ক্যান্ডিডা সংক্রমণের বিষয়ে জানুন
সাধারণ ছত্রাকের সংক্রমণকে ক্যান্ডিডা বলে। এই সংক্রমণ হয় সাধারণত মুখ, পরিপাক নালি এবং ভেজাইনাতে। এছাড়াও ত্বক ও মিউকাস মেমব্রেন ও আক্রান্ত হতে পারে। যদি ইমিউন সিস্টেম ঠিকমত কাজ না করে তাহলে এই ধরণের ইষ্ট ইনফেকশন মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। মস্তিষ্ক ও হৃদপিন্ডের চারপাশের পর্দায় এবং রক্তে ছড়িয়ে যেতে পারে সংক্রমণ। ক্যান্ডিডা নামক ইষ্টের অতিমাত্রায় বৃদ্ধির ফলেই হয়ে থাকে এই রোগ। ক্যান্ডিডার অতিবৃদ্ধি হওয়ার কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসার বিষয়ে জেনে নিই চলুন।
ক্যান্ডিডার অতিবৃদ্ধি হওয়ার কারণ :
অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াই ক্যান্ডিডার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তারপর ও আরো কিছু কারণ এর বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যায়, আর সেগুলো হচ্ছে –
– পরিশোধিত শর্করা ও চিনি বেশি পরিমাণে খাওয়া
– প্রচুর অ্যালকোহল গ্রহণ করা
– মৌখিক জন্মনিরোধক গ্রহণ করা
– ফারমেন্টেড ফুড বেশি খাওয়া
– স্ট্রেসপূর্ণ লাইফস্টাইল
– অধিক অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে যদি ভালো ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে গেলে
ক্যান্ডিডার অতিবৃদ্ধি হওয়ার সাধারণ লক্ষণসমূহ :
– ত্বক এবং নখে ছত্রাকের সংক্রমণ হওয়া, যেমন- অ্যাথলেটস ফুট বা পায়ের নখের ছত্রাক
– ক্লান্ত অনুভব করা বা ফাইব্রোমায়ালজিয়ায় ভোগা
– পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার মত পরিপাক তন্ত্রের সমস্যা হওয়া
– অটোইমিউন ডিজিজ যেমন – হাশিমোটোস থাইরয়ডিটিস, রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, আলসারেটিভ কোলাইটিস, লুপাস, সোরিয়াসিস, স্ক্লেরোডারমা বা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস ইত্যাদি রোগে ভোগা
– মনোযোগের সমস্যা হওয়া, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, ADD ও ADHD ভোগা
– ত্বকের রোগ যেমন- এক্সিমা, হাইভস ও র্যাশ হওয়া
– মেজাজের পরিবর্তন হওয়া, উদ্বিগ্নতা বা বিষণ্ণতায় ভোগা
– ভেজাইনাল ইনফেকশন, মূত্র নালীর সংক্রমণ ও মলদ্বারের চুলকানির সমস্যা হওয়া
– তীব্র সিজনাল অ্যালার্জিতে ভোগা বা কানের চুলকানির সমস্যা হওয়া
– বেশি বেশি চিনি ও কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়
রোগ নির্ণয় :
ব্লাড টেস্ট, ইউরিন অরগানিক্স ডিসবায়োসিস টেস্ট ও স্টুল টেস্টের মাধ্যমে ক্যান্ডিডার অতিবৃদ্ধি শনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসা :
সফলভাবে ক্যান্ডিডা নিরাময়ের জন্য ৩ টি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। আর তা হল – ইষ্টের অতিবৃদ্ধি বন্ধ করা, উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটানো এবং অন্ত্রকে সুস্থ করে তোলা যাতে ক্যান্ডিডা ছত্রাক রক্ত স্রোতে প্রবেশ করতে না পারে।
ক্যান্ডিডার অতিবৃদ্ধি রোধ করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে শর্করা জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করতে হবে। ইষ্টের খাদ্য হচ্ছে চিনি। তাই চিনি জাতীয় খাবার যেমন- ক্যান্ডি, ডেজারট ও ময়দা গ্রহণ বাদ দিতে হবে। জটিল কার্বোহাইড্রেট যেমন- শস্য, সিম, ফল, পাউরুটি, পাস্তা এবং আলু ১ কাপের বেশি গ্রহণ করা ঠিক নয়। এর ফলে ক্যান্ডিডার বৃদ্ধি ব্যাহত হবে এবং আস্তে আস্তে ধ্বংস হবে।
ডায়েটের মাধ্যমে ক্যান্ডিডা নিয়ন্ত্রণে আসতে ৩-৬ মাস সময় লাগে। ক্যান্ডিডার চিকিৎসায় ডাইফ্লুকেন বা নিস্টাটিন ঔষধ ১ মাসের জন্য সেবনের পরামর্শ দেয়া হয়।
তারপরে ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত প্রোবায়োটিক গ্রহণ করা উচিৎ।
সবশেষে অন্ত্রকে সুস্থ করে তোলার জন্য উচ্চ মাত্রার প্রোটিন ও ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে হবে।
প্রতিরোধের উপায় :
ঘেমে যাওয়ার মত কোন কাজ করার পর ঘাম মুছে শুকিয়ে ফেলতে হবে এবং গোসল করতে হবে নিয়মিত।
বগল, কুঁচকি ও শরীরের ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা প্রবণ স্থান পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখার চেষ্টা করুন।
স্থূলকায় মানুষদের ক্ষেত্রে ত্বকের ভাঁজের জায়গাগুলো সঠিকভাবে শুষ্ক রাখতে হবে।
গরমের সময় স্যান্ডেল বা সামনের দিকে খোলা এমন জুতা পরুন।
আন্ডার ওয়ার ও মোজা নিয়মিত পরিবর্তন করুন।
মন্তব্য চালু নেই