গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী: আ.লীগ
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর যে নিধনযজ্ঞ চালিয়েছে তার স্মরণে দিনটিকে জাতীয়ভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সিদ্ধান্ত এবং দিনটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে নেয়া উদ্যোগকে যুগান্তকারী হিসেবে অভিহিত করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের বিষয়ে গত ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে প্রস্তাব উত্থাপনের পর এর ওপর আলোচনা শেষে এ দিনই তা জাতীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের জন্য ১৪৭ বিধিতে প্রস্তাব উত্থাপন করেন জাসদের সাংসদ শিরীন আখতার। তিনি প্রস্তাব করেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যাকে স্মরণ করে দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করা হোক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। ২০ মার্চ সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। তার আগে চলতি অধিবেশনেই বিষয়টি সংসদের নজরে আনেন আওয়ামী লীগের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
এই বছর থেকে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের বিষয়টি জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। দিবস হিসেবে পালনের জন্য এটাই যথেষ্ট।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য পীযুস কান্তি ভট্টাচার্য্য জতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালনে সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাতের অন্ধকারে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নিধনযজ্ঞ চালায়, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন জঘন্য হত্যাকা- আর ঘটেনি। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকার এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এখন আমরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালালে অবশ্যই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করতে পারব। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের মতো ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেলে সেটি হবে বাঙালি জাতির জন্য আরেকটি অর্জন।’
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ছিল কৃষ্ণপক্ষের রাত। ঢাকা নগরীর মানুষ ঘুমিয়ে ছিলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামের অভিযানে অস্ত্র সজ্জিত হয়ে ঢাকায় নিরীহ মানুষ হত্যায় মেতে উঠে। মানুষের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে রাতের বাতাস। মানব ইতিহাসের পাতায় রচিত হয় একটি কালো অধ্যায়। নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত হয় বিশ্ববিবেক।
ভয়াল ও বীভৎস রাত্রির স্মৃতিবাহী ২৫ মার্চ। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এবার দিনটি পালিত হবে জাতীয়ভাবে, গণহত্যা দিবস হিসেবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অর্জনের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস জড়িত। বাংলাদেশের সকল জাতীয় অর্জনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিয়েছে। তাই এবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তিকে নিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘২৫ মার্চ বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী যে গণহত্যা সংঘটিত করেছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম। একাত্তরের পরাজিত শক্তি মুক্তিযুদ্ধকে বারবার বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই অপশক্তিকে দাঁতভাঙা জবাব দিতে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।’
স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরে এবং এতো দেরিতে কেন এই উদ্যোগ? কেন আগে গণত্যা দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হলো না- এ প্রশ্নের জবাবে বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর জিয়াউর রহমান, এরশাদ এবং খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিলেন। তারা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেননি। আমরা আগে দুই বার এবং বর্তমানে ক্ষমতায় আছি। গতবার বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমাদের সামনে ছিল। আমরা এটা সম্পন্ন করেছি। দেরিতে হলেও আমরা ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মন্তব্য চালু নেই