গঠনতন্ত্রে যে পরিবর্তন আনছে বিএনপি

সদ্য অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন আনছে বিএনপি। শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে প্রায় ৩০টি সংশোধনী অনুমোদন করেছেন কাউন্সিলররা। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতেই তারা এসব সংশোধনে অনুমতি দেন। ফলে পরবর্তী কাউন্সেলের আগ পর্যন্ত সংশোধিত এ গঠনতন্ত্র দিয়েই চলবে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম।

জানা গেছে, সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো নেতা এক পদের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় কোনো নেতা কোনো অঙ্গদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক একইসঙ্গে জেলা বা মহানগর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে থাকতে পারবেন না। তবে চেয়ারপারসন বিশেষ বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম অনুমোদন করতে পারবেন।

সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্টকরণের মাধ্যমে বলা হয়েছে- চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে তিনি তার সমুদয় দায়িত্ব পালন করবেন। চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে চেয়ারম্যান হবেন এবং নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ওই পদে বহাল থাকবেন।

নতুন এ গঠনতন্ত্রে চেয়ারপারসনের পাশাপাশি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন একসঙ্গে অনুষ্ঠানের বিধি যুক্ত করা হয়েছে। চেয়ারপারসনের ক্ষমতা বাড়িয়ে বলা হয়েছে, তিনি স্থায়ী কমিটি ভেঙে দিতে এবং পুনর্গঠন করতে পারবেন।

এদিকে সংশোধিত গঠনতন্ত্রে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ে পদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদের পরিধি বাড়িয়ে ৩৫ করা হয়েছে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার বদলে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল আখ্যায়িত, তাদের নিয়োগের এখতিয়ার চেয়ারপারসনের উপর অর্পণ এবং সংখ্যা অনির্ধারিত রাখা হয়েছে।

সেই সঙ্গে তাদের পদমর্যাদা ভাইস চেয়ারম্যানের এবং কাউন্সিলরের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। দেশের নতুন বিভাগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিভাগ ওয়ারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রতিটি বিভাগে দুইজন করে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাড়ানো হয়েছে।

এছাড়া নতুন করে সাতজন সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, চারজন ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক, দুইজন প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক, দুইজন স্বাস্থ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক (চিকিৎসক ও নার্স), অর্থ-জলবায়ু সহ-সম্পাদক, ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক, গণশিক্ষা, বন ও পরিবেশ, তাঁতী বিষয়ক, স্বনির্ভর বিষয়ক, পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক, প্রবাসী বিষয়ক, বিজ্ঞান বিষয়ক, মানবাধিকার বিষয়ক, উপজাতি বিষয়ক সহ-সম্পাদকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে একটি করে। ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক পদ সৃষ্টিসহ শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক, তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞানসহ কয়েকটি পদের নামের পরিবর্তন করা হয়েছে।

সংশোধিত গঠনতন্ত্রে বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি গঠনের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। উপকমিটিগুলোর মধ্যে রয়েছে- অর্থ ও পরিকল্পনা, পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা, নারী ও শিশু, আইন ও বিচার, শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ, যোগাযোগ ও গণপরিবহন, ত্রাণ ও পুনর্বাসন, মুক্তিযুদ্ধ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, উপজাতি বিষয়ক ইত্যাদি।

গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, এসব কমিটিতে বিএনপির রাজনীতি করেন না কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ তাদের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। সকল পর্যায়ে ১০ ভাগ নারীর প্রতিনিধিত্ব বিধিতে যুক্ত করে বলা হয়েছে আগামীতে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। দলের সকল প্রচারপত্র প্রকাশ ও প্রচারে আগে দলের স্থায়ী কমিটির অনুমোদনের বিধি থাকলেও সেটা শিথিল করে কেবল গুরুত্বপূর্ণ প্রচারপত্রের অনুমোদনের কথা যুক্ত করা হয়েছে।

সংশোধিত গঠনতন্ত্রে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে জেলা পর্যায়ে কমিটিতে নেতা ও সদস্যদের মাসিক চাঁদা নির্ধারণ ও সেটা পরিশোধ না করলে সদস্যপদ স্থগিত ও বাতিলের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। জেলা থেকে ইউপি পর্যায়ে কমিটির পদের সংখ্যা নির্ধারণ ও নতুন পদ সৃষ্টির বিধান যুক্ত করা হয়। সেখানে বলা হয় এলাকা ভিত্তিতে কিছু নতুন পদ সৃষ্টি করা হবে। এ পর্যায়ের কমিটিগুলো মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে নতুন কমিটি করবেন। প্রতিটি কমিটিই তাদের অধিনস্ত কমিটির অনুমোদন দিতে পারবে, তবে এ জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমোদন নিশ্চিত থাকতে হবে।

এ পর্যায়ের কমিটিগুলো শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে করেও সদস্যপদ স্থগিত করতে পারবেন, তবে উপজেলা-জেলা পর্যায়ের কোনো নেতা বা সদস্যকে বহিষ্কারে চেয়ারপারসনের অনুমোদন লাগবে।

এছাড়া তৃণমূল পর্যায়ের কমিটির ক্ষেত্রে কিছু শব্দগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কমিটির পরিসর ও চাঁদার বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটি একটি গাইড লাইন দেবে। গঠনতন্ত্রে দলের চেয়ারপারসন কার্যালয়ের অধীনে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, একটি গবেষণা কেন্দ্র এবং একটি মিডিয়া উইং প্রতিষ্ঠা করবেন চেয়ারপারসন।

চেয়ারপারসনের অনুমোদনক্রমে কোনো সংগঠন সহযোগী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত হবে। এ জন্য অঙ্গ ও সহযোগী দলের বিধানে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদনের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির বাকি পদগুলো নির্বাচনের একক ক্ষমতা ও সর্বময় কর্তৃত্ব চেয়ারপারসনের ওপর অর্পন করা হয়েছে।

শনিবার কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতেই এসব সংশোধনী কাউন্সিলরদের সামনে উত্থাপন করার পর সকলের সম্মতিতে তা অনুমোদন করা হয়। সূত্র: জাগো নিউজ।



মন্তব্য চালু নেই