খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয়মুখ আনন্দ রাজবংশী
দেশের একমাত্র ছাত্র রাজনীতিমুক্ত সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে খুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা একটা ঐতিহ্য আছে। এখানে ছাত্রদের কোন হানাহানি, কাটাকাটি বা কোন্দলের সংবাদ পাওয়া যায় না। খুব ব্যতিক্রম ছাড়া ঠিক নির্দিষ্ট সময়ে ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশুনা শেষ করে বেরিয়ে যায়। দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবী, আন্দোলন সংগ্রামের ফসল এ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন এ্যাপ্লাইড ও প্রযুক্তিমুখী ডিসিপ্লিনের শিক্ষাকোর্স শুরু করায় এখানকার ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশুনার পর পরই দেশে বিদেশে ভাল জায়গায় চাকুরি পেয়ে যায়।
সবসময় কিছু মানুষ থাকে যারা স্বপ্ন দেখে। আকাশে উড়ার স্বপ্ন মানুষ দেখে বলেই আবিষ্কৃত হয়েছিল উড়োজাহাজ। বিনা তারে কথা শোনার স্বপ্ন দেখেছিল বলে এসেছে রেডিও। স্বপ্ন দেখে অনেকেই কিন্তু বাস্তবায়ন করে কজন? ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষা দিয়ে, তাদের উপহার দিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখে অনেকে, করে দেখায় ক’জন? ছিন্নমূল শিশুদের আন্দন্দ দেখার জন্য ব্যাকুল থাকে অনেকেই, ক’জন পারে আনন্দ দিতে? যারা পারে তাদেরই একজন আনন্দ। পুরো নাম আনন্দ রাজবংশী।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর জন্য দেশের পথ প্রদর্শক। তেমনি একটি হল উন্নয়ন অধ্যায়ন। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট পর্যায়ে এ বিষয়টি থাকলেও খুলনায় আন্ডার গ্রাজুয়েট পর্যায়ে এটি শুরু হয় যা দেশের ভিতরে দ্বিতীয়। অপেক্ষাকৃত নবীন এ ডিসিপ্লিনটি থেকে এখনো কোন ব্যাচ বের হয়নি। এই ডিসিপ্লিনেরই একজন ছাত্র আনন্দ রাজবংশী।
এখানে ছাত্র রাজনীতি না থাকলেও আছে ছাত্রদের জ্ঞান ও সংস্কৃতি বিকশের নানান সংগঠন। এসব সংগঠন থেকে বিভিন্ন দিবস ও ভিন্ন ভিন্ন উপলক্ষ্যে নেয়া হয় নানাবিধ কার্যক্রম। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্র ছাত্রীদের মননশীলতার বিকাশ হয়। আর এসব কার্যক্রমের মধ্যমনি হিসাবে থাকেন আনন্দ। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হওয়াতে সিনিয়রিটির কারনে তার এই বাড়তি সুবিধাটা প্রাপ্য হয় এমনটি ভাবলে ভুল হবে। এটা তার অর্জন। ক্যাম্পাসের একাধিক ছাত্র ছাত্রীর কাছ থেকে তেমনটাই জানা গেল আনন্দ সম্পর্কে।
মাগুরার ছেলে আনন্দের মূল চিন্তাধারা দেশের সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসা। এই পরিবর্তন নিয়ে আসতে তিনি তার সাধ্যমত তার গন্ডির ভিতরে থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জিওগ্রাফি স্কুল অফ বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলের প্রধান। দেশটাকে পরিষ্কার করি সংগঠনেরও খুলনা অঞ্চলের প্রধান তিনি। এই সংগঠনগুলোর হয়ে তিনি তার সমমনা বন্ধুদের নিয়ে খুলনা শহর পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছেন। মানুষকে সচেতন করতে নিয়েছেন নানাবিধ উদ্যোগ। ছুটে বেড়ান ঢাকা, রংপুর, সিলেট। নিজের টাকা খরচ করে দেশের পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন, বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে সচেতন করেন যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে ময়লা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে।
ঈদ, পূজা, পার্বনে তিনি একাই নতুন জামা পরেন না। ক্যাম্পাদের ছিন্নমূল শিশু, যারা বিভিন্ন ক্যান্টিন দোকানে কাজ করে তাদের গায়ে যতক্ষন নতুন জামা না উঠে তিনি নিজে নতুন জামা পরেন না। তাদের নতুন জামা দেয়ার জন্য তিনি সাহায্যের হাত বাড়ান সিনিয়র ভাইদের কাছে, সমাজের সামর্থ্যবানদের কাছে। কেউ তার হাতে কিছু তুলে দেন, কেউবা করেন নিরাশ। তবে তিনি বলেন, শত কষ্টের মধ্যেও সেই শিশুদের মুখে হাসি দেখলে তার সব কষ্ট নিমিষেই দূর হয়ে যায়। শিশুদের নির্মল হাসিই তার কাছে প্রকৃত আনন্দ।
তার সহপাঠীরা জানালেন, আনন্দ অনেক সময় এ সমস্ত সামাজিক কাজ করতে গিয়ে নিজের পড়াশুনা ঠিকমত করতে পারেন না। তবে তারা তাকে সহযোগীতা করেন। ক্যাম্পাসের সবার কাছে তিনি অত্যন্ত প্রিয়। তার ডাকে সকল কাজ ফেলে ছুটে আসে তার সিনিয়র বড় ভাই বোন থেকে শুরু করে সহপাঠী ও জুনিয়র ছাত্র ছাত্রীরা। সবার কাছে তিনি প্রিয় অনন্দ দাদা।
মন্তব্য চালু নেই