কী ঘটবে সিটি নির্বাচনের পর ?

তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর দেশে কী ঘটবে? এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি সুশীল সমাজ ও সচেতন জনগোষ্ঠীর মধ্যে আবারও আলোচনা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। কেউ বলছেন, দেশ আবারও গত ৫ জানুয়ারি পরবর্তী অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। আবার কারও মতে, বিএনপি কিছুই করবে না। কারণ তাদের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সেই সক্ষমতাই নেই। জোটের মেরুদণ্ড সরকার ভেঙে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এমন ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, আন্দোলন করার মতো কোমরে জোর বিএনপির নেই।

এ মুহূর্তে বাস্তবতাও হল; বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। দল ও জোটের হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে আছে। কারাগারে রয়েছে দলটির মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাও। বাকিরা পুলিশের ভয়ে ঘরছাড়া। সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ আবারও তাদের গ্রেফতার অভিযানে নেমেছে। ফলে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করলেই যে কর্মীরা রাজপথে নামবেন এমনটি কেউ মনে করেন না।

কিন্তু এসব সত্ত্বেও বিএনপিকে নিয়েই সরকারে উদ্বেগ। সার্বক্ষণিক এই দলটিকেই নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের তৎপরতা চলছে। এর কারণ কী? পর্যবেক্ষকদের মতে, এর কারণ হচ্ছে বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করা গেলেও জনপ্রিয়তা কমানো যায়নি। আর কমানো যায়নি বলেই সরকারে এতো উৎকণ্ঠা। সিটি নির্বাচন নিয়ে স্বয়ং সরকার প্রধানকেই মুখ খুলতে হচ্ছে। প্রশাসনিকভাবেও নানা দিক থেকে কাবু করার চেষ্টা চলছে বিএনপিকে। ফলে বিএনপি এখন না পারলেও কখনই আন্দোলন করতে পারবে না–এ বিষয়ে নিশ্চিত নয় সরকার। পাশাপাশি যে কোনও সময় ন্যূনতম সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে এমন আলোচনা সরকারের মধ্যে আগেও ছিল; এখনও আছে। আর এ কারণেই সিটি নির্বাচনের পর বিএনপি কী করবে, এ নিয়ে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে।

বিএনপির ভাবনায় যা আছে:

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, সিটি নির্বাচনে জয় এবং পরাজয় দুই ধরনের সম্ভাবনাই বিবেচনায় রাখছে বিএনপি। দলটির নীতি-নির্ধারকরা নিশ্চিত যে, সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে নির্বাচন হলে তাদের সমর্থিত প্রার্থীরাই জয়লাভ করবে। পাশাপাশি সরকার ইচ্ছে করলে তিন সিটি’র মধ্যে একটি বা দুটি বিএনপিকে ছেড়ে দিতে পারে। আবার ‘সুবিধা’ মনে না করলে সব ক’টি সরকার নিয়ে যেতে পারে, এমন আলোচনাও দলটির মধ্যে আছে।

এমন পরিস্থিতি ঘটলে বিএনপি কী করবে জানতে দলটির বেশিরভাগ নেতা জানিয়েছেন; তারা একদিন বা বড়জোর হলে দুদিনের হরতাল দিতে পারেন। এর বাইরে বেশি কিছু নয়। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, সিটি নির্বাচন ইস্যুতে সরকার পতনের মতো পরিস্থিতি তারা সৃষ্টি করতে পারবেন না। তাছাড়া সরকার পতনের মতো ইস্যুও সেটি নয়। সরকার জোর করে সবগুলো সিটিতে তাদের মেয়র প্রার্থীদের জিতিয়ে আনলে কৌশলগতভাবে বিএনপি লাভবান হবে। কারণ দেশের জনগণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহল দেখার সুযোগ পাবে যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ফলে সিটি নির্বাচনকে তারা এখনকার নয়; ভবিষ্যতের সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের ইস্যু বানাতে চায়। তাই আপাতত তারা ওই ইস্যুতে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার পক্ষপাতী নয়। তারচেয়ে সংগঠন গুছিয়ে আগামী নভেম্বর থেকে নতুন করে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ছক তৈরি করতে চায় বিএনপি। তার আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে জনসভার মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে চায় দলটি। এরপর জাতীয় কাউন্সিল করে দলকে পুরোপুরি গুছিয়ে মাঠে নামতে চান তারা। ফলে সিটি নির্বাচনের পরেও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

সতর্ক কৌশল সরকারের:

এদিকে, সরকার পক্ষও ধরে নিয়েছে, বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে না। কিন্তু তিন সিটি নির্বাচনেই বিএনপি জয়লাভ করলে তার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আবার তিনটিই যদি সরকার সমর্থকরা পেয়ে যায় জনগণের মধ্যে এর ‘নেতিবাচক বার্তা’ যায় কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে সরকার চায় ‘শাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙে।’ সিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কোন ইস্যু যাতে বিএনপি তৈরি করতে না পারে সেদিকেও দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।

ফলে বিএনপির আন্দোলনের ব্যাপারে সরকারের কৌশল হল; দলটি যেনো মাথা সোজা করে দাঁড়াতে না পারে। এজন্য আন্দোলন ছেড়ে সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া সত্ত্বেও কারাগারে থাকা দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মুক্তির ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কমানো হয়নি পুলিশি হয়রানিও। উপরোন্তু নির্বাচনে প্রচারণার সময় মোট চার দফা খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে। যদিও এ হামলার ঘটনায় সরকারের রাজনৈতিকভাবে কোনও লাভ হয়নি বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। তাদের মতে, বাসে পেট্রোল বোমায় মানুষ মারার ঘটনায় বিএনপির গত তিনমাসে যে ক্ষতি হয়েছিলো; ওই ঘটনায় বিএনপি আবার তা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে। খালেদা জিয়া জনগণের সহানুভূতি পেয়েছেন। তবে আন্দোলন গড়ে তোলার মতো অবস্থায় খালেদা জিয়া নেই বলে সরকার পক্ষও মনে করে। তা সত্ত্বেও বিএনপির প্রতিটি পদক্ষেপের দিকে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে সিটি নির্বাচনের পরেও বড় ধরনের আন্দোলনের সম্ভাবনা নেই বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। বাংলা ট্রিবিউন



মন্তব্য চালু নেই