কেমন হয় সমাজের আইনগত বৈধ পতিতালয়গুলো? (দেখুন ছবিতে)
বাংলাদেশে কোন তরুণের জন্য প্রকাশ্যে তার প্রেমিকার হাত ধরার কোন সুযোগ নেই, বিয়ের আগে যৌনতাকে সমাজ দেখে ঘৃণাভরে। কিন্তু আইনত বৈধ অনেক পতিতালয় যেমন আছে তেমনি আছে ভাসমান অনেক যৌনকর্মী। পতিতালয় এর ভিতরে নীতি নৈতিকতার কোন বালাই নেই।
আসমা’র বয়স ১৪, তাঁর জন্মই হয়েছে এই পতিতালয়ে। এ বছর থেকে তাঁর মায়ের মতো সেও এসেছে এই পেশায়। এর আগে নাচগান করে খদ্দেরদের মনোরঞ্জন এর কাজ করতো আসমা।
অনেককে দেখা যায় মেয়েদের সাথে বসে শুধুমাত্র এক কাপ চা খাওয়ার জন্যও কেউ কেউ পতিতালয় যায়।
বাবা-মা মারা গিয়েছিল খুব অল্প বয়সে। অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল। স্বামীর সাথে হিরোইন আসক্তি থেকে একসময় গিয়েছিল জেল এ। তাঁর মতে জেলটাই ভালো ছিল সবচেয়ে বেশি কারণ ওখানে তাঁকে কেউ মারধর করতো না। জেল এ থাকতেই পরিচয় হয় এক মহিলার সাথে যে তাকে জেল থেকে বের হওয়ার পর এই পেশায় নিয়ে আসে।
অনেকে যায় মদ খেতে কারণ পতিতালয় এর বাইরে মদ খাওয়ার উপায় নেই। সম্প্রতি টাঙাইল এর কান্দাপাড়া পতিতালয় থেকে ঘুরে এসে এভাবেই লিখেছেন জার্মান ফটোগ্রাফার স্যান্ড্রা হইন।
স্যান্ড্রা তাঁর ছোট্ট লেখার সাথে জুড়ে দিয়েছেন বেশ কিছু ছবি। ছবির সাথে আবার ছোট ছোট বর্ণনা। ছবিগুলো নিজেই অনেক গল্প প্রকাশ করে।
আইনগতভাবে বৈধ কান্দাহারের এই পতিতালয়ের বয়স প্রায় ২০০ বছর। ২০১৪ সালে একবার বন্ধ হয়ে গেলেও পতিতালয়ের মেয়েদেরকে বাইরের সমাজ ভালোভাবে গ্রহণ করে এজন্য কিছু NGO’র সহযোগিতায় আবার তা পূনর্স্থাপিত হয়েছে।
পিয়া’র বয়স ১৯। তিন বছর ধরে আছে পতিতালয়ে।
কাজল বা পিয়ার মতো অনেক মেয়ের জন্মই হয়েছে এই পতিতালয়ে, তারা জানে না এই পতিতালয় বন্ধ হয়ে
গেলে কী করবে কোথায় যাবে! অথবা সমাজ তাদেরকে কোনদিন মেনে নিতে পারবে কিনা।
একজন খদ্দেরের সাথে কাজল। তাঁর ধারণা তাঁর বয়স ১৭, আসল বয়স জানা নেই। তাঁর কোন এক খালা বা চাচী তাকে কান্দাপাড়া পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়েছিল। এক ছেলে আছে তাঁর। নাম মেহেদী। ছেলে জন্মের মাত্র দুই সপ্তাহ পর থেকেই তাকে আবার বাধ্য করা হয়েছে কাজ শুরু করতে।
পতিতালয় এর চারপাশ ঘিরে ২ মিটার উঁচু দেয়াল। সরু গলির ভিটরে আছে খাবারের দোকান, ছাইয়ের দোকান আর ফেরিওলারা।
পতিতালয়ের ভিতরে আছে নিজস্ব আইন নিয়ম কানুন, বাইরের সমাজের সাথে অনেক সময়ই যার কোন মিল নেই।
দীপা’র বয়স ২৬, দুই মাসের অন্তস্বত্ত্বা
পতিতালয় এর ভিতরে নারীরা দুর্বল আবার কেউ কেউ ক্ষমতাধর। সবচেয়ে খারাপ সময় কাটে যখন প্রথম তারা পতিতালয় এ প্রবেশ করে। অনেকেই আসে নারীপাচার চক্রের মাধ্যমে, যাদেরকে বিক্রি করে দেয়া হয় পতিতালয় এর কোন এক সর্দারনীর কাছে। নতুন আসা বেশিরভাগেরই বয়স ১২ থেকে ১৪ বছর।
পাচার চক্র সর্দারনীর কাছ থেকে নেয়া টাকাটা সর্দারনীকে শোধ করে দেয়ার আগে তাদের কাজের কোন স্বাধীনতা থাকে না। পতিতালয় এর বাইরে যাওয়ারও কোন সুযোগ নেই তাদের। সুযোগ নেই খদ্দের বাছাইয়ের।
তাদেরকে যখন যা করতে বলা হয় তাই করতে হয়। সর্দারনীর কিংবা দালালের টাকা শোধ করার পরই একমাত্র তারা নিজের রোজগারের টাকা চোখে দেখে।
এরজন্য সময় লাগে ১ থেকে ৫ বছর। এরপরই একমাত্র তারা স্বাধীন যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পায়। অথবা চাইলে কেউ যেতে পারে পতিতালয় ছেড়েও কিন্তু এরপর পতিতালয় ছেড়ে যাওয়ার আর কোন সুযোগ থাকে না তাদের জন্য কারণ সমাজ কখনই তাদের গ্রহণ করবে না।
২০ বছর বয়সে ঝিনুকের গর্ভে জন্ম হয়েছে দুই জমজ শিশুর। যাদের আর কোনদিনই হয়তো পতিতালয়ের বাইরের জীবন দেখা হবে না।
অনেকেই অনেকভাবে এসেছে এই পতিতালয়ে। কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে আর কেউ স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নিজের ইচ্ছাতেই। কারো ছেড়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই, কেউ ছেড়ে যেতে চায় না অনিশ্চয়তার কারণে। পুলিশ, রাজনীতিবিদ, কৃষক, শ্রমিক, তরুণ… সব ধরণের মানুষই খদ্দের হিসেবে আসে এই পতিতালয়ে। কেউ কেউ আসে যৌনকর্মের জন্য কেউবা আসে নিছক নারীসঙ্গের জন্য।
মন্তব্য চালু নেই