কেউ আমার খোঁজখবর নেয় না : হারুন কিসিঞ্জার

কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ঢাকাই ছবিতে দিলদারের পর জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন হারুন কিসিঞ্জার। প্রায় ৭৫টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। শুধু চলচ্চিত্রে নয়, ৪২টি কৌতুক অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। তবে সবকিছু থেকে দূরে সরে হারুন কিসিঞ্জার এখন আড়ালের মানুষ। আগের মতো আর চোখে পড়ে না। না কাজে না কোনো খবরে।

কেমন আছেন, কীভাবে যাচ্ছে এই কৌতুক শিল্পীর দিনযাপন? তাই জানতে শনিবার (১১ মার্চ) বিকেলে যোগাযোগ করা হয় হারুন কিসিঞ্জারের সঙ্গে। আলাপকালে তিনি জানান, বর্তমানে আছেন কুমিল্লায়। বলছিলেন, ‌‘আমি এখানে স্টেজ শো করতে এসেছি। আজকাল এই শোগুলো দিয়েই চলছি।’

তিনি বলেন, ‘রোজার মাস বাদে বাকি ১১ মাসই দেশের বিভিন্ন স্থানে স্টেজ শো করি। তাছাড়া দেশের বাইরে দুবাই, কাতার, সিঙ্গাপুর, লেবানন, মালয়েশিয়ায় শো করতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে বহুবার। এই স্টেজ শো করেই জীবিকা নির্বাহ করি। পাশাপাশি প্রতি মাসের শেষ শুক্রবার এটিএন বাংলায় ‘কমেডি আওয়ার’ নামে একটা অনুষ্ঠান হয়, সেখানে আমি উপস্থিত থাকি।’

মান্না, রিয়াজ, আমিন খানদের সঙ্গে নিয়মিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করতেন হারুন কিসিঞ্জার। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, শাহ আলম কিরণ, এফ আই মানিক, ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম, এমবি মানিক ছাড়া গুণী নির্মাতাদের ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। তবে এখন যারা ছবি বানাচ্ছেন তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই বলেন জানান এই কৌতুক অভিনেতা।

হারুন কিসিঞ্জার বলেন, ‘আগের ফিল্ম ডিরেক্টররা আমাকে ছবিতে নিতেন। তারা খোঁজখবর রাখতেন। কিন্তু এখনকার নির্মাতারা তো দূরের কথা, এফডিসির কেউ আমার খোঁজখবর নেয় না। আমি আবার আগের মতো ছবি করতে চাই। কিন্তু নতুন পরিচালকদের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। নতুন নায়ক, নায়িকাদের সঙ্গেও তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। এতদিন কাজ করে এসে আমি তো দ্বারে দ্বারে গিয়ে কাজ চাইতে পারি না! আর এখন সিনিয়র সব শিল্পীই প্রায় বেকার। এসব নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। সবাই দিন বদলে দিচ্ছেন, যুগ বদলে দিচ্ছেন। ফাটিয়ে দিচ্ছেন ইন্ডাস্ট্রি।’

দিলদার মারা যাওয়ার পর এদেশের চলচ্চিত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছিল বলে মনে করেন হারুন কিসিঞ্জার। তারপর তিনি কিছুটা হলেও সেই শূন্যতা পূরণের হাতছানি দিয়েছিলেন। এরপর ‘জামাই শ্বশুর’ ছবিতে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি। বলেন, ‘এই ছবিটি আমাকে সবচেয়ে প্রশংসা এনে দিয়েছে। এরপর মান্না, রিয়াজ, শাকিব খানের ছবিতে অনেক কাজ করেছি। সর্বশেষ আমি কাজী মারুফের সঙ্গে ‘মাস্তান পুলিশ’ ছবিতে কাজ করেছি।’

আরও বলেন, ‘এখন আমাদের ফিল্মে কৌতুক অভিনেতাদের কদর কম। আমার শিষ্য চিকন আলী, রতন অনেকগুলো ছবিতে কাজ করছে। কিন্তু আমি ওকে যেভাবে প্রথমে তুলে এনেছি সেভাবে সে কাজ করতে পারছে না। আসল কথা হচ্ছে, আগে কৌতুক শিল্পীদের জন্য গল্পের আলাদা প্লট থাকতো, এখনকার ছবিতে তাও নেই। সবই নায়ক-নায়িকার গল্প।’

হারুন কিসিঞ্জার প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘মানুষ ছবি দেখে বিনোদনের আশায়। কৌতুক শিল্পীরা চলচ্চিত্রে বিনোদনের অপরিহার্য অংশ। তাদের আনন্দময় উপস্থিতি গল্পটাকে পূর্ণতা দেয়। কিন্তু তারাই আজকের দিনের চলচ্চিত্রে অবহেলিত, কেন? নির্মাতা-চিত্রনাট্যকাররা তাদের নিয়ে কেন ভাবেন না?’

ঢাকার বাসিন্দা হারুন কিসিঞ্জার দুই মেয়ে ও দুই ছেলের জনক। তার বড় মেয়ে স্বামীর সঙ্গে ইতালি থাকে, আরেক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন দেশেই। এক ছেলে নাটক-টেলিফিল্মের ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ করছেন। ছোট ছেলে লেখাপড়া করছে।

কথা শেষ করার আগে হারুন কিসিঞ্জার বলেন, ‘আমি আর্থিকভাবে আল্লাহর রহমতে বেশ সচ্ছ্ল। আমার কোনো অভাব নেই। তবে যেই চলচ্চিত্র দিয়ে আমি পরিচিতি পেয়েছি, সেই চলচ্চিত্রের মানুষ যদি আমার কোনো খোঁজ না রাখে তবে খুব কষ্ট লাগে।’খবর জাগো নিউজের।



মন্তব্য চালু নেই