কুমিল্লা নির্বাচন: আলোচনায় নারী ও হিন্দু ভোট

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরও বসবাস এই এলাকায়। তারাই নির্বাচনে জয় পরাজয়ের নিয়ামক হয়ে উঠতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সমর্থকরাও তাদের নির্বাচনী প্রচারে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কৌশল নির্ধারণ করছে।

নির্বাচনে এবার দুই লাখ সাত হাজার ৫৬৬ ভোটারের মন জয়ে নেমেছেন প্রার্থীরা। এদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ দুই হাজার ৪৪৭ জন এবং নারী এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৬৬ জন। অর্থাৎ পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি তিন হাজার।

এই ভোটারদের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায় এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৫৫ হাজার।

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ এবার প্রার্থী করেছে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে। গত ডিসেম্বরেই নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বাজিমাত করেছেন যেসব কারণে তার একটি নারী ভোট। নারী ভোটারদের কেন্দ্রগুলোতে তার অর্ধেক ভোটও পাননি বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত আলী খান। কুমিল্লাতেও নারীদের কারণে নির্বাচনী লড়াইয়ে এগিয়ে থাকার আশা করছেন তিনি।

তাই বলে বিএনপির প্রার্থী সদ্য বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু পিছিয়ে-এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। তিনি যে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের মধ্যেও জনপ্রিয়, ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটেই তার প্রমাণ দিয়েছেন। ওই ভোটে কেন্দ্রগুলোতে পুরুষদের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি বেশি ছিল।

আবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী সীমার নিজ এলাকা হিন্দু পাড়ায়। এই এলাকা থেকে তিনি একাধিকবার কুমিল্লা পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তিনি মেয়র নির্বাচনে দাঁড়ানোয় হিন্দুদের সমর্থন আরও বেশি পাওয়ার আশা করছেন।

বাংলাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। কিন্তু এই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাক্কুর সমর্থকরা দাবি করছেন, ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির কারণে তাদের নেতাও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হিন্দু ভোট টানতে পারবেন।

নারী অধিকার কর্মী ও কুমিল্লা সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক পাপড়ি বসু মনে করেন, গত নির্বাচনের চেয়ে নারীরা এবার জয়-পরাজয়ে বেশি নিয়ামক হবেন। কারণ, এই নির্বাচনে একজন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নারী। যে প্রার্থীর সমর্থকরা নারীদেরকে যত বেশি কেন্দ্রে নিতে পারবেন, সুবিধা পাবেন তারাই।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, ‘আমি একজন নারী, তাই নারীরা আমাকে পছন্দ করবেই। উপজেলা নির্বাচনে আমি নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলাম। ৮০ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলাম। সংরক্ষিত ওয়ার্ডেও নির্বাচন করেছি। সেখানেও নারীরাই আমাকে নির্বাচিত করেছে। আমার সমর্থকদের মধ্যে নারী ভোটারই বেশি।’

তবে পুরুষ প্রার্থী হওয়ার কারণে নারী ভোট কম পাবেন-এটা মানেন না বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনে আমি নারীদের ভোটও তো বেশি হয়েছি। আমার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নারী বলে তিনি নারীদের ভোট বেশি পাবেন- এমন নয়। নারায়ণগঞ্জে মেয়র আইভী ভোট পেয়েছেন নারী হওয়ার কারণে নয়, তার কাজের কারণে। তাঁর কাছে সেখানকার মানুষ নিরাপত্তা পায়, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেউ চাঁদা নেয় না। আর এখানে ধানের শীষের ভক্ত নারী বেশি। তারা আমাকে সমর্থন করবে।’

ধর্মীয় সংখ্যালঘু ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটারের কারণেও এগিয়ে থাকার আশায় নৌকার প্রার্থী সীমা। তিনি বলন, ‘আমি ঠাকুরপাড়া সংখ্যালঘুদের সঙ্গে বড় হয়েছি। তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছি, বিপদে সাধ্যমত সহায়তা করেছি। আবার আমার দলীয় প্রতীক নৌকা, নৌকার প্রতি তাদের সমর্থন তো নতুন কিছু না। তারা এবার আরও বেশি কেন্দ্রে যাবেন। তারা যেন নিরাপদে ভোট দিতে পারেন, সেই আস্থার পরিবেশ তো এখন আছে। ভোট দেয়ার কারণে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করার পরিবেশ এখন বাংলাদেশে নেই।’

বিএনপির প্রার্থী সাক্কুর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনে আমি যদি হিন্দুদের ভোট না পেতাম, তাহলে কি জিততে পারতাম? আমি তো কে হিন্দু, কে মুসলমান এই হিসাবে নাগরিকদেরকে দেখি না। তাদের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস আছে, কিন্তু সবাই আমার ভোটার, সবাই আমার এলাকার মানুষ। তাদের কাছে আমার দাবি, আমার আবদার কেন কম থাকবে?।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ড সংখ্যা ২৭টি| ৬৫টি কেন্দ্রের ৪২১টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে এবার। এই নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে আগামী বুধবার। এরপর আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামবেন তারা। আর ভোট হবে আগামী ৩০ মার্চ।

২০১২ সালের ৫ জানুয়ারিতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট বর্জন করেছিল বিএনপি। তবে দল থেকে পদত্যাগ করে নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে লড়েন মনিরুল হক সাক্কু। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত আফজল খানকে সহজেই হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।



মন্তব্য চালু নেই