কড়াকড়ি নিরাপত্তায় যেভাবে ফিরছেন খালেদা

কঠোর নিরাপত্তা আর বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়ে শনিবার সন্ধ্যায় দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর ভিড় ঠেলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি বাসায় পৌঁছেন। ফেরার পথে তার গাড়িবহরের চারিদিকে ঘিরে ছিলেন নেতাকর্মীরা।

এর আগে ৫টা ১০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন বিএনপি নেত্রী।

বিএনপি নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে দুপুর থেকেই নেতাকর্মীরা বিমানবন্দর এলাকায় আসতে শুরু করেন। তবে খালেদা জিয়ার ‘নিরাপত্তা’র বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এর আগে থেকেই বিমানবন্দর এবং এর আশপাশ এলাকায় কয়েক স্তরের নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশ ছাড়াও আনসার, এপিবিএন, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যতে সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

তবে বাড়তি নিরাপত্তায় সাধারণ মানুষ, বিদেশগামী, বিদেশ ফেরত মানুষকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীরা ছিলেন অস্বস্তিতে। বিএনপি চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানাতে আসা নেতাকর্মীদের চাপে বিমানবন্দরের সামনের রাস্তায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। বিমান বন্দরের প্রবেশ পথে কোনো নেতাকর্মীদের দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে দলটির নেতাকর্মীদের।

খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে এসে পুলিশের এই ধরনের আচরণের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে হাজার-হাজার নেতাকর্মী এখানে এসেছেন। কিন্তু পুলিশ কোনো জায়গায় নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়াতে দেয়নি। এতেই বোঝা যায় দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষের মৌলিক অধিকার নেই। গণতন্ত্র না থাকলে যে সহিষ্ণুতাও অনুপস্থিত হয় তা এই আচরণে স্পষ্ট হলো।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে চাইলেও পুলিশ সমস্যা সৃষ্টি করেছে। ইচ্ছে করেই তারা ঝামেলা পাঁকাতে চেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে ধরনের আচরণ করছে তাতে নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।

বাড়তি নিরাপত্তার পাশাপাশি বিমানবন্দরে বিদেশগামীদের জিজ্ঞেসাবাদ করে ভেতরে অনুমতি দিতে দেখা গেছে। এ নিয়ে বেশ অস্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেককে।

কড়াকড়ি নিরাপত্তা প্রশ্নে বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন বলেন, বিমানবন্দর দেশের এক নম্বর কেপিআই। সিভিল এভিয়েশন থেকে যাদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি আছে, তাদেরকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যতটুকু করা দরকার তাই করছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা।

নেতাকর্মীর অপেক্ষার মধ্যে বিকেল ৫ টা ১০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন খালেদা জিয়া। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ভিআইপি গেট দিয়ে বের হয়ে আসেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর যখন বিমানবন্দরের সামনে রাস্তায় আসে তখন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ব্যারিকেট ভেঙে ছুটে আসেন নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে দুই পাশে অবস্থান নেয়। ‘খালেদা জিয়া, খালেদা জিয়া’ স্লোগানে নেতাকর্মীরা এগিয়ে নেন প্রিয় নেত্রীকে। এ সময় খালেদা জিয়া গাড়ির গ্লাসের ভেতর থেকে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের অভিনন্দনের জবাব দেন।

খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে বিমানবন্দরে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আ স ম হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আহমেদ আজম খান, মোহাম্মদ শাহজাহান, ফজলুল হক মিলন, গোলাম আকবর খন্দকার, আসাদুজ্জামান রিপন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিনসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান।

এ ছাড়াও ছিলেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সানাউল্লাহ মিয়া, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আবদুস সালাম আজাদ, শাহজাদা মিয়া, নুরে আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, শাম্মী আখতার, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবদুল মজিদ, মাহবুব আল আমীন ডিউ প্রমুখ।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য লন্ডন যান বিএনপি চেয়ারপারসন। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমান ও ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর পরিবারের সঙ্গে ঈদ করেন তিনি। প্রায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে তার চোখ ও পায়ের চিকিৎসা চলেছে।

২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর যুক্তরাজ্যে এটি ছিলো খালেদার দ্বিতীয় সফর। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে দেশে ফেরার পথে বড় ছেলে তারেককে দেখতে লন্ডনে গিয়েছিলেন তিনি। বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় (২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা) হুলিয়া নিয়ে গত সাত বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে লন্ডনে রয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই