খাদ্য কর্মকর্তাকে টাকা না দিলে ধানে চিটা! ৫ হাজার দিলেই সব সমস্যার সমাধান…
কল্যান কুমার চন্দ,বরিশাল.টাকা না দিলে ধানে চিটা, আদ্রতা কম আরও কতোকি সমস্যা। আর টন প্রতি ধানে খাদ্য নিয়ন্ত্রককে ৫ হাজার টাকা দিলেই সব সমস্যার সমাধান! চিটাওয়ালা, আদ্রতা বিহীন ওই খারাপ ধানও তখন সব ভাল হয়ে যায়। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন তৃণমূল পর্যায়ের চাষীরা। কৃষকদের কাছ থেকে সরকারের ধান ক্রয়ে এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সরকারী গোডাউনে ধান বিক্রি করতে আসা নসিমন, টমটম আর ভ্যান ভর্তি করে গোডাউনের রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কৃষকেরা। তারা (কৃষক) অভিযোগ করেন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাহাদাত হোসেন সকলের ধান পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, ধানে আদ্রতা কম থাকায় কোন চাষীর ধান নেয়া যাবে না। তবুও হাল ছাড়েননি চাষীরা।
চাষীদের মধ্য থেকে এগিয়ে গেলেন রতœপুর ইউনিয়নে সাবেক ইউপি সদস্য অজিত শিকারী। তিনি (অজিত) খাদ্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলে বের করলেন গোডাউনে ধান বিক্রির বিশেষ উপায়। শুক্রবার সকালে অজিত শিকারী সাংবাদিকদের জানান, খাদ্য কর্মকর্তার দাবিকৃত টন প্রতি ৫ হাজার টাকা দিতে রাজি হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালের ঘোষিত তিনিসহ রতœপুরের চাষী নাসির উদ্দিন, শাহজাহান, সুকদেব বাড়ৈ, বারপাইকা গ্রামের মাইনুল, ননী গোপালের মত অনেক চাষীদের খারাপ ধানগুলো মুহুর্তের মধ্যে ভাল ধান হিসেবে ওইদিন বিকেলে জমা হয়ে গেছে গোডাউনে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, যারা এ অভিযোগ করছেন তারা সিন্ডিকেট হিসেবে গোডাউনে ধান দিতে ব্যর্থ হয়েই এমন কথা বলছেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে জায়গা না থাকার কারণে ধান ক্রয় বন্ধ রয়েছে। ঈদের পর আবার শুরু করার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬৫০ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সূত্রমতে, সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের ঘোষণার পর গত ৫ মে’র পরিবর্তে ১৭ মে থেকে ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু করা হয়। সরকারি নীতিমালায় প্রতিকেজি ধান ২৩ টাকা দরে প্রতি মন ধান ৯২০ টাকায় ক্রয় করছে সরকার। উপজেলায় ১ হাজার ৬৫৮ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি দেবী চন্দ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে চাষী নামধারী দালালদের মাধ্যমে ধান ক্রয় শুরু হলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর মধ্যস্বত্বভোগী, ফরিয়া, দালালদের বিলুপ্ত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উদ্যোগে ধান ক্রয় মনিটরিংয়ের জন্য উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুশান্ত বালা, বিভাগীয় বেবী হোমের উপ-তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ, সমবায় কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান, একাডেমীক সুপারভাইজার প্রাণ কুমার ঘটক ও সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার নন্দীকে নিয়ে ৫ সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে সরাসরি চাষীদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের নির্দেশনা থাকলেও মাঝ পথে বস্তার অভাব দেখিয়ে ধান ক্রয় বন্ধ রাখেন সংশ্লিষ্টরা। ইউএনও’র তাৎক্ষনিক হস্তক্ষেপে পুনরায় ধান ক্রয় শুরু হলেও এর কিছুদিন পর গোডাউনে জায়গার অভাব থাকায় আবারও ধান ক্রয় বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। নাম না প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মনিটরিং কর্মকর্তারা জানান, প্রথম ধান কেনা বন্ধের পর পুনরায় ধান ক্রয়ের কথা তারা জানেন না।
মন্তব্য চালু নেই