‘খুনিদের বিদেশে পাঠিয়ে সাঁড়াশি অভিযান’

জঙ্গি দমনে সাঁড়াশি অভিযানের নামে দেশব্যাপী গণগ্রেপ্তার ও গণহারে চাঁদাবাজি চলছে অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘ঘটনা ঘটার পর হাসিনা তাদের বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে এখন সাঁড়াশি অভিযানের নামে বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও নিরীহ সাধারণ মানুষকে ধরছে। এরপর তাদের নামে মিথ্য মামলা দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৮ হাজারের অধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির ২ হাজার ২০০ নেতাকর্মীকে ধরা হয়েছে।’

পবিত্র মাহে রমজানের অষ্টম দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটির রাজদর্শন হলে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব) আয়োজিত ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন খালেদা। এতে সভাপতিত্ব করেন অ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রকৌশলী আ ন হ আখতার হোসেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘কাগজ খুললেই আজ শুধু মৃত্যু, মৃত্যু আর মৃত্যুর খবর। অথচ হাসিনা বলেছে, সে সবকিছু জানে। সে যদি সবকিছুই জানে, তাহলে সে তাদের (খুনি) ধরছে না কেন?’

ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘জঙ্গি দমনের নামে এই সাঁড়াশি অভিযানের কারণে পবিত্র রমজান মাসেও মানুষ ঠিকমত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করতে পারছে না। তারা কষ্টের মধ্যে রয়েছে, আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’

বিএনপি প্রধান বলেন, ‘সাঁড়াশি অভিযানের নামে একদিকে চলছে গণহারে গ্রেপ্তার আর অন্যদিকে চলছে গণহারে চাঁদাবাজি। গ্রেপ্তারের পর টাকা-পয়সা দিয়ে লেনদেন করে তাদের ছাড়াতে হয়। এর মধ্য দিয়ে সমগ্র দেশটাকে কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। অন্যদিকে, অফিস-আদালতসহ সারা দেশ দুর্নীতিতে ছেঁয়ে গেছে। এভাবে একটি রাষ্ট্র চলতে পারে না। এ দুর্নীতিবাজ, খুনি ও অত্যাচারী সরকারের হাত থেকে দেশবাসী মুক্তি চায়।’

ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাসদের প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আসল খুনি তো তাদের দলের মধ্যেই আছে। তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা আগে থেকেই গুম-খুন করে এসেছে। তখন বিএনপির জন্মও হয়নি। এরাই তখন আওয়ামী লীগের লোকজনদের গুম ও হত্যা করত, তাদের নেতা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) সম্পর্কে খারাপ ভাষায় বক্তব্য দিত, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করত। অথচ আজকে হাসিনা সেসব কিছু ভুলে গিয়ে নিজ দলের নেতাদের মূল্যায়ন না করে এইসব অত্যাচারী-খুনিদের মূল্যায়ন করছে। সে কারণে দেশের এই অবস্থা।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আসুন, এই পবিত্র রমজান মাসে আমরা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ যেন এই জালেমদের যারা গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার করে প্রকৃত শাস্তি দেন।’

খালেদা জিয়া ইফতারের পূর্বে টেবিল ঘুরে ঘুরে আগত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নেন। এর আগে, সন্ধ্যা ৬টা ৩৮মিনিটে ইফতার মাহফিলে এসে উপস্থিত হন খালেদা জিয়া।

ইফতারের মূল মঞ্চে খালেদা জিয়ার সঙ্গে একই টেবিলে বসে ইফতার করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, ঢাবির শিক্ষক অধ্যাপক সদরুল আমিন প্রমুখ।

ইফতার মাহফিলে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, ২০ দলীয় জোট শরিক এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।

এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার, সাবেক ফুটবলার আমিনুল হক, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু প্রমুখ।

ইফতারে প্রকৌশলীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রকৌশলী আব্দুর রউফ, খোরশেদ আলম রাজু, খালেদ চৌধুরী পাইন, মাহমুদ হাসান, কাইয়ুম, মহিউদ্দিন সেলিম প্রমুখ।

ইফতারের আগে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই