খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার ঝুলে থাকলো এক মাস!

দুর্নীতির দু’টি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রেখেছে আদালত৷ ওদিকে, বেগম জিয়া নিজেই গ্রেপ্তার হতে চাইছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷

গত কয়েকদিন ধরে দেশের সর্বত্র প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল একটাই – খালেদা জিয়া কি গ্রেপ্তার হচ্ছেন? নাকি তিনি নিজেই আদালতে হাজিরা দেবেন? আসলে কী হতে যাচ্ছে? এর ফলে মামলা দু’টির শুনানির দিন, অর্থাৎ বুধবারকে ঘিরে এক ধরনের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল৷ সারাদেশের মানুষ উদ্বেগ-উত্‍কণ্ঠা নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন আদালতের দিকে৷

দেশের মানুষের সঙ্গে উদ্বিগ্ন ছিলেন কূটনীতিকরাও৷ এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস ৪ঠা মার্চের (বুধবার) কার্যক্রম সীমিত করে৷ স্থগিত করে জরুরি কাজ ছাড়া সবকিছু৷ এমনকি ভিসা প্রার্থীদের সাক্ষাৎ-ও বাতিল করা হয়৷ তবে এ দিন কিছুই হয়নি৷ অন্যদিনের মতো স্বাভাবিকভাবেই পার হয়েছে দিনটি৷ আদালত আগামী ৫ই এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করেছে৷ এছাড়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল থাকায়, ঐ দিন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হবে কিনা – এটা দেখার জন্যও অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় নেই৷

পুরনো ঢাকার বকশি বাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতের তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন৷ একই সঙ্গে ৪ঠা মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করেন তিনি৷ এরপরই আলোচনা শুরু হয় খালেদা জিয়া কি গ্রেপ্তার হচ্ছেন? কিন্তু বুধবার পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগই নেয়নি পুলিশ৷ এর কারণ হিসেবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘‘আদালতের দেয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় না পৌঁছানোর কারণে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি৷”

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এক সপ্তাহেও থানায় কেন গেল না? বকশি বাজার থেকে গুলশান থানা কতদূর? এমন প্রশ্নের জবাবে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওয়ারেন্ট কেন থানায় যায়নি, এটা আমি বলতে পারব না৷ কারণ এটা থানায় পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আমার নয়৷ পুলিশ কেন ওয়ারেন্ট তামিল করছে না – সেটাও আমি বলতে পারব না৷ কারণ এগুলো আমার বলার বিষয় নয়৷”

তাহলে কে বলতে পারবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আদালত বলতে পারবে৷ তবে আগামী শুনানির দিন (৫ মার্চ) এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে৷ কারণ খালেদা জিয়াকে ঐ দিনের মধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে অথবা তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করতে হবে৷”

কিন্তু পরোয়ানা না পেলে পুলিশ কিভাবে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করবে? আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘‘অপেক্ষা করেন, নিশ্চয়ই উত্তর পাবেন৷”

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাতজন সাক্ষী বুধবার আদালতে উপস্থিত থাকলেও তাঁদের জবানবন্দি নেয়া সম্ভব হয়নি৷ বরং বিচারক সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৫ই এপ্রিল দিন ঠিক করে আদালত মুলতবি করে দেন৷ আদেশের পর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় খালেদা জিয়া আইনের দৃষ্টিতে পলাতক৷ যেহেতু তিনি আত্মসমর্পণ করেননি, সেহেতু তাঁর কোনো আবেদন শোনার সুযোগ নেই৷ তারপরও তাঁর পক্ষে সিনিয়র আইনজীবীরা এসেছেন৷ এ কারণে আদালত তাঁদের বক্তব্য শুনেছে৷ সবগুলো আবেদন নথিভুক্ত রেখেছে, তবে গ্রহণ করেননি৷

গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ স্থগিতে বিচারিক আদালতের পাশাপাশি হাইকোর্টেও একটি আবেদন করেছেন খালেদা জিয়া৷ বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) ঐ আবেদনের সঙ্গে দুর্নীতির দু’টি মামলায় খালেদার বিচারক পরিবর্তনের আবেদনের শুনানি হবে বলে তাঁর আইনজীবীরা জানিয়েছেন৷

এদিকে, আত্মসমর্পণ না করলে খালেদা গ্রেপ্তার হচ্ছেন – এমন খবরে বুধবার সকালেই খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে জড়ো হন সংবাদকর্মীরা৷ খালেদার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল৷ আইনজীবীরা বিষয়টি দেখছেন৷ তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী খালেদা জিয়া কী করবেন, তা ঠিক হবে৷”

খালেদার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী৷ খালেদার অনুপস্থিতির কারণ হিসাবে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ আদালতে আসতে পারছেন না৷ এ আদালতের বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি৷ বলেন, ‘‘মিডিয়া ট্রায়েল করা হচ্ছে, যাতে বিচারকের আদেশ ‘রিফ্লেক্ট’ হচ্ছে৷”

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরেও খালেদার আদালতে না যাওয়ার কথা তুলে বিচারক এ সময় দুদক-এর আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘উনি আদালতে আসেননি৷ উনার আইনজীবীদের কি এ সব ‘পিটিশন’ করার এখতিয়ার আছে?” জবাবে দুদক-এর আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া আদালতে না আসায় তাদের এ সব আবেদন করার কোনো এখতিয়ার নেই৷”

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৮ই আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ৷ তেজগাঁও থানার এই মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাত্‍ করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে৷ ২০১২ সালের ১৬ই জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ-পত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা৷ জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি দায়ের করে৷ এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় ঐ মামলায়৷ডিডাব্লিউ



মন্তব্য চালু নেই