গরমে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে
তীব্র গরমে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। এ রোগে আক্রান্ত রোগীতে মহাখালীর কলেরা হাসপাতালে এখন ঠাঁই নেই অবস্থা।
এখন হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগী আসলে তাদের অস্থায়ী তাবুতেও জায়গা দেওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, কলেরা হাসপাতালে একে একে রোগী আসছেন আর ভর্তি হচ্ছেন। ৩শ শয্যার হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে ৪শ। ফলে অতিরিক্ত রোগীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে তাবু।
হাসপাতালের ডায়রিয়া রোগের প্রধান চিকিৎসক ড. আজহারুল ইসলাম খান জানান, সারাবছর গড়ে আড়াইশ থেকে ৩শ রোগী হয়। কিন্তু মার্চ থেকে গরম শুরু হওয়ার পর রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় প্রচুর। এ সময় রোগীর সংখ্যা ৪শ থেকে সাড়ে ৮শ পর্যন্ত হয়ে যায়।
তিনি জানান, এখন ৪শ রোগী আছে। হাসপাতালের ভেতরে ৩শ আর অস্থায়ী তাবুতে আছে ১শ জন। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি। আর এই সময় শিশু ও বয়স্করাই বেশি আক্রান্ত হয়।
তিনি বলেন, যদি রোগীর সংখ্যা আরো বেড়ে যায় তখন এই তাবুতে জায়গা দেওয়া যাবে না। নতুন করে তাবু তৈরি করতে হবে। আর এর মধ্যে অনেক রোগী সুস্থ্য হয়ে বাড়ি চলে যাবেন। কারণ এখানে যারা আসে তাদের ৮০ শতাংশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি চলে যায়। ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ১০০ ভাগ সুস্থ্য হয়ে সবাই চলে যায়।
তিনি জানান, এই রোগ মূলত দূষিত পানি ও বাসী খাবারের কারণে হয়ে থাকে। বেশির ভাগ রোগী আগে মিরপুর থেকে আসতো। তাই এখন সেখানে একটি সেন্টার করে দেওয়ায় এখন আর আসে না। এখন বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলো থেকে বেশি পরিমাণে রোগী আসে।
এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কেউ কেউ সেবার মান সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন। গুলশান থেকে সিনহা নামের ১১ মাসের একটি শিশুকে তার মা কল্পনা আক্তার গতকাল নিয়ে আসেন এই হাসপাতালে।
তিনি জানান, তার সন্তান তিন দিন ধরে অসুস্থ্য। গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু তার পাতলা পায়খানার অবস্থা আগের মতোই আছে। ডাক্তার শুধু স্যালাইন খাওয়াতে বলছে। আর কোনো ওষুধ দিচ্ছে না।
মুন্সীগঞ্জ থেকে সাত মাসের শিশু ইরাকে তার মা রানী আক্তার নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, চার দিন ধরে হাসপাতালে আমার সন্তান চিকিৎসাধীন তবুও বাচ্চার কোনো উন্নতি দেখছি না। পাতলা পায়খানার পাশাপাশি বমি করে আর মাথাটা উঠাতেই পারে না। ডাক্তার বলছে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আর কতদিনে ঠিক হবে তা বলে না। কিছু বললে বলে হাসপাতাল থেকে চলে যান। নাম কেটে দেই। কিন্তু আমার প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা করার সামর্থ নেই।
তিনি বলেন, আগে এই হাসপাতালের চিকিৎসা ভালো ছিল। ১০ বছর আগে আমার ছেলেকে নিয়ে আসছিলাম তখন ১ দিনে সুস্থ্য হয়ে যায়।
গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে আসা ৬৫ বছর সাফিয়া বেগমকে একই রোগের কারণে এই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। কিন্তু উন্নতি হয়নি। ডাক্তার বলছে ঠিক হয়ে যাবে। এসময় তিনি এই হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো না বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আমাদের খোজ খবর ঠিকমতো নেওয়া হয় না।
এ সম্পর্কে ড. আজহারুল ইসলাম বলেন, ভাইরাল ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে কারো কারো সুস্থ্য হয়ে উঠতে ৫ থেকে ৭ দিন সময় লাগতে পারে। কিন্তু বেশির ভাগ রোগীই ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সুস্থ্য হয়ে যায়।
মন্তব্য চালু নেই