খোঁজ মিলল এক রহস্যময় প্রাসাদের, থাকেন ২ রহস্যময় বাসিন্দা

প্রাসাদ পর্যন্ত যাওয়াটাই অসম্ভব। জং ধরা সিংদরজার গায়ে ততোধিক জীর্ণ নোটিশ পড়লেই বুক থেকে এক পরত রক্ত উবে যায়। একটু ঠাহর করে নোটিশটি পড়লে দেখা যায়, তাতে লেখা রয়েছে— ‘প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত, শিকারী কুকুর থেকে সাবধান: অবাঞ্ছিত অনুপ্রবেশকারীদের গুলি করা হবে’। এই নোটিস পড়ার পরে কে আর সাহস দেখাবে দরজা পেরিয়ে রহস্য ভেদ করার।

তবে রহস্য দীর্ঘকাল ধরেই জমজমাট। দিল্লির বুকেই দাঁড়িয়ে রয়েছে রহস্যময় প্রাসাদ মালচা মহল। একে ঘিরে ক্রমেই দানা বেঁধেছে কিংবদন্তি। এমনকী, এই একবিংশ শতকেও সেই কিংবদন্তির জারণ অব্যাহত।

না, এই প্রাসাদের খ্যাতি মোটেই ‘ভূতুড়ে’ হিসেবে নয়। বরং একে ঘিরে পল্লবিত ধ্যানধারণায় তার চেয়ে অনেক বেশি রহস্য দানা বেঁধেছে একে ঘিরে। আপাতদৃষ্টিতে মালচা মহলকে পরিত্যক্ত বাড়ি বলে মনে হলেও, তা সত্য নয়। মালচা মহলে আজও বাস করেন দুই বাসিন্দা। প্রাসাদটির মতোই তাঁরাও কম রহস্যময় নন।

দিল্লির চাণক্যপুরী অঞ্চলের এই প্রাসাদটি ছিল মুঘল বাদশাহদের শিকারগাহ্। আযোধ্যার নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ যখন সিংহাসনচ্যুত হন, তখ এই জঙ্গল-ঘেরা আবাসটি তাঁর নাতনিকে থাকার জন্য দেওয়া হয়। নবাবের যাবতীয় সম্পত্তিই ইংরেজ কোম্পানি বাজেয়াপ্ত করেছিল। তার বিন্ময়ে এই প্রাসাদটিকে ধরিয়ে দেওয়া হয় তাঁর বংশধরদের।

ব্রিটিশদের সঙ্গে মামলা চলাকালীনই নবাবের বংশধররা এই প্রাসাদে চলে আসেন। প্রাসাদটি তখনই প্রায় হানাবাড়ির চেহারা নিয়েছে। জঙ্গলে আকীর্ণ প্রাসাদটি তখন সাপ-খোপের আখড়া। এখানেই আশ্রয় নিয়েছিলেন নবাবের নাতনি বেগম ওয়ালিয়ত মহল। তিনি ১৯৯৩ সালে রহস্যজনক কারণে আত্মহত্যা করেন। রেখে যান তাঁর দুই সন্তান রিয়াজ এবং সাকিনাকে, সেই সঙ্গে থেকে যায় একজোড়া ডোবারম্যান এবং একরাশ রাজকীয় আসবাব।

বেগমের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই কিন্তু তাঁর অন্ত্যেষ্টি ঘটেনি। শোনা যায়, তাঁর সন্তানরা বেশ কিছুদিন তাঁর মৃতদেহ আগলে রেখেছিলেন। পরে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। বেগমের মৃত্যুর পর থেকে মালচা মহলে আনাগোনা বাড়ে চোরের। এখানে গুপ্তধন রয়েছে— এই গুজব ছড়িয়ে যায়।

রাজকুমার ও রাজকুমারী বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। তাঁরা প্রাসাদের জানলা-দরজাও বন্ধ করে দেন। নিজেদের সুরক্ষার জন্য বন্দুকের লাইসেন্স সংগ্রহ করেন। এবং উপরোক্ত নোটিশটি টাঙিয়ে রাখেন। আজ পর্যন্ত রিয়াজ এবং সাকিনা মাত্র দু’টি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেগুলিও খুব দীর্ঘ নয়।

রাজকীয় পরিবারের এই দুই রহস্যময় সন্তান মৃত্যু ছাড়া কারোরই প্রতীক্ষা করেন না। লোকমুখে শোনা যায়, ভাই রিয়াজ চান তিনি আগে মারা যাবেন। আর বোন সাকিনা নাকি তার পরে আত্মহত্যা করবেন। এসব কথার সত্যাসত্য নির্ণয় অবশ্য খুবই দুরূহ।

রাষ্ট্রপতির আবাস রাইসিনা হিলস-এর কাছেই এই প্রাসাদের অবস্থান। চারপাশে বেড়ে উঠছে আধুনিক দিল্লি শহর। কিন্তু এরই মাঝখানে এই রহস্যময় অস্তিত্ব নিয়ে থেকে গিয়েছে মালচা মহল, থেকে গিয়েছেন রিয়াজ আর সাকিনা। আর ক্রমাগত পল্লবিত হয়েছে গুজব, কাহিনি, কিংবদন্তি। -এবেলা।



মন্তব্য চালু নেই