খোলাসা হয়নি ডা. মাহজাবিনের মৃত্যুরহস্য
সাবেক এমপি খান টিপু সুলতানের পুত্রবধূ ডা. শামারুখ মেহজাবিন সুমির মৃত্যুরহস্য এখনো খোলাসা হয়নি। মাহজাবিনকে হত্যা করা হয়েছে নাকি আত্মহত্যা করেছেন এ বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। আত্মহত্যা করে থাকলে তা কেন করলেন এ বিষয়েও তদন্ত করছে পুলিশ। স্বামী সুলতান সাদাবের অভিযোগ অনুসারে মাহজাবিনের সঙ্গে কারো প্রেমের সম্পর্ক ছিল কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
মাহজাবিনের মৃত্যুরহস্য খোলাসা করতে শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেতে অন্তত দুই সপ্তাহ লাগতে পারে। নিহতের বাম হাতের কবজির ওপরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। গলায় কিছু দাগ ছিল। শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। পিঠে কিছু লালচে দাগ ছিল। মেঝেতে পড়ে থাকার কারণে সেটা হতে পারে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খান টিপু সুলতানের ওই বাসার মাহজাবিনের ঘুমানোর কক্ষ থেকে একটি ডায়রি উদ্ধার করা হয়েছে। এতে মাহজাবিন তার পিতা ও এক বান্ধবীর কাছে চিঠি লিখেছেন। পিতার কাছে শ্বশুর বাড়ির নানা কষ্টের বর্ণনা দিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন মাহজাবিন। বারবার পিতার কাছে তার অসিম ভালোবাসা প্রকাশ করে লিখেছেন, পৃথিবীতে তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ বাবা। বাবার ভালবাসায় তিনি বেঁচেছিলেন। কিন্তু এভাবে আর সহ্য হচ্ছে না। বলে বাবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। অন্যদিকে তার বইগুলো বান্ধবীকে নিয়ে যেতে লিখেছেন মাহজাবিন।
তবে ডায়েরির এই লেখাগুলোকে সাজানো বলে দাবি করেছেন নিহতের পিতা নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আত্মহত্যা প্রমাণ করার জন্য এগুলো সাজানো হচ্ছে। আমার মেয়ে যদি আত্মহত্যাই করবে তাহলে আমাকে ঘটনার আগের দিন ফোনে বলতো না যে ‘আব্বু আমাকে নিয়ে যাও।’
নিহতের বাবা নুরুল ইসলামের অভিযোগ, টিপু সুলতান প্রভাবশালী হওয়ায় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাল্টে ফেলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডির ৬ নম্বর সড়কের ১৪ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা মাহজাবিনকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই বাড়িতে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে বসবাস করতেন তিনি। মাহজাবিনের শ্বশুর যশোরের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি খান টিপু সুলতান।
এই ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে মাহজাবিনের শ্বশুর ও শাশুড়ি ও জামাই হুমায়ুন সুলতানকে আসামি করে ধানমণ্ডি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় মাহজাবিনকে শ্বশুর পক্ষের লোকজনের নির্যাতন ও যৌতুক দাবি ও উচ্চ শিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলায় হুমায়ুনকে গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আদালত রোববার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল রাতে যশোরে নিজ বাড়িতে মাহজাবিনের লাশ দাফন করা হয়।
মন্তব্য চালু নেই