কিস্তিতে গরুর মাংস বিক্রি!
কিস্তিতে ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোবাইল বিক্রি হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। পাশাপাশি দেশের বাইরে ভ্রমণেও কিস্তিতে সুযোগ করে দিচ্ছে বিভিন্ন ট্র্যাভেল এজেন্সি। কিন্তু কিস্তিতে গরুর মাংস বিক্রি করার কথা শোনা গেল এবারই প্রথম।
ভারত থেকে গরুর মাংসের পাচার ও কম মূল্যে বিক্রি ঠেকাতে কিস্তিতে কেনার এই সুযোগ করে দিচ্ছেন খোদ গরুর মাংস বিক্রেতারাই (কসাই)। আর এই সুবিধা পাচ্ছেন নিম্ন আয়ের লোকজন। সম্প্রতি এই অভিনব কায়দায় এভাবেই মাইকিং করে গরুর মাংস কিস্তিতে বিক্রি করছেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কাটলা হাট ও বাজারের মাংস বিক্রেতারা।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে কাটলা বাজারে গেলে কয়েকজন গরুর মাংস বিক্রেতা জানান, বর্তমান বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৪০০ টাকা। যাঁরা এককালীন দাম পরিশোধ করে মাংস কিনতে পারছেন না, তাঁদের জন্য দেওয়া হচ্ছে বিশেষ সুবিধা। থাকছে তিন সপ্তাহে মূল্য পরিশোধের সুযোগ। এক কেজি গরুর মাংস কিনলে প্রথমে ২০০ টাকা জমা এবং পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে মূল্য পরিশোধ করতে হবে অবশিষ্ট ২০০ টাকা। এভাবে দুই কেজি কিনলে প্রথম কিস্তি ৪০০ টাকা, আর বাকি টাকা তিন সপ্তাহে পরিশোধ করতে হবে।
কাটলা বাজারে মাংস কিনতে আসা মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘কিস্তিতে গরুর মাংস বিক্রির ঘটনা এলাকায় এই প্রথম। বাড়িতে অনুষ্ঠান। তাই চার কেজি মাংস কিনে জমা দিয়েছি ৮০০ টাকা।’ অবশিষ্ট টাকা তিন সপ্তাহে পরিশোধ করা হবে বলে জানান তিনি।
আরেক ক্রেতা সুবহান মণ্ডল বলেন, ‘দিনে দিনে যেভাবে গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে কেনার কথা ভাবাই যায় না। এখন কিস্তিতে কিনতে পাচ্ছি। আমার মতো অসচ্ছল মানুষদের জন্য খুব ভালো হয়েছে।’
মাংস বিক্রেতা নেজাবুল ইসলাম জানান, সীমান্তবর্তী কাটলা বাজারে যেভাবে ভারতীয় গরুর মাংসের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, তাতে সপ্তাহের শুক্রবার ও সোমবার এই দুটি হাটে দেশীয় গরুর মাংস বিক্রি হয় দেড় থেকে দুই মণ। ভারতীয় এক কেজি গরুর মাংসের দাম ২০০ টাকা। কিন্তু দেশীয় এক কেজি গরুর মাংসের দাম পড়ে ৪০০ টাকা। তাহলে কি ক্রেতারা বেশি দাম দিয়ে মাংস কিনবে, যেখানে কম দাম পাবে সেখানেই তো কিনবে। তাই লোকসানের আশঙ্কায় তাঁরা ক্রেতাদের কাছে কিস্তিতে মাংস বিক্রির এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাতে বেশ সাড়াও পাচ্ছেন।
কাটলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নাজির হোসেন বলেন, ভারত থেকে রোগাক্রান্ত গরুর মাংস পাচার হয়ে সীমান্তবর্তী কাটলা বাজারসহ বিভিন্ন গ্রামে আসছে। এরপর অসাধু লোকজন এসব মাংস ফেরি করে বিক্রি করছে। গরু সুস্থ না অসুস্থ তা যাচাই না করেই ক্রেতারা কম দামে কিনছেন ভারতীয় গরুর মাংস। প্রতিদিন পাচার হয়ে আসা গরুর মাংসের দামের প্রভাবটা স্থানীয় বাজারে পড়ায় মাংস বিক্রেতারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ কারণেই তাঁরা মাংস কিস্তিতে বিক্রির এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই