গর্ভে রেখেই সন্তান বিক্রি পাষণ্ড বাবার

জয়নাল আবেদীন জয়, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : ‘তোর মতো বৌ ঘরে থাকলে জনমে আমি পোলার মুহে বাপ ডাক হুনতে পারুমনা। কুফা, অলুক্কি তুই ফাঁসির ঝুইলা মর। মাইয়া বেচচি বালা করছি, তোর পেডেততে যত্তো মাইয়া অওয়াবি, বেকগুলারে খারাপ পাড়ায় বেইচ্চা দিমু। আর নাইলে আমারে তালাক দে তুই’।

কেন তার সন্তানকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে এভাবেই স্ত্রীর ওপর ক্ষোভ বর্ষণ করে পাষণ্ড স্বামী হাবিবুর রহমান।

হাসপাতালের বেডে মাতৃকালীন অস্ত্রোপচারের পর জ্ঞান ফিরে এলে সন্তানের খোঁজ করতে গিয়ে মা রোকসানা জানতে পারে গর্ভে থাকা অবস্থায় তার কন্যাশিশুকে এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে স্বামী হাবিব। দ্বিতীয় বার কন্যাশিশু জন্ম নেয়ার অপরাধে আবারও বিয়ে করে ফেলেছে স্বামী। অসুস্থ শরীর নিয়ে অনাহারে কাটছে রোকসানার দিন। এর ওপর নিয়মিতভাবে চলছে স্বামী আর সতীনের প্রহার।

সর্বশেষ গতকাল শনিবার পেটে লাথি মেরে পাষণ্ড স্বামী ফাটিয়ে দেয় মাতৃকালীন অস্ত্রোপচারের সেলাই। উপজেলার সদর ইউনিয়নের রূপগঞ্জ গ্রামে এই অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। রোকসানা বেগম জানান, তিনি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বেলাশহর গ্রামের জলফু মিয়ার মেয়ে। ৯ বছর আগে উপজেলার

সদর ইউনিয়নের টানমুশুরী গ্রামের করিম মিয়ার বড় ছেলে সিএনজিচালক হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছরের মধ্যে তার মেয়ে হাবিবা আক্তার জন্ম নেয়ার পরই রোকসানার আলোময় জীবনে অন্ধকার নেমে আসে।

স্বামী হাবিবসহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পুত্র সন্তানের আশায় উদগ্রীব ছিল। এরপর থেকেই কারণে-অকারণে রোকসানার ওপর চলতো স্বামীর অশুরিক অত্যাচার। আরও ৩ বছর পর মেঘলা আকাশে সূর্য উঁকি দেয়ার মতো রোকসানা জীবনে সাময়িক সুখ পরশ বুলিয়ে যায় ছেলে আবিরের জন্ম হওয়াতে। ছেলে জন্ম দিতে পারায় সংসারে বেড়ে যায় রোকসানার কদর। কিন্তু বিধিবাম এক বছর বয়সে বাড়ির পাশের জলাশয়ে খেলতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায় ছেলে আবির। এরপর পুরোপুরি আঁধার নেমে আসে রোকসানার জীবনে।

গত বছরের শেষদিকে রোকসানা আবার অন্তঃসত্ত্বা হলে যত্নআত্তি শুরু হয় তার। নিরাপত্তার স্বার্থে নিজবাড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী রূপগঞ্জ গ্রামের সাইজুদ্দিন হাজীর বাড়িতে ভাড়ায় উঠেন স্ত্রীকে নিয়ে। ৭ মাসের সময় আল্ট্রাসনোগ্রাম করে যখন জানতে পারেন গর্ভে আবারও কন্যাসন্তান এসেছে তখন থেকে হঠাৎ রূপ বদলে যায় হাবিবুরের। শুরু হয় নির্যাতন। রাতদিন চলে অত্যাচারের খড়গ। অবশেষে গত দুমাস আগে সকলের অগোচরে পার্শ্ববর্তী সোনারগাঁও এলাকায় প্রিয়াঙ্কা নামে এক মেয়েকে বিয়ে করে হাবিবুর। গর্ভে সন্তান রেখেই আড়াইহাজার এলাকার এক ব্যবসায়ীর কাছে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন নিজের সন্তানকে।

এছাড়া হাসপাতালের সমস্ত খরচাও বহন করার কথা থাকে সন্তান ক্রেতা সে ব্যবসায়ীর। গত মাসের পহেলা তারিখ রোকসামা মুড়াপাড়া বাজারের মার্জিনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয় প্রসবকালীন ব্যথা নিয়ে। পরের দিন কন্যাসন্তানের জন্ম হলে তাকে অপারেশন থিয়েটারে রেখেই সন্তানকে নিয়ে চলে যায় অজ্ঞাত পরিচয়ের সে ব্যবসায়ী। এরপর হাসপাতালে জ্ঞান ফিরে পেলে রোকসানা জানতে পারে তার সন্তান বিক্রির সংবাদ।

এরপর স্বামীও তাকে ভরণপোষণ দেয়া বন্ধ করে দেয়। রোকসানা সন্তান ফেরত পেতে বিভিন্ন জায়গায় নালিশ করায় গতকাল সকালে এসে স্বামী হাবিব ও সতিন প্রিয়াংকা তাকে এলোপাথারী পিটায়। এক পর্যায়ে পেটে লাথি মেরে পাষণ্ড স্বামী হাবিব ফাটিয়ে দেয় রোকসানার মাতৃকালীন অস্ত্রোপচারের সেলাই। গুরুতর আহত অবস্থায় সে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। এই ঘটনায় রোকসানা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। -এমজমিন



মন্তব্য চালু নেই