ক্যানসারের চিকিৎসক রডমিস্ত্রি !

রডমিস্ত্রি থেকে একেবারে ক্যানসারের মতো জটিল রোগের চিকিৎসক। শুধু ক্যানসার না গ্যাংগ্রিজ, হাপানি, প্রতিবন্ধি, টিউমারসহ সব ধরনের রোগের চিকিৎসা করেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কাঁচেরকোল ইউনিয়নের জাংগালিয়া গ্রামের শওকত আলী।

কবিরাজ শওকত আলী জাংগালিয়া গ্রামের দরবেশ আলী জোয়ার্দ্দারের ছেলে।

সিলেট শাহ জালাল মাজার সংলগ্ন জনৈক এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে শওকত আলী (৪০) রড সোজা করার কাজ করতেন। সেখান থেকে ১ বছর আগে তিনি বাড়ি আসেন। বাড়ি এসে তিনি তার বাবাকে বলে তার কাছে আশরাফ চৌধুরী নামে এক পীর অবস্থান করছে। সেই পীর তাকে বলেছে তুই যদি মানব সেবা না করিস তাহলে তোকে মেরে ফেলা হবে। সেই পীর সাহেবের কথামতোই তিনি ক্যানসারসহ সব রোগের চিকিৎসা প্রদান করে আসছেন।

সরেজমিনে জাংগালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ভণ্ড কবিরাজ শওকত আলী চিকিৎসার নামে প্রতারণার নানা চিত্র। ওই এলাকার অশিক্ষিত নারী পুরুষ তার কাছে ভিড় করছে তেল ও পানি পড়া নেয়ার জন্য। সেইসঙ্গে চলছে ঝাড়ফুক। তার এ চিকিৎসায় অনেক রোগী ভালো হয়েছে বলে দাবি করা হলেও ঠিকানা বা পরিচয় কেউ দিতে পারেনি।

স্থানীয় শিমুল হোসেন নামে এক কৃষক জানান, জাংগালিয়া গ্রামের দরবেশ আলীর জোয়ার্দ্দারের ৬ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে ভণ্ডকবিরাজ শওকত ইসলাম সবার বড়। সে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপাড়া শেষ না করতেই সংসারের অভাবের তাড়নায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যায় সিলেট শাহ জালাল মাজার সংলগ্ন জনৈক এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে। সেখানে তিনি রড সোজা করার কাজ করতেন। সেখান থেকে ১ বছর আগে তিনি বাড়ি ফিরে এ প্রতারণা শুরু করেছেন। তার কাছে চিকিৎসা নিতে আসা ভবিতপুর গ্রামের জহির আলীর স্ত্রী ডলি খাতুন জানান, সে হাপানিজনিত রোগে ভুগছেন। তবে তার অবস্থা ভালো হয়নি আবার খারাপও হয়নি। সে পানিপড়া ও তেল নিতে এসেছেন বিনিময়ে ৪০ টাকা দিতে হয়েছে।

বাথডাঙ্গা গ্রামের নাজমা এসেছেন। প্রথম দিন চিকিৎসা নিচ্ছেন তাই কিছু বলতে রাজি হননি। তবে কবিরাজের প্রতারণা সর্ম্পকে তিনি জানান, শুনেছি অনেকেই ভালো হয়েছে। তবে তিনি চোখে দেখননি কে ভাল হয়েছে।’

এলাকাবাসী জানায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে অশিক্ষিত নারী-পুরুষ যাদের মনে নানা কুসংস্কার ভরা থাকে তারা এসে সেখানে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু যখন তাদের রোগ আর ভালো হয় না, প্রতারণা বুঝতে পারে তখন আর তারা চিকিৎসা নিতে আসে না। তখন কবিরাজে আশেপাশে থাকা দালাল চক্র প্রচার করে অমুক এলাকার ওই লোকের রোগ ভালো হয়ে যাওয়ায় সে আরে আসে না। এভাবে প্রতারণার নানাবিধ ফাঁদ পেতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভণ্ড কবিরাজ শওকত।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ড. আব্দুস সালাম বলেন, ‘ঝাড়ফুক, পানি ও তেল পড়া দিয়ে কোনো রোগ সারাতো দূরের কথা, এতে অসুস্থ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। অবিলম্বে এ প্রতারণা বন্ধ হওয়া উচিত।’

ঝিনাইদহ জেলার পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি সরেজমিন তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ওসিকে বলেছেন। তবে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া আশ্বাস দেন পুলিশ সুপার।

ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের দাবি সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক।



মন্তব্য চালু নেই