গরমের আতঙ্ক হিট স্ট্রোক
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। প্রতিকূল রূপ ধারণ করছে পরিবেশ। বাড়ছে বৈষ্ণিক উষ্ণতা। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। এই বছর শীতের ব্যপ্তি ছিল কম। চৈত্রের শেষেই শুরু হয় প্রচন্ড তাপাদাহ। তীব্র গরমে সকলের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। প্রচণ্ড গরমে নানা রোগ, যেমন হিট স্ট্রোক, সান র্বানে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এই গরমে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে হিট স্ট্রোক।
হিট স্ট্রোক হচ্ছে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্টি হওয়া এক ধরনের শারীরিক সমস্যা। মানুষের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। যদি এটি ১০৪ ফারেনহাইটের বেশি হলে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা তৈরি হয়। হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা না দেয়া হলে রোগী মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
হিট স্ট্রোকের কারণ:
পানিশূন্যতা হিট স্ট্রোকের প্রধান কারণ। হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে প্রচণ্ড গরমে দেহে পানির পরিমাণ কমে গিয়ে যেন পানিশূন্যতা তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। বেশি গরমে শারীরিক পরিশ্রমের কাজে না জড়ানো ভালো। ছোট বাচ্চা, বয়স্ক লোক, রোদে ভারি কাজ করেন যারা হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তাদের বেশি। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি খুবই বিপদজনক। বাচ্চাদের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি উন্নত হয়নি বলে তাদের হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা বেশি থাকে। বৃদ্ধদেরও তাপ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত পদ্ধতি দুর্বল হয়ে যায়। সেজন্য তারা সহজে হিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ:
মাথা ঝিম ঝিম করা, বমি বমি ভাব, অবসাদ, দুর্বলতা, মাথা ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা সহ বেশ কয়েকটি লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে সতর্ক হওয়া উচিত। এ সময় ছায়া বা ঠাণ্ডা জায়গায় একটু বিশ্রাম নিতে পারেন এবং পানি পান করতে পারেন। সঠিক সময় সঠিক কাজটি করলে এ লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। বেশ কয়েক বার এসব লক্ষণ দেখা গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে দ্বিধা করবেন না।
এছাড়া শ্বাসকষ্ট, দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া, ঘাম না হওয়া, চামড়া অতিরিক্ত লাল হয়ে যাওয়া, অশান্ত বোধ করা এবং খিঁচুনি হওয়া ইত্যাদি।
হিট স্ট্রোক আক্রান্ত হলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে হয়। হিট স্ট্রোকে আক্রান্তদের ছায়া বা ঠাণ্ডা স্থানে নিয়ে আসুন, গায়ের কাপড় হালকা করে দিন। যদি আক্রান্ত লোকটি পানি খাওয়ার মতো অবস্থায় থাকে তাহলে তাকে ঠাণ্ডা পানি বা অন্য কোনো পানীয় পান করতে দিন।
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে:
গরমের সময় দেহকে পানিশূন্যতা হতে না দেয়াই প্রধান প্রতিরোধ উপায়। প্রতিদিন অল্প গরম পানি পান করা। এতে আপনার শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ ঘাম বের হবে এবং দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে। যারা ভারি কাজ করেন তাদের উচিত প্রতি ঘণ্টায় অন্তত দুই থেকে চার গ্লাস পানি পান করা।
দিনের বেলা ব্যায়াম বা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কোনো কাজ করবেন না। আর যদি করতেই হয় তাহলে বিরতি নিন এবং প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল পদার্থ পান করুন। অতিরিক্ত জামা-কাপড় বা ভারি পোশাক পরলে আপনার দেহ তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এতে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। হিট স্ট্রোকের লক্ষন অনুভূত হলে চিকিৎসকের কাছে যান বা অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন। আপনার যদি দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, ঝিমুনি ও বমি বমি ভাব হয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান।
মন্তব্য চালু নেই