কূটনৈতিক সাফল্যে তৃপ্ত বিএনপি!
পরিস্থিতি যতোই জটিল হয়ে উঠছে ততোই বাড়ছে কূটনৈতিক তৎপরতা। বিএনপি গুম, খুন, মিথ্যা মামলা, অপহরণ, বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের তালিকা তুলে দিচ্ছে বিদেশিদের হাতে। আর ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে একের পর এক চুক্তি করে যাচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের ডেকে ডেকে সহিংসতার ভিডিও ও স্থিরচিত্র দেখানো হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বারবার আলোচনার তাগিদ দেয়া হলেও আওয়ামী লীগ তাতে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না। বরং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে সন্ত্রাসী জোট হিসেবে বিদেশিদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে।
ফলে সংলাপের জন্য বিদেশিদের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো চাপ নেই সরকারের ওপর।
তবে সম্প্রতি সহিংসতা নিরসনে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। তার নির্দেশনায় সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো দুই দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আর এটাকেই কূটনৈতিক সফলতা হিসেবে দেখছে বিএনপি।
আন্দোলন চলাকালে সহিসংতা ও ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হলেও দলটির নেতাদের দাবি, সরকারের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলতে বিএনপি অনেকখানি সফল হয়েছে।
তারা বলছেন, জাতিসংঘ তথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশের চলমান সঙ্কট নিরসনে যে পদক্ষেপ নিচ্ছেন তা তাদের আন্দোলনেরই ফসল।
এদিকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কংগ্রেসম্যানের ভুয়া বিবৃতি নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছিল বিএনপি। পাশাপাশি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন করেছেন বলে বিএনপি যে খবর দিয়েছে তা নিয়েও এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়।
এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের উদ্যোগ বিএনপির জন্য বড় ধরনের তৃপ্তিদায়ক ঘটনা হিসেবে প্রতিপন্ন হচ্ছে।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো শিগগিরই আবার সংলাপের উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তাকে সহযোগিতা করতে জাতিসংঘ থেকে বিএনপিকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
চলমান পরিস্থিতিকে বিএনপি জোট রাজনৈতিক সঙ্কট বলছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য জাতিসংঘও সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সরকারি জোট বর্তমান পরিস্থিতিকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে।
এই কৌশল সরকারের অসহযোগিতামূলক মনোভাব কি না জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘এটা বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান হতে পারে না, হলেও সাময়িক বা বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য। সংলাপের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন দুই নেত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। এ নিয়ে অন্য কিছু ভাববার অবকাশ নেই। বিশ্বের সমস্যা মিটমাট করা তাদের দায়িত্ব। বাংলাদেশে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’
জাতিসংঘের সংলাপের উদ্যোগ বিএনপির আন্দোলনের ফসল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের ফসল হতেই হবে। কারণ আমরা তো একা না। বাংলাদেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন আমাদের আন্দোলনের মধ্যে। আমাদের সঙ্গে সুশীল সমাজ আছে। সব পেশাজীবী মানুষ রয়েছে।’
দেশের রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ রাজনীতিকদের জন্য লজ্জাকর কি না- এমন প্রশ্নে এ বিএনপি নেতা বলেন, ‘এটা তো হস্তক্ষেপের ব্যাপার না, হস্তক্ষেপ হলে আমরাই সর্বপ্রথম এতে বাধা দেবো। একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ যেখানে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে, সেখানে হস্তক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি না। এটা হলো মধ্যস্থতা। আলাপ-আলোচনার সুযোগ করে দেয়া।’বাংলামেইল
মন্তব্য চালু নেই