খালেদা ফিরলেই নতুন বিএনপি!

বদলে যাচ্ছে বিএনপি। অতীতে কয়েকবার দল গোছানোর চেষ্টা ব্যর্থ হলেও এবার দলটিতে বড় পরিবর্তনই আসছে বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠজনরা নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, লন্ডন থেকে খালেদা জিয়া বড় চমক নিয়েই দেশে ফিরছেন। এর পরই দলের স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদ ও নির্বাহী কমিটি ঢেলে সাজানো হবে। ভারমুক্ত হচ্ছে মহাসচিবের পদটি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হিসেবেই দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। দলে যোগ্য, নিষ্ঠাবান নেতাদের গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। একইভাবে উদ্যমী তরুণদের সামনে নিয়ে আসার বিষয়টিও প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। প্রবীণদের মূল দায়িত্বে না রেখে তাদের অভিজ্ঞতাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা ভাবা হচ্ছে।

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠার পর ৩৭ বছরের ইতিহাসে এমন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আর পড়েনি দলটি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় থেকেই বিএনপির বিপর্যয় নেমে আসে। একদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর মনোভাব, অন্যদিকে নিজেদের পাহাড়সম ব্যর্থতায় দলের মেরুদ- ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, সাংগঠনিক দুর্বলতা থাকলেও দলের জনপ্রিয়তা এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির প্রয়োজনীয়তা প্রতিটি মানুষ উপলব্ধি করছে। মানুষের এই আকাক্সক্ষার প্রতি সম্মান জানিয়ে দেশের স্বার্থেই বিএনপির পুনর্গঠনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন খালেদা জিয়া।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে হাজারো মামলা। এ রকম প্রতিকূল পরিবেশে পুনর্গঠনের কর্মযজ্ঞ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কম কথা নয়। আমরা সেই কাজটিই করছি। আশা করি চলতি বছরের মধ্যেই এ কাজ শেষ করতে পারব।’

জাতীয় কাউন্সিল কবে?

পুনর্গঠন কর্মকা-ের সমন্বয়কারী দলের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূল না থাকলে বড় আকারে কাউন্সিল করা যাবে না। তবে ঘরোয়াভাবে হলেও আয়োজন করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘সারা দেশে যে পুনর্গঠন কাজ চলছে, তা কিন্তু নিরুপদ্রবভাবে হচ্ছে না। তৃণমূল থেকে একেবারে কেন্দ্র পর্যন্ত আমাদের সকল নেতা-কর্মীর নামে মামলা রয়েছে। সরকার, সরকারি দলের ক্যাডারদের বাধাবিঘেœর মধ্যে আমাদের এসব কাজ করতে হচ্ছে।’

দলের সহদপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন জানান, ‘চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশে দলের পুনর্গঠন কাজ শেষ করার আশা করি। এরপর ডিসেম্বরের শেষ অথবা আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে জাতীয় কাউন্সিল করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।’ ২০০৯ সালে দলের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল হয়। এরপর জাতীয় নির্বাহী কমিটির দুটি সভা করা হলেও জাতীয় কাউন্সিল হয়নি। ২০১২ সালে একবার কাউন্সিল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। হলও বুকিং দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানের কারণে সব রেকর্ডপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কাউন্সিল স্থগিত করা হয়।

বড় পরিবর্তন আসছে স্থায়ী কমিটিতে

দলের পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে পরিবর্তন আনা হবে। এ ক্ষেত্রে অন্তত ৯ জন সদস্য এই কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন। ড. আর এ গণি, এম শামসুল ইসলাম বার্ধক্যজনিত কারণে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আসতে পারেন না। বেগম সারওয়ারী রহমানকেও স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দেখা যায় না। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় হয়ে গেছে। তাদের স্থলে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। তবে নতুন এই মুখ কারা তাদের ব্যাপারে এখনই নিশ্চিত করে দলের দায়িত্বশীল কেউ বলতে নারাজ।

মহাসচিব পদটি ভারমুক্ত হতে পারে

এবারে দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে বিএনপির মহাসচিব পদটি ভারমুক্ত হতে যাচ্ছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে কিংবা তা করা না গেলে চেয়ারপারসনের গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাবলে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হতে যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। লন্ডনে অবস্থানরত দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে এ মতের সমর্থন পাওয়া গেছে। মির্জা ফখরুলের একটি পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি রয়েছে বলেই মনে করেন বিএনপি নেতারা।

আধুনিক করা হচ্ছে চেয়ারপারসনের অফিস

শিগগিরই প্রযুক্তিনির্ভর কর্পোরেট ধাঁচে সাজানো হচ্ছে গুলশানে অবস্থিত বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়। কার্যালয়টিকে অন্তত সাত ভাগে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ নিরাপত্তা ও প্রশাসন, মিডিয়া, সিভিল সোসাইটি, জনসংযোগ, আন্তর্জাতিক, তথ্য ও গবেষণা এবং আইটি বিভাগ। প্রত্যেক বিভাগে একজন করে পরিচালক থাকবেন। কিছু বিভাগ মূল ভবনের বাইরে রাখা হতে পারে। প্রয়োজনে চেয়ারপারসনের কার্যালয়টিও অভিজাত এলাকার মধ্যে রেখেই অন্যত্র স্থানান্তর করা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আগামীতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়কে আধুনিক মানের কার্যালয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দক্ষ ও যোগ্য লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে।

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামী মাসের প্রথম দিকে দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা। খালেদা জিয়া গত ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডন যান। চোখে অস্ত্রোপচার এবং হাঁটুর চিকিৎসার প্রয়োজন হয়ে পড়ায় দেশে ফেরা তার পিছিয়ে যায়। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘আমি নিশ্চিত নই, তবে আগামী মাসের প্রথম দিকে তিনি দেশে ফিরতে পারেন।’ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই