কোন পথে শাকিব খান?

অশ্লীলতা, পাইরেসি, নকল গল্প, বিনিয়োগের অভাব, দর্শক খরা, প্রেক্ষাগৃহের সংকটসহ নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প। তারপরও প্রতি বছর ৫০-৬০টি চলচ্চিত্র মুক্তি পাচ্ছে। সাদা চোখে এটাকে ইতিবাচক বলেই মনে হয়। আবার অনেকেই বিষয়টিকে চলচ্চিত্রে ডিজিটালাইজেসনের প্রভাব বলে মনে করেন। আসলেই কী তাই? এ প্রশ্নের উত্তর হয় তো চলচ্চিত্র বোদ্ধারা দিতে পারবেন। তবে হতাশার কথা হলো এতগুলো চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও, ব্যবসায়িক ভাবে সফল হতে পারে হাতে গোনা কয়েকটি ছবি। আর সফল ছবির অধিকাংশের নায়কই যখন শাকিব খান, তখন তার কর্মের উপরই নির্ভর করে পুরো চলচ্চিত্র শিল্পের ভালো মন্দ।

শাকিব খান মানেই নাচ, গান, অ্যাকশন আর ঝড়ো সংলাপে ভরপুর একটি ছবি। দীর্ঘদিন ধরে এ ধারণা চলে আসলেও, গেল দু’বছরে হঠাৎ করেই পরিবর্তনের হাওয়া লাগে শীর্ষ এই নায়কের গায়ে। চুলের স্টাইল থেকে শুরু করে বডি ফিটনেস সবকিছুতেই আনেন পরিবর্তন। এমন কী তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী অপু বিশ্বাসকে বাদ দিয়ে ছোটপর্দার অভিনেত্রী আর নবাগত নায়িকাদের সঙ্গেও জুটি বেঁধেছেন। তথাকথিত কাহিনীর বাইরে গিয়ে মৌলিক ও বৈচিত্রপূর্ণ গল্পের ছবিতে কাজ করছেন। এ সবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। তবে, শাকিবের দর্শক থাকলেও সমালোচকও কিন্তু কম নেই। শাকিবের অনেক সিদ্ধান্তেই মাথা দুলিয়ে নাখোশ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের অনেকেই।

গেল কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের শুরুতেই ‘অপারেশ অগ্নিপথ’ নামে একটি চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হন শাকিব খান। এতে তাকে প্রথমবারের মতো গোয়েন্দা চরিত্রে দেখবে দর্শক। আগামী মে মাস থেকে অস্ট্রেলিয়ায় শুটিং শুরু হতে যাওয়া এই ছবিতে শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করছেন শিবা আলী খান নামের আরেক নবাগত নায়িকা। যদিও এর আগে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে এই নায়িকা চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে ছবির পরিচালক আশিকুর রহমান ‘কিস্তিমাত’ নির্মাণের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন। সেই ধারাবাহিকতায় ‘মুসাফির’ নামে আরও একটি ছবি নির্মাণ করেছেন, যা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় নবাগত নায়িকা আর নতুন পরিচালকের ছবিটি দর্শক কতটুকু গ্রহণ করবে, কিংবা ছবিটি চলচ্চিত্র শিল্পের অবস্থার উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখবে।

এদিকে চলতি বছরের শুরুতেই নির্মাতা কালাম কায়সারে ‘মা’ ছবি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন শাকিব খান। এতে তার বিপরীতে নায়িকা হিসেবে অপুর দেখা মিললেও, পরিচালকের নির্মাণ শৈলী নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষত এই পরিচালক কর্তৃক নির্মিত সর্বশেষ ছবি ‘ভালোবাসতে মন লাগে’ সেন্সরবোর্ড আটকে দিয়ে ছিলো। অপর্যাপ্ত কাহিনী বিন্ন্যাসসহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছবি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পেলেও ব্যবসায়িক ভাবে চরমভাবে ব্যর্থ হয়। বলে রাখা ভালো ইদানিং শাকিব খানের অধিকাংশ ছবিতেই অপু বিশ্বাসের পাশাপাশি সমান্তরাল আরেকটি নায়িকা চরিত্রের দেখা মিলছে। সেই ধারায় এই ছবিতে দ্বিতীয় নায়িকা হিসেবে রয়েছেন তানিয়া ইসলাম রিতু।

সম্প্রতি চিত্রনায়ক শাকিব খান তার নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এস কে ফিল্মস থেকে ‘প্রিয়া রে’ নামে নতুন একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। ছবিটির চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করছেন মেন্টাল খ্যাত শামীম আহমেদ রনি। তবে মজার বিষয় হলো সব কিছু ঠিক হলেও এখনও ছবির নায়িকা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে নায়িকা খোঁজার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, শাকিব খানের উপর যখন পুরো চলচ্চিত্র শিল্প নির্ভর করছে, তখন তাকেই যদি নায়িকা খুঁজতে হয় তখন অন্যকাজ কে করবে?

যৌথপ্রযোজনা নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই জলেই নামলেন শাকিব খান। বিষয়টা অনেক শাকিব ভক্তও মেনে নিতে পারছেন না। কারণও খুব সহজ, গেল বছর হঠাৎ করেই যৌথপ্রযোজনায় ছবি নির্মাণের হিড়িক পড়ে। পরবর্তীতে দেখা যায়, এসব ছবি আদতে ভারতীয় ছবি বলেই মানছে বিশ্লেষকরা। ফলে ছবির ক্রেডিটও যাচ্ছে তাদের ঘরে। অন্যদিকে ছবিতে বাংলাদেশের শিল্পীদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছোট করে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তাই ভারতীয় ছবি আমদানির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শাকিব যৌথপ্রযোজনার ছবি নিয়েও সোচ্চার হবেন বলেই মনে করা হচ্ছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই আশা মিথ্যে প্রমাণ করে তথাকথিত যৌথপ্রযোজনার চলচ্চিত্রে নাম লিখিয়েছেন শাকিব। জাজ মাল্টিমিডিয়া ও এসকে মুভিজের যৌথ উদ্যোগে নির্মাণাধীন ‘শিকারী’ ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করবেন কলকাতার শ্রাবন্তী।

এদিকে ‘সত্তা’ নামের একটি ছবি নিয়ে গেল কয়েকদিন ব্যস্ত সময় পার করেছেন শাকিব খান। প্রায় দুই বছর হতে চললেও, ছবিটির কাজ শেষ হওয়ার নাম নেই। ভারতীয় অভিনেত্রী পাওলি দামের ব্যস্ততা নাকি শাকিব খানের সিডিউল জটিলতা তা জানা না গেলেও, গতকাল শুটিং ফেলেই চলে গিয়েছেন এই নায়িকা।

চলতি বছর শাকিব অভিনীত উল্লেখযোগ্য মুক্তিসম্ভাব্য চলচ্চিত্রগুলো হলো সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি-২’, শামিম আহমেদ রনি পরিচালিত ‘মেন্টাল’, মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ‘সম্রাট- দ্যা কিং ইজ হিয়ার’, হাসিবুর রেজা কল্লোল পরিচালিত ‘সত্তা’, এন বুলবুল বিশ্বাসের ‘রাজনীতি’।

বদলে যাওয়া শাকিবের বৈচিত্রময় রূপ দেখতে পাবে এ বছর দর্শক। কিন্তু সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক ধারার বাংলা সিনেমার প্রাণ শাকিব খান যদি সে ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখতে না পেরে ভুল পথে হাটেন তাতে বাংলা ছবিরই পরাজয় ঘটবে।



মন্তব্য চালু নেই