কোথায় গেল বাংলাদেশের টাকা?
বাংলাদেশ ব্যাংকের হ্যাকড হওয়া ১০০ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
তবে ঐ বিপুল পরিমাণ অর্থের মধ্যে ১৯ মিলিয়ন ডলার ইতিমধ্যেই ফেরত পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বয়ং৷
বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা হ্যাকড হয়েছে ব্যাংকের ‘সুইফট কোড’ এবং ‘সিস্টেম’ ব্যবহার করেই৷
হ্যাকাররা যেভাবেই হোক বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে ঢুকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সিস্টেমে পেমেন্ট অ্যাডভাইজ পাঠায়৷
বলা বাহুল্য, এটি একটি সয়ংক্রিয় ব্যবস্থা৷ হ্যাকাররা ফিলিপাইন্সের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পরিশোধের জন্য মোট ৩০টি অ্যাডভাইজ পাঠিয়েছিল বলে জানা গেছে৷ এর মধ্যে পাঁচটি অ্যাডভাইজে মোট ১০ কোটি ডলার (১০০ মিলিয়ন) হ্যাকারদের হাতে চলে যায়৷ খবর ডয়েচ ভেলের।
অ্যাডভাইজগুলো ব্যক্তিগত হিসেবে অর্থ দেয়া হওয়ায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সন্দেহ হয়৷ সাধারণত কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর করে না৷ তাই এই সন্দেহ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় যে, তাদের পক্ষ থেকে অর্থ স্থানান্তরের জন্য কোনো অ্যাডভাইজ পাঠানো হয়নি৷
মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল দাবি করেন, ‘‘টাকা হ্যাকড হওয়ার এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো দোষ নেই৷ বরং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউ ইয়র্কেরই কোনো গোলমাল হয়েছে৷” ফেডারেল রিজার্ভ অবশ্য বিষয়টি অস্বীকার করে৷ তারা জানায় যে, এতে তাদের কোনো দায়িত্ব নেই৷ তাছাড়া এটা হতেই পারে না৷
অর্থমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমরা তাদের কাছে টাকা রেখেছি৷ কোনোভাবে তারা দায় এড়াতে পারে না৷” তাই নিউ ইয়র্কের রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার কথাও জানান অর্থমন্ত্রী৷
ওদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক তাদের সিস্টেম হ্যাকিং-এর খবর অস্বীকার করেছে৷ তারা বলছে, ফেডারেল রিজার্ভের সিস্টেমে হ্যাকিং-এর কোনো প্রমাণ নেই৷
এছাড়া চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে কিনা – তাও প্রকাশ করছে না বাংলাদেশ৷
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের এক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়ে নেয়া বিপুল পরিমাণ অর্থের একাংশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ তবে কী পরিমাণ টাকা হ্যাকড হয়েছে এবং তার কত অংশ উদ্ধার করা হয়েছে, তা বলা হয়নি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে৷
এদিকে ফিলিপাইন্সের পত্রিকা দ্য এনকোয়ারার বুধবার তাদের অনলাইন সংস্করণে জানায়, ‘ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের হ্যাকড হওয়া অর্থ সেখানকার স্থানীয় ক্যাসিনোতে ব্যয় হয়েছে৷ এই টাকা ফিলিপাইন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি)-এর একজন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট-এ জমা হওয়ার পর, তা তিনি তুলে নিয়েছেন৷’
পত্রিকাটি আরও জানায় যে, সম্ভবত চীনা হ্যাকাররা এই হ্যাকিং-এর সঙ্গে জড়িত৷
এই হ্যাকিং-এর ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ৫৬টি ব্যাংকের অনলাইন এক্সপার্ট এবং সাইবার নিরপত্তা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করেছে বুধবার৷
জানা গেছে, হ্যাকড হওয়া ১০০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৯ মিলিয়ন ডলার এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে৷ তবে জুয়ার আসরে খরচ হয়ে যাওয়ায় বাকি অর্থ উদ্ধারের আর কোনো সম্ভাবনা নেই৷
বৈঠকে উপস্থিত আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের ডাইরেক্টর অপারেশন তথ্য প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ম্যাল ওয়ার্ম ভাইরাস ইনফেকশনের মাধ্যমে হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘আইডি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়৷ পরে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে অ্যাডভাইজ পাঠায় তারা৷”
তিনি জানান, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমেই হ্যাকার ঢুকেছে, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে নয়৷”
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এ ঘটনার পর ব্যাংলাদেশ ব্যাংক কাউকে না জানিয়ে নিজেরাই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে, যা ঠিক হয়নি৷ তাই এখন আর এই অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা নাই৷”
উল্লেখ্য, ২৫০টি দেশের সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভে টাকা জমা রাখে৷ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বর্তমানে ২৮০০ কোটি ডলারের মতো৷
মন্তব্য চালু নেই