‘ক্রিকেটের কণ্ঠস্বর’ আর নেই
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ও জনপ্রিয় ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার রিচি বেনো পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। ৮৪ বছর বয়সে তিনি ত্বকের ক্যান্সারে কাছে হার মেনে মৃত্যুবরণ করেন। গত বছরের নভেম্বর থেকে তিনি এই রোগের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শুক্রবার তিনি মারা যান।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৬৩ টেস্ট খেলা রিচি বেনো জাতীয় দলকে ২৮ টেস্টে নেতৃত্ব দেন। তার অধিনায়কত্বে অস্ট্রেলিয়া কখনও টেস্ট সিরিজ হারেনি। লেগ স্পিনার বোলার ও ব্যাটসম্যান হিসেবে দারূণ কার্যকর ছিলেন সাবেক এই অসি তারকা। তার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া পাঁচটি টেস্ট সিরিজ জিতে ও অপর দুটি সিরিজ ড্র করে।
প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেট ও ২ হাজার রানের ডাবল অর্জন করেন তিনি। ৬০’র দশকে অ্যাশেজ সিরিজ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়েও নেতৃত্ব দেন তিনি।
খেলোয়াড়ের চেয়ে মূলত ধারাভাষ্যকার হিসেবে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন রিচি বেনো। খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানার পর প্রথমে বিবিসির এবং পরে অস্ট্রেলিয়ান টেলিভিশনের ধারাভাষ্যকার হন তিনি। ১৯৭০ সালে বিশ্ব সিরিজ আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন এই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান। ১৯৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার চ্যানেল নাইনে ধারাভাষ্যকার হিসেবে যোগ দেন সাবেক এই অসি অধিনায়ক। ২০১৩ সালে ধারাভাষ্য থেকে অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত এটার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।
২০১৩ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনার পর রিচি বেনো ধারাভাষ্য থেকে অবসর নেন। অসাধারণ ধারাভাষ্যের জন্য তাকে ‘ভয়েস অব ক্রিকেট’ বা ‘ক্রিকেটের কণ্ঠস্বর’ উপাধি দেয়া হয়। ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে তিনি ত্বকের ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছেন বলে জানা যায়।
এদিকে রিচি বেনোর মৃত্যুতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান, অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করেন।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চেয়ার ওয়ালি এডওয়ার্ড বলেন, ‘দেশ এক কিংবদন্তী ক্রিকেটকে হারালো। সে ছিল আমাদের সম্পদ। ডন ব্রাডম্যানের পর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে তার মতো আর কেউ এতো জনপ্রিয়তা ও প্রভাব বিস্তারকারী তে পারেনি।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট রিচি বেনোর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করার পাশাপাশি তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রিচিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিদায় জানানো হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
টনি অ্যাবট বলেন, ‘আমাদের দেশ একজন কিংবদন্তীকে হারালো। সে ছিল ক্রিকেটের এক জনপ্রিয় কণ্ঠস্বর। অস্ট্রেলিয়ার এমন কোনো ক্রিকেটার নেই যে গীষ্মে তার সান্নিধ্য লাভ করেনি।’
অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের অধিনায়ক ও ২০১৫ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক রিচি বেনোর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তাকে ক্রিকেটের ‘নিপাট ভদ্রলোক’ বলে অভিহিত করেন।
ক্লার্ক বলেন, ‘তিনি একজন গ্রেট ক্রিকেটার ও গ্রেট অধিনায়ক ছিলেন। মাঠ এবং মাঠের বাইরে তিনি ব্যক্তি হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ। তিনি জিততে ভালবাসতেন এবং জয়ের তীব্র ক্ষুধা অস্ট্রেলিয়ান দলের ভেতর গেঁথে দিয়েছেন।’
ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার রিচি বেনো লেখক ও কলামিস্ট হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৬৩ টেস্টে ২৪.৪৫ গড়ে ২ হাজার ২০১ রান করে রিচি বেনো। ক্যারিয়ারে ৩টি শতকের পাশাপাশি ৯টি অর্ধশতকও রয়েছে তার। বোলিংয়ে ২৪৮ উইকেট নেন সাবেক এই অসি অলরাউন্ডার।
রিচি বেনোর প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার আরও সমৃদ্ধ। ২৫৯ ম্যাচে ২৩টি শতক ও ৬১টি অর্ধশতকের সাহায্যে ১১ হাজার ৭১৯ রান করেন তিনি। গড়টাও মন্দ নয় (৩৬.৫০)। স্পিন বোলিংয়ে প্রায় ১ হাজার (৯৪৫) উইকেট লাভ করেন তিনি।
মন্তব্য চালু নেই