খালেদার দূ:খ কথন!
দেখুন খালেদা জিয়ার একটি দূর্লভ ভিডিও
‘তার দুঃখ নিয়ে কেউ ভাবে কিনা, তা জানার সুযোগ নেই। কারণ যখন ক্ষমতায় থাকেন তখন তার চারপাশে মোসাহেবদের দৌরাত্ম্য, আর ক্ষমতার বাইরে থাকলে তো আপনও পর হয়ে যায়’- বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুঃখযাপনের গল্প এভাবেই বলছিলেন দলে তার কাছের এক নেতা।
এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে তখন গুলশানে নিজ কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ’ রয়েছেন খালেদা জিয়া।
আর ওই নেতার সঙ্গে কথা হয় ‘অবরুদ্ধ’ করারও দিন কয়েক আগে। তিনি বলছিলেন, ‘খালেদা জিয়ার কষ্ট নিয়ে কে ভাবেন- তা এখন জানা যাবে না। কারণ ক্ষমতা থেকে তিনি এখন অনেক দূরে। তবে আমাদের নেত্রী কোটি মানুষের আলোচনা ও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তার নিজের কিছু গুণের কারণেই। তার কি হলো, কেমন আছেন তা নিয়ে সারাক্ষণই আপডেটেড থাকতে চায় অনেক মানুষ।’
‘কারও কারও জানার আগ্রহ তাকে পছন্দ করেন বলে, আর কারও আগ্রহ নেহায়েতই অপছন্দ থেকে, সমালোচনার ফাঁক-ফোকরের খোঁজে,’ সরল উচ্চারণ ওই বিএনপি নেতার।
বাংলাদেশের ইতিহাসে খালেদা জিয়া নানাভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকার মতো অবস্থানেই রয়েছেন। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী-প্রধানমন্ত্রী তিনি। আর বাংলাদেশে প্রথম। এর আগে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী হিসেবে ‘ফার্স্ট লেডি’র জীবনও যাপন করেছেন খালেদা, বলেন এই নেতা।
একটু পেছনের স্মৃতিও টানা যায়। নয়াপল্টনে কোনও এক হরতালের (২০১২ সালে) দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। সেদিন খালেদা জিয়ার কিছু গুণের উল্লেখ করছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘নেতৃত্বের গুণ খালেদা জিয়ার মধ্যে প্রবল। তিনি স্নেহময়ী, কিন্তু অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন না। অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করে চলার মানুষ তিনি নন।’
‘দেশের রাজনীতির অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত মানুষ খালেদা। তার বয়স হয়েছে, শারীরিক অসুস্থতাও রয়েছে। কিন্তু সেসব অগ্রাহ্য করেও দলের নেতাকর্মীদের মুখের দিকে তাকিয়ে মনের জোর ধরে রাখেন তিনি’ এ কথাটি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের। তিনিও বলেছিলেন কোনও এক আলাপচারিতায়।
এতো গেলো দলের নেতাদের কথা। জোটের নেতারাও তার ব্যাপারে ইতিবাচক মত পোষণ করেন। খালেদা জিয়া সম্পর্কে ২০ দলীয় জোটের শরিক একটি দলের শীর্ষ নেতার বক্তব্য এমনটাই, ‘খালেদা জিয়াকে নিয়ে জল্পনা-কল্পনা অনেক। তার লাইফস্টাইল থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়ে আলোচনা চলে। তাকে অনেকে অহঙ্কারি ভাবেন। কিন্তু আসলে তিনি তেমন নন।’
বর্ণিল জীবনের অধিকারী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদল নেতা এখন আর সংসদে নেই। তবুও ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে খালেদা জিয়া আলোচনার তুঙ্গে রয়েছেন। ‘অবরুদ্ধ’ রয়েছেন তিনি। পুলিশের ছোঁড়া পিপার স্প্রেতে ‘বেশ অসুস্থ’ বলেও জানাচ্ছেন নেতারা। চিকিৎসাও নিতে হয়েছে তাকে।
বিএনপির দুর্দিন যেন কেবলই বাড়ছে। নয়াপল্টনে নিজ কার্যালয়ে যাওয়াটিও একটি বড় উদ্যোগ হিসেবে গণ্য করছিলেন তারা। অবশ্য কিছু করারও হয়তো নেই। খালেদা জিয়ার সাঁঝ-প্রভাত দিনে দিনে যেন অনেকখানিই বদলে গেছে।
তার জীবনযাপন অনেকটাই গুলশানকেন্দ্রীক। বর্তমান সময়গুলো বাসা থেকে অফিস, আর অফিস থেকে বাসা করেই কাটছিল। চোখে পড়ার মতো বা আন্দোলিত হওয়ার মতো কিছু করতে পারছিলেন না জোট নিয়ে।
কিছুদিন আগেই এ প্রসঙ্গে আলাপে ‘খালেদা জিয়ার মনোবল ভেঙ্গে গেছে কিনা’ জানতে চাইলে তীব্র প্রতিবাদ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান।
তিনি বলছিলেন, ‘খালেদা জিয়ার মনোবল ভাঙার প্রশ্নই আসে না। তিনি দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেন। দেশের কল্যাণের জন্য তিনি আমৃত্যু লড়াই করবেন। খালেদা জিয়া জানেন, দেশের মানুষ তাকেই চায়। খালেদা জিয়া ক্ষমতা লিপ্সু নন। এজন্যই দেশের মানুষ তাকে বিশ্বাস করে।’
‘অবরুদ্ধ’ হয়ে অবরোধ ডেকে কী পেলেন খালেদা- সেই হিসেবও কষছেন রাজনীতিবোদ্ধারা। অনেকেই হয়তো বলছেন, খালেদার ঝুঁড়ি এবারও শূন্য!
সরকারের কঠোর অবস্থানের বিপরীতে খালেদার ‘নাজুক অবস্থা’ নিয়ে আলোচনা চলে টক-শোগুলোতে।
জীবনের এই প্রান্তে কখনো আসতে হবে- নিশ্চয়ই ভাবেন নি তিনি।
অবশ্য ভাবনার বাইরে অনেক কিছু ইতোমধ্যে দেখেছেন খালেদা। স্বামী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যু, ওয়ান-ইলেভেনে কারাভোগ, ছেলেদের অসুস্থতা ও বিদেশ যাপন, ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস, মা-বোন ও ভাই-এর মৃত্যুর কষ্ট- অনেক সয়েছেন তিনি।
সেনা কর্মকর্তা স্বামীর সঙ্গে অভিজাত জীবনযাপনের পর হঠাৎ তার মৃত্যুতে দিশেহারা ছিলেন খালেদা। ইউটিউবে পাওয়া যায় তার সেই সময়ের একটি সাক্ষাৎকার।
সেই ‘গৃহিনী খালেদা’ ধীরে ধীরে ‘রাজনীতিক খালেদা’ হয়ে ওঠেন। মানুষের ভালোবাসাও অনেক পেয়েছেন তিনি। জিয়ার ভক্তরা যেমন পাশে দাঁড়িয়েছেন বেগম জিয়ার, নিজেও কুড়িয়েছেন অনেকের ভালোবাসা।
ওয়ান-ইলেভেনে জেল খাটলেও সান্ত্বনার সুযোগ ছিল তার। কারণ সবচে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনাকে প্রায় একই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছিল সেই সময়। এরপর দুই নেত্রীর পরিণতি এখন দু’রকম। কারাযাপন শেষে খালেদার সুদিন আর আসেনি।
দীর্ঘদিন ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া খালেদা জিয়া এখন ‘কর্মসূচি পালনের স্বাধীনতা’ও ‘পাচ্ছেন না’।
এদিকে সবচে বড় প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনবরত খালেদার কষ্টের আগুনে ঘি ঢালছেন। তারা বলছেন, খালেদা ‘একূল-ওকূল’ দুকূলই হারিয়েছেন।
সব কিছু শুনতে হচ্ছে খালেদাকে। নানাজনের অত কথার জবাব তার এক মুখে দেওয়ার ফুরসত না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
নেতারাও কেউ জেলে, কেউ পালিয়ে গ্রেপ্তার আতঙ্কে। মাঝে মাঝে সভা বা সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়ে দলের কোন উপকার তারা করছেন- সেই সমালোচনা কম নেই।
এসব পরিস্থিতিতেও খালেদা আন্দোলনের কথা বলছেন। সেই সঙ্গে দাবি করছেন, ক্ষমতার লিপ্সা থেকে কিছুই করছেন না। তার দলের নেতাদেরও দাবি, খালেদা গদিতে বসতে নয়, বরং দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ থেকে সব করছেন।
কেউ কেউ সেটি মানছেন, কেউ আবার দুরভিসন্ধি খুঁজছেন। খালেদার সমালোচকদের মতে, ‘নিজের দুই ছেলেকে (বড়ছেলে- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ছোটছেলে- আরাফাত রহমান কোকো) ক্ষমতা ও সম্পদের জীবন দিতেই তার এই প্রচেষ্টা। দেশ নয়, জনগণ নয়, দল নয়- খালেদার কাছে সবচে বড় তার ছেলেদের স্বার্থ।’
নানাজনের নানা মন্তব্য এভাবেই চলছে। এর মাঝে শেষ খবর হল- খালেদা ‘অসুস্থ’ ও ‘অবরুদ্ধ’ গুলশান কার্যালয়ে, তারেকের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত, মির্জা ফখরুল কারাগারে, অন্য নেতারাও লোকচক্ষুর আড়ালে।
এছাড়া যে খবরটি যেকোনো মুহুর্তেই আসতে পারে, তা হল- চলতি অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হবেন খালেদা! কারণ ইজতেমার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ‘ঝামেলা’ করার মতো অতটা বোকামি হয়তো করবেন না অভিজ্ঞ এ রাজনীতিক।
[ প্রতিবেদন সূত্রঃ বাংলানিউজ ]
মন্তব্য চালু নেই