খুলেছে বেরোবি নেই কোনো কোলাহল

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি)দীর্ঘ সাড়ে চার মাস বন্ধ থাকার পর গত রবিবার তালা ভেঙে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন খুলে দিলেও তেমন কোনো কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়নি ।২১ টি বিভাগের ৫-৬ টি বিভাগে সীমিত ক্লাস ব্যাতীত অন্য কোনো বিভাগে তেমন ক্লাস হয়নি ।প্রশাসনিক ভবনেও দেখা গেছে ঢিলেঢালা কর্মতৎপরতা।কোলাহলে মুখরিত ক্যাম্পাস এখনো নিরব।

এ দিকে চলমান সংকট সমাধান না করে গত রবিবার পুলিশ প্রহরায় প্রশাসন উপস্থিত থেকে তালা ভাঙার নিন্দা জানিয়ে সোমবার বিক্ষোভ মিছিল করেছে গণ অবস্থানে অবস্থানকারি শিক্ষক-কর্মকর্তা -কর্মচারিরা।

গত ২ নভেম্বর থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলা আন্দোলনের এক পর্যায়ে উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে আমরন অনশনে যায় আন্দোলনকারিরা। চলমান সংকট সমাধান না করে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে গত রবিবার প্রশাসনের উদ্যোগে তালা ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় সচল করার চেষ্টা করে।কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষক তাঁর অপসারনে অটুট থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে কি না সেটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

অধিকাংশ শিক্ষক ক্লাস না নিলে বিশ্ববিদ্যালয় সচল কিংবা ভর্তি পরীক্ষা হবে কিভাবে এটা নিয়েও জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে।এর আগে প্রভাষক থেকে সহকারি অধ্যাপকে উন্নীত ২৭ জন শিক্ষকের অর্জিত সময় থেকে পদমর্যাদা ও প্রাপ্য সুবিধাদির দাবিতে গত ২৭ অক্টোবর শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।এরপর ১ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁকে বয়কট ঘোষনা করে শিক্ষক সমিতি।এরপরও দাবি আদায়ে সমর্থ না হলে ৯ ও ১১ নভেম্বর একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বের গুরুত্বপূর্ণ ২৭ পদ থেকে ১৪ শিক্ষক তাঁদের পদত্যাগ পত্র জমাদেন।এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ও ৫ ডিসেম্বর ২০১৪-১৫ ইং শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ মুহুর্তে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের অনার্স(সম্মান)১ম বর্ষের ভর্তি গ্রহনের জন্য পগত্যাগপত্র জমা দেওয়া শিক্ষকদের সাথে যথার্থ এবং যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছার জন্য আলোচনা অতীব জরুরী বলে মনে করেন অনেকেই। এ ব্যাপারে রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য সবার সাথে আলোচনা করে চলমান সমস্যা দূর করার আশ্বাস দেন।আন্দোলনকারি শিক্ষকরা ভর্তি পরীক্ষা না নিলে বাকী শিক্ষকদের মাধ্যমে এ কাজ সম্পন্ন করারও কথা বলেন তিনি।

গত ১৮ মার্চ উপাচার্য তাঁর অপসারনে আন্দোলনকারি শিক্ষকদের পদত্যাগপত্র উঠিয়ে নিয়ে ক্লাস পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ জানান।শিক্ষক সমিতি আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময় চান।তবে প্রশাসন দীর্ঘ সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে এনে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের জন্য তালা ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়।

আন্দোলনকারি শিক্ষকদের ৫-৬জনের একটি দল ঢাকায় অবস্থান করছেন । কী কারনে ঢাকায় গেছেন তা পরিস্কার ভাবে জানানো হয়নি।আগামী ২৫ তারিখে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় যোগ দিতে পারেন তাঁরা।এ সভায় উপাচার্যের অপসারণে আন্দোলনকারি শিক্ষক সমিতি তাঁদের পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে নিয়ে স্বপদে ফিরে আসবেন কি না এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সমিতির ফরিদ উল ইসলাম।

চলমান আন্দোলনে এখনো ২০১৪-১৫ইং শিক্ষাবর্ষের ¯স্নাতক(সম্মান) ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা না হওয়ায় আতংক ও দ্বিধাগ্রস্ত ভর্তিচ্ছু ৯০ হাজার ৪০২ জন শিক্ষার্থী।সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক পাতায় অনেক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী দুঃখ, রাগ ও অনুরাগ প্রকাশ করেছে।সেই সাথে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আন্দোলনকারি শিক্ষকদের দ্রুত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দপ্তর থেকে আগামী সপ্তাহে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।পদত্যাগপত্র জমা দানকারি শিক্ষকদের এই সপ্তাহে পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে নেবার জন্য বলা হবে।এতে তাঁরা পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে না নিলে নতুন করে শুন্য পদ পূরণে বিভাগীয় প্রধান সহ অনুষদগুলোন ডীন নিয়োগের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী।

কবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থীর পদস্পর্শে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে সেটা একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেয়া শিক্ষকগণ এবং উপাচার্যের যৌক্তিক ও সুষ্ঠু সমাধানের উপরই নির্ভর করছে।তবে অচিরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসুক,ক্লাস পরীক্ষা নিয়মিত হোক এটাই প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের।



মন্তব্য চালু নেই