‘কিছুই জানতে চাই না, শুধু স্বামীকে ফেরত চাই’
প্রায় দুই মাস ধরে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ফিরে পেতে আবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।
শনিবার বিকালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আগেও বলেছি, এখনো বলছি, প্রায় দুই মাস আগে আমার স্বামীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। এখনো আমরা তার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। কেন আমার স্বামীকে তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) আটক করে রেখেছে, সে কোথায় আছে কিছুই আমি জানতে চাই না।
“আমি আবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত আবেদন জানাব, আমার স্বামীকে অক্ষত অবস্থায় আমার কাছে, আমার বাচ্চাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে ব্যবস্থা নিন।”
বিএনপির অবরোধের মধ্যে গত১০ মার্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে তুলে নিয়ে যায় বলে তার পরিবারের অভিযোগ।
স্বামীর খোঁজে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে গত ৭ এপ্রিল ও ১৯ মার্চ দুই দফায় স্মারকলিপি দেন হাসিনা আহমেদ। উচ্চ আদালতে রিট আবেদনও করেন তিনি ।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আদালতে বলা হয়েছে, পুলিশ সালাহউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেনি। তার কোনো খোঁজও পাওয়া যায়নি।
সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সহমর্মিতা জানাতে শনিবার বিকালে গুলশানে তার বাসায় যান বিএনপির এক দল নেতা।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম ও শামসুল আলম তোফা ওই দলে ছিলেন।
২০১২ সালে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তার হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। ইলিয়াস রহস্যের মীমাংসা গত তিন বছরেও হয়নি।
স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়ে হাসিনা আহমেদ বলেন, “আমি অতীতের দিকে ফিরে তাকাতে চাই না। কেন আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে, এ নিয়ে আমি প্রশ্ন করব না। আমি শুধু আমার স্বামীকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত চাই। তিনি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।”
বিএনপি নেতারা হাসিনা আহমেদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন।
বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “দেশের মানুষের নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব সরকারের। দলের একজন যুগ্ম মহাসচিব এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাবেন, রাষ্ট্র ও সরকার ৫৩ দিনেও কোনো সন্ধান দিতে পারবে না। এটা কল্পনাতীত। আমরা আবারও দাবি করছি, অবিলম্বে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে তার পরিবারের কাছে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হোক।”
সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহ উদ্দিন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে কক্সবাজারের সংসদ সদস্য হন এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার স্ত্রী হাসিনাও সংসদ সদস্য ছিলেন।
দশম সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে পুলিশি বাধায় কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হয়ে সারা দেশে লাগাতার অবরোধের ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরদিন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতি পাঠিয়ে অবরোধের পাশাপাশি হরতালের ডাক দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। মাসখানেকের মাথায় রিজভী গ্রেপ্তার হলে দৃশ্যপটে আসেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
তার নামে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে অবরোধ-হরতাল পালনের আহ্বান জানানো হয়। এর প্রায় এক মাস পর একরাতে সালাহ উদ্দিনকে পুলিশ পরিচয়ে ধরে নেওয়ার অভিযোগ করেন তার পরিবারের সদস্যরা।
মন্তব্য চালু নেই