কোরবানীর পশুর কোন কিছুই ফেলনা নয়

মোঃ আমান উল্লাহ, কক্সবাজার : গবাদি পশুর মাংস আর চামড়ার কদর আমাদের সবারই জানা। কিন্তু অজানা ব্যাপারটি হলো- মাংস আর চামড়া ছাড়া বাকি সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রয়েছে বিরাট অর্থমূল্য। এখন আর কোরবানীর পশুর উচ্ছিষ্ট কিছুই ফেলনা নয়। তাই কোরবানীর পর চামড়া সংগ্রহের পাশাপাশি চলছে অপ্রয়োজনীয় হাড়, গরুর শিং সংগ্রহ।

ফলে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কক্সবাজার শহরের গাড়ীরমাঠ এলাকার ক্ষুদ্র ভাংগারী ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে প্রতিদিন এই হাড় কেনা-বেচায় কোটি কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। জবাই করা পশুর ফেলে দেয়া হাড়গোড় সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে বিদেশে রফতানি করে হাজার কোটি টাকা আয় সম্ভব।

কোরবানী ঈদের দিন বিকেলে শহর জুড়ে দেখা মিলল এমন সংগ্রহকারীদের। প্রতিটি গরুর শিংসহ হাড় তারা কিনে নিচ্ছেন নগদ ৫০-১শ টাকা দরে।

পশুর শুধু চামড়াই নয়, এর উচ্ছিষ্টও রফতানি করে শত কোটি টাকা আয় হচ্ছে। হাড় থেকে শুরু করে শিং, নাড়িভুঁড়ি, মূত্রথলি, চর্বি, পায়ের খুর, চামড়ার অব্যবহৃত অংশসহ বিভিন্ন অঙ্গ সবই রফতানিযোগ্য বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, পশুর কোনো কিছুই ফেলা হয় না। হাড় কেনা-বেচায় কোটি কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। রফতানির পাশাপাশি দেশেও গড়ে উঠছে নানা শিল্প-কারখানা। হাড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে দেশীয় পণ্য। শুধুমাত্র ঈদের দিন থেকে পরবর্তী ১ মাস পশুর হাড় সংগ্রহ করা হয়। পরে এগুলো প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। প্রতিবছর এখাতে প্রায় ১১০ কোটি টাকার লেনদেন হয়।

এছাড়া পশুর হাড় দিয়ে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ক্যাপসুলের কাভার, নাড়ি দিয়ে অপারেশনের সুতা, রক্ত দিয়ে পাখির খাদ্য, চর্বি দিয়ে সাবান, পায়ের খুর দিয়ে অডিও ভিডিওর ক্লিপ, অন্ডকোষ দিয়ে তৈরি হয় জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাদ্য সুসেড রুলসহ অরো খাবার। সিরামিক শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও হাড় ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া জার্মানি ও ইতালিতে ব্যাপক চাহিদা থাকায় পশুর শিং সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

হাড় সংগ্রহকারী ওমর ফারুক একটি ভ্যানগাড়ি নিয়ে বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে চেয়ে নিচ্ছেন কোরবানির পশুর ফেলে দেওয়া অংশ। তিনি বলেন, “কক্সবাজারে ঈদের সময় পশু কোরবানির পর হাড় কুড়ানোর কাজে নিয়োজিত থাকে রয়েছে বিভিন্ন বয়সের শিশুসহ নানা বয়সী শ্রমিক। এসব হাড় প্রকার ভেদে ঈদের দিন থেকে ১০টাকা কেজি থেকে শুরু করে ১৫ টাকা কেজি দামে হাড় বেচা যায়।

গাড়ীর মাঠের ভাঙ্গারীর দোকানদার শফি উদ্দিন জানান, কোরবানি পশুর মলমূত্র ছাড়া আর কিছুই ফেলা হয় না। হাড়, শিং, পায়ের খুর থেকে শুরু করে পশুর বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গ বিক্রি করেন তারা। পশু জবাইয়ের পর একটি মাঝারি আকারের গরু থেকে প্রায় ১৮-২২ কেজি এবং মহিষ থেকে ২৫-৩০ কেজি হাড় ফেলে দেয়া হয়। এগুলোই তাদের লোকজন কুড়িয়ে নিয়ে আসেন।



মন্তব্য চালু নেই