কুড়িগ্রামে চরের বালু জমিতে উচ্চ পুষ্টির মিষ্টি আলু চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে চরের বালু জমিতে উচ্চ পুষ্টি সমৃদ্ধ কমলা রংয়ের মিষ্টি আলু চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। বন্যা পরবর্তী সময়ে এবারই প্রথম এ আলু চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে পতিত বালু জমিতে চাষ হচ্ছে উচ্চ পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ কমলা রংয়ের মিষ্টি আলু। বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বারি-৪ ও ৮ জাতের মিষ্টি আলু চাষ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন এখানকার কৃষকরা। এই মিষ্টি আলু বেকারীসহ বিভিন্ন খাবার তৈরীতে ব্যবহার হওয়ায় বাজার মুল্যও ভাল পাচ্ছেন তারা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা, পাঁচগাছী ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার প্রায় ৫০ একর চরের বালু জমিতে এবারই প্রথম মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে। আন্তর্জাতিক আলু কেন্দ্রের সহায়তায় ১৩শ কৃষক নিজেরাই নার্সারীর মাধ্যমে আলুর চারা উৎপাদন করে জমিতে লাগিয়েছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে পতিত এসব জমিতে ১শ ২০ দিনের মধ্যে এ ফসল ঘরে তুলে একই জমিতে অন্য ফসল লাগাতে পারছেন তারা। এতে করে চরাঞ্চলের কৃষকরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি অনাবাদী বালু জমিতে বাড়ছে বিভিন্নমুখী ফসলের পরিধি। উৎপাদিত এই আলু নিজেদের চাহিদা মেটানোর পরও ভাল দামে বিক্রি করতে পারায় খুশি চরাঞ্চলের কৃষকরা।
স্বল্প খরচের এ আবাদে বেশী লাভ হওয়ায় আগামীতে বন্যা পরবর্তী সময়ে ব্যাপক পরিসরে মিষ্টি আলু চাষের কথা ভাবছেন চরাঞ্চলের অন্যান্য কৃষকরা।
সদর উপজেলার টাপু ভেলাকোপা গ্রামের কৃষক আজিজুল হক জানান, চরের এই বালু জমিতে মিষ্টি আলু চাষ এত ভালো হবে তা জানা ছিল না। আর্ন্তজাতিক আলু কেন্দ্রের সহযোগীতায় স্বপ্ল খরচে বালু জমিতে কমলা রংয়ের মিষ্টি আলু চাষ করে প্রতি শতক জমিতে ৪ মন আলু পেয়েছি। প্রতিকেজি আলু স্থানীয় বাজারে ২০ টাকা দরে বিক্রি করছি।
সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর মাঝের চর গ্রামের কুদ্দুস আলী জানান, বন্যা পরবর্তী সময়ে চরের এসব বালু জমি পড়ে থাকতো। এবার স্বল্প পরিসর জমিতে মিষ্টি আলু লাগিয়েছি। ছেলে-মেয়েদের খাওয়ানোর পরও ভালো লাভ হয়েছে। আগামীতে বেশি পরিমান জমিতে চাষ করবো।
আর্ন্তজাতিক আলু কেন্দ্রের কুড়িগ্রাম মাঠ সমন্বয়কারী কৃষিবিদ মোঃ মহিদুল হাসান জানান, পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এই আলু সিদ্ধ ও রান্না করে খাওয়ায় পাশাপাশি চিপস, চানাচুর, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বেকারীর মাধ্যমে তৈরী করে বাজারজাত করা হচ্ছে। এতে করে কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকার প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর চরাঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে কমলা রংয়ের মিষ্টি আলুর চাষ ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক, কৃষিবিদ মোঃ মকবুল হোসেন জানান, চরের অনাবাদী বালু জমিতে ক্যারোটিন জাতীয় ভিটামিন সমৃদ্ধ এ আলু চাষ ও বাজারজাত করতে আর্ন্তজাতিক আলু কেন্দ্রের পাশাপাশি কৃষি বিভাগ চরাঞ্চলের কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। যাতে করে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলু দিয়ে পরিবারের ভিটামিনের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে সংসারের আয় উন্নতি করতে পারে। তাছাড়া এ আলুর চাষ জেলার প্রায় ৪শতাধিক চরে পৌছে দিতে পারলে কৃষকদের ভাগ্যের আমুল পরিবর্তন হবে।
জেলার নদ-নদীর অববাহিকার প্রায় ৪ শতাধিক চরের পতিত জমিতে উচ্চ পুষ্টি সমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে একদিকে যেমন লাভবান হবেন কৃষক অন্যদিকে মিটবে বিপুল সংখ্যক মানুষের পুষ্টির চাহিদা।
মন্তব্য চালু নেই