খালেদা জিয়ার দুই লিভ টু আপিল খারিজ
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুনীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ও অভিযোগ আমলে নেয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
তবে একই আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুনীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের লিভ টু আপিলের শুনানি চলছে।
পর পর চারাদিন শুনানি শেষে আজ আদেশ দেয়ার জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন আপিল বিভাগ।
আদালতে বেগম খালেদয়ার পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি এজে মোহাম্মদ আলী, সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।
দুদকের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় গত ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন বিচারক বাসুদেব রায়ের আদালত। এ অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। হাইকোর্ট এ আবেদন খারিজ করে দিলে তিনি আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা করা হয়।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।
এর মধ্যে তারেক রহমান দেশের বাইরে আছেন। মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। তবে শরফুদ্দিন আহমেদ আদালতে হাজির না থাকায় ১৯ মার্চ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। অপর দুই আসামি ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ মামলাটি তদন্ত করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ অপর চারজনকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ও অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা
সময়ের আবেদন করবেন খালেদা জিয়া
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ আজ সোমবার। তবে এদিন বেগম খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হবেন না। তার পক্ষে সময়ের আবেদন করবেন আইনজীবী।
এর আগে গত ৯ নভেম্বর খালেদা জিয়ার পক্ষে করা এক সময় আবেদনের শুনানি শেষে বিচারক বাসুদেব রায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৪ নভেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেন।
ওইদিন হাজিরা দিতে আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন খালেদা জিয়া।
এর আগে গত ১৩ অক্টোবর নির্ধারিত দিন অর্থাৎ গত ২৬ অক্টোবর অবশ্যই খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করার ব্যবস্থা নিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। কিন্তু হরতালে নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালতে হাজির হতে পারছেন না মর্মে একটি দরখাস্ত দাখিল করেন খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লা মিয়া।
সোমবারও সময়ের আবেদন করা হবে বলে জানান তিনি।
গত ১৩ অক্টোবর দুই মামলার মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা ছিল। মামলাটির প্রথম সাক্ষী বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদের অসমাপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল ওইদিন। গত ২২ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দেয়া শুরু করেন তিনি। হারুন অর রশিদ অপর মামলা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলারও বাদী এবং সাক্ষী।
ওইদিন সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবিসহ মামলা দু’টিতে মোট পাঁচটি আবেদন করেন আসামিপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন খালেদার পক্ষে শুনানি করেন।
নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় খালেদা জিয়ার দু’টি আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। তবে মামলা দু’টির বিষয়ে আপিল বিভাগে আপিল বিচারাধীন উল্লেখ করে সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবির আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত। এছাড়া বিচারিক আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে হাইকোর্টে আপিলের আবেদনটি মঞ্জুর করে সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করেন বিচারক। তিনি ওইদিন অবশ্যই খালেদা জিয়াকে হাজির করার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন আসামিপক্ষের আইনজীবীদের।
খালেদা ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অপর পাঁচ আসামি হচ্ছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল এবং শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে রয়েছেন।
মামলার অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতে হাজিরা দিয়ে আসছেন।
খালেদা ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অন্য ৩ আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর সাবেক একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এর মধ্যে জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।
মন্তব্য চালু নেই