‘গরু মেরে জুতা দান, মানুষ মেরে ত্রাণ’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, ‘গরু মেরে জুতা দান আর মানুষ মেরে ত্রাণ দিচ্ছে সরকার। কয়েকদিন আগে সরকারের ত্রাণ না নিয়ে ফেরত দেওয়া হয়েছিল। এখন সেই ত্রাণ নেওয়া হচ্ছে।’
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের মাদারপুর ও জয়পুর গ্রামে সহিংস ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের খোঁজ খবর নিতে গিয়ে রোববার তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি বেলা ১২টার দিকে সেখানে এসে বিকেল ৪টা পর্যন্ত থেকে তাদের খোঁজ নেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘সাহেবগঞ্জ খামারের জমি সাঁওতালদের বাব-দাদার। এই জমিতে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ কংক্রিটের খুঁটি দিয়ে তারকাটার বেড়া দেওয়ার কোনো অধিকার নেই।’
এই মুহূর্তে তারকাটার বেড়া খুলে ফেরার আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, এমপি গোফরান, ওয়ার্কার্স পার্টির গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সম্পাদক আব্দুল মোতিন মোল্লা, জেএসডির উপজেলা সভাপতি আইয়ুব হোসেন প্রমুখ। পরে বেলা ৫টার দিকে তারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন।
জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘সাঁওতালদের রক্তের সঙ্গে আমাদের রক্তের কোনো পার্থক্য নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে মানবতা নেই আর আমাদের মধ্যে মানবতা আছে। এটাই তাদের সঙ্গে আমাদের ব্যবধান।’
এ সময় তিনি সরকারকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘এখানকার সাঁওতালদের ওপর আর একটা গুলি চললে দেশ পুড়িয়ে দেওয়া হবে।’
তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ খামারের জায়গায় সাঁওতালদের ঘরবাড়ি অবৈধ বলবেন না। বরং সরকার অবৈধ ভাবে উচ্ছেদের নামে তাদের উপর হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। শুধু তাই নয়, মামলা করে তাদের বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে। এদের বিচার করতে হবে।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গাইবান্ধা ৪ গোবিন্দগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা মনোয়ার হোসেন চৌধুরী সাঁওতালদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। তিনি এ সময় সাঁওতালদের পুনর্বাসনের কথা বললে তারা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। ওই এলাকার বাসিন্দা ভিউজিলিউস হেমরম জানান, তারা পুনর্বাসন চান না, চান বাপ দাদার সম্পত্তি ফিরে পেতে চায়।
পরে তিনি সাঁওতালদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন। এ সময় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নেতারাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এ ঘটনায় প্রাণের ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় সাঁওতালরা। এখন তারা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সম্প্রতি শীত পড়ায় ওই সব পরিবারের শিশুরা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জের রংপুর চিনিকলের জমি উদ্ধারকে কেন্দ্র করে সাঁওতালদের উপর হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কয়েকজন সাঁওতাল গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যে ৩ জন মারা যান। তারা হলেন শ্যামল হেমরম, মঙ্গল মার্ডী ও রোমেশ সরেন।
মন্তব্য চালু নেই