ফিরে আসবেন। রাতে আগুন জ্বালানোর জন্য লাগবে।
ফলে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন বাড়ির পোশাকেই। কিছুদূর যাওয়ার পর ঘটে দুর্ঘটনা। পা পিছলে পড়ে যান তিনি। চেষ্টা করেন হাঁটবার। কিন্তু, পারেননি। আসলে ঘাড় ভেঙে শরীর অসাড় হয়ে যায়। নড়ার ক্ষমতাও ছিল না। বেগতিক দেখে চিৎকার করতে শুরু করেন বব। কিন্তু, কেউ আসেনি। আসবে কী করে? ববের নিকটতম প্রতিবেশী থাকেন অর্ধ মাইল দূরে। কিন্ত মালিকের চিৎকার শুনতে পায় কুকুর। আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে আসে বছর পাঁচেকের পোষ্য কুকুর কেলসি। কী করবে বুঝতে না পেরে বরফের স্তূপে আটকে পড়া মালিকের শরীরের উপর শুয়ে পড়ে। রাত কাটে এভাবেই।
সেই রাতের বর্ণনা করতে গিয়ে বব জানিয়েছেন,“আমি জোরে জোরে চিৎকার করলেও কেউ শুনতে পায়নি। কেলসি আমার উপর শুয়ে পড়ে। আমার শরীর জিভ দিয়ে চাটতে থাকে। আমি চিৎকার থামায়নি। কেলসিও অবিরাম ডেকে যায়।” এভাবে কেটে যায় উনিশটি ঘণ্টা। এবারে জ্ঞান হারান বব। পরে কেলসির ডাক শুনতে পান রিক নামে আরেক প্রতিবেশী। তিনি ববকে উদ্ধার করেন।
ববের কথায়, “কেলসি চিৎকার করে লোকজন ডাকার চেষ্টা করেছিল। তার দৌলতে পরদিন সন্ধা সাড়ে ছ’টা নাগাদ রিক আমার সন্ধান পায়।” খবর যায় ববের মেয়ে জেনির কাছে। তড়িঘড়ি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর অপারেশন হয় ববের। ডাক্তাররা পরে বলেন, “আসলে কেলসিই বাঁচিয়ে রেখেছিল ববকে। ববের বেঁচে থাকার কথাই নয়। ওই ভাবে শরীরের তাপ দিয়ে না রাখলে অনেক আগে মৃত্যু হয়ে যেত ববের।”
মন্তব্য চালু নেই