ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের পাশে এ কোন মানবিক মেসি!
সবে গোসল সেরেছে বছর দশ–বারোর ছেলেটা। গোসল সারার পর সাধারণত যে কাজটা করতে হয়, সেটাই করছিল ছেলে। তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছছিল। শেষ করতে দেখা গেল, এতক্ষণ যত্ন করে যা মুছছিল, সেই মাথায় একটাও চুল নেই। এক্কেবারে ন্যাড়া। কিন্তু ন্যাড়া মাথা নিয়ে ছেলের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। বরং বাথরুম থেকে বেরোনোর আগে তার চোখ গেল আয়নায়। খবর আজকালের।
গরম জলে স্নান সারলে জলীয় বাষ্পের চাদরে ঢাকা পড়ে আয়না। ছেলেটা সেটা দেখেই মুছতে গেল। আর আয়না মুছতে গিয়ে হয়ে গেল হতবাক! আরে আয়নার ওপারে কে? এ তো মেসি! আয়নার ওপার থেকেই হাসছে মিটিমিটি। ছেলেটাও হেসে ফেলল। স্বপ্নের নায়ককে এভাবে, এত কাছ থেকে দেখে।
দৃশ্য দুই: ছোট্ট মেয়ে তার আদুরে পুতুলের চুল আছড়ে দিচ্ছিল। নিজের মাথায় একটাও চুল না থাকলে কী হবে, তার সোনা পুতুলের তো আছে। একঢাল কোমর ছাড়িয়ে চুল। চিরুনি দিয়ে যত্ন করে পুতুলের চুল আছড়ে দেওয়ার পর, এবার ছোট্ট আয়নায় সোনা পুতুলকে মুখ দেখানোর কথা। তারপর চোখ গোল গোল করে বলার কথা, ‘কী রে পছন্দ হয়েছে তো চুল বাঁধা?’ কিন্তু এ প্রশ্ন করার আগেই, আনন্দে লাফিয়ে উঠল ছোট্ট মেয়ে। আরে আয়নার ওপারে এ কে? এ তো মেসি!
দৃশ্য তিন: পনেরো–ষোলোর ছেলেটা বাড়ির বাইরে ছিল। ফিরতেই ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দেবে সোফায় এমনই ইচ্ছে ছিল। কিন্তু এ কী কাণ্ড! ঘরের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ আছে। কে, কে? আয়নার সামনে দাঁড়াতেই এক গাল হাসি ছেলের মুখে। চোখের সামনে যে দাঁড়িয়ে আছেন, আর কেউ নন মেসি! কীসের দৃশ্যের কথা সেই থেকে বলছি? এক বিশেষ প্রোমোর। কয়েক মাস আগে সেন্ট জন দি দিউ হাসপাতালের প্রতিনিধিরা যোগাযোগ করেছিলেন লিওনেল মেসির সঙ্গে। উদ্দেশ্য ছিল শিশুদের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মেসিকে শরিক করা।
ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুদের জন্য অত্যাধুনিক এক হাসপাতাল তৈরি। যেখানে চিকিৎসার পাশাপাশি শিশুরা সামিল হতে পারবে, এই চিকিৎসার আরও উন্নততর গবেষণায়। মেসি অমত করেননি। আর সেই মতোই এই বিশেষ হাসপাতালের প্রোজেক্টের প্রচারে অংশ নিলেন। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বার্তা দিলেন সবাইকে, ‘আপনারাও সামিল হন এই লড়াইয়ে’। এই অত্যাধুনিক হাসপাতাল তৈরি করতে খরচ হবে প্রায় ৬ কোটি ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় ৪২৩ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা)! আগামী বছরের শেষ দিকের মধ্যেই এই হাসপাতাল তৈরির কাজ শেষ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শুধু মেসি নন, বার্সিলোনাও এই উদ্যোগের অংশ হয়েছে। বার্সার পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, ‘ও বিশ্বের সেরা ফুটবলার। কিন্তু এই প্রোজেক্টে আমরা বিশ্বের সেরা ফুটবলার মেসিকে পাইনি। পেয়েছি মানবিক মেসিকে। ও বিনয়, স্বার্থত্যাগের আদর্শ উদাহরণ। ওকে নিয়ে আমরা গর্বিত।’ মেসিও দারুণ উপভোগ করেছেন ক্যান্সারে আক্রান্ত ওই শিশুদের সঙ্গে বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে সময় কাটিয়ে। বাচ্চাদের সঙ্গে আলাদা করে ছবি তোলা, গল্প করা, উপহার দেওয়া সবই করেছেন। ছোটদের সঙ্গে যেন ছোটদের মতোই হয়ে গিয়েছিলেন।
মন্তব্য চালু নেই