কারো ‘ঐক্য ঐক্য’ বলে যায় বেলা, কেউ পরগাছা!
ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম আর এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা, এখনও ঐক্যের খোঁজে বড় থেকে ছোট কোনো দলের দরজায় কড়া নাড়তে বাদ রাখছেন না। তবে একদিক মিলেতো অন্যদিক মেলে না। কাদের সিদ্দিকী বা আ স ম রবের মতো নেতাদের এই বিশ্বাস করেন তো এই অবিশ্বাস করেন!
আর ২০ দলীয় জোটে থাকা কর্নেল অলি আহমদ তার ‘ছোট’ দলকে বিলীন না করে এভাবেই বিএনপির সাথে আপাতত দিন পার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গণফোরাম, বিকল্পধারা ও এলডিপির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে গত কয়েকদিন কথা বলে জানা যায়, এই তিন দলে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল ও ‘ওয়ান ম্যান শো’ অবস্থার কারণে চলছে অস্থিরতা।
গণফোরাম
গণফোরামের নেতাকর্মীরা এখন আর আগের মতো গণমানুষের বড় দল বা জোট হবার স্বপ্ন দেখছে না। দলেরই উচ্চ পর্যায়ের নেতারা পরিবর্তন ডটকমের কাছে স্বীকার করেছেন, তাদের দল মিডিয়াভিত্তিক একটি দলে পরিণত হয়েছে। মিডিয়া কাভারেজ দিলে দল আছে, নইলে নাই। তাও আবার গণফোরামের যেসব অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেন উপস্থিত থাকেন সেটা শুধু মিডিয়া কাভারেজ পায়। এমন একটি উদাহরণ তুলে ধরে গণফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম খান কামাল আক্ষেপের সুরে বলেন, গত ১৩ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গণফোরামের আলোচনা অনুষ্ঠানের খবর পরদিন কোনো পত্রিকায় দেখতে পাইনি কেবল ডক্টর কামাল ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন না বলে।
ড. কামালের সাথে প্রায় সতেরো বছর টানা রাজনীতি করেছেন দলত্যাগী সাবেক মহাসচিব পংকজ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমার সাথে ড. কামালের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে আলোচনা চলছে। তিনি গত তিন দশকের মতো এখনও জাতীয় ঐক্য নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। গণফোরাম ভুল পথ ছেড়ে আসলে একসাথে চলা সম্ভব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ড. কামাল হোসেনের অতি ঘনিষ্ঠ একজন জানান, তিনি এই আশি বছর বয়সে এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে চান না, যাতে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। গণফোরাম সূত্র নিশ্চিত করেছে এ কারণেই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ড. কামালের বাসায় আনার জন্য এ কিউ এম বদরুদ্দোজার একটি উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। খালেদা জিয়াকে যেদিন ড. কামালের বাসায় আনার কথা ছিল, তার আগের দিন জানতে পেরে তাকে (কামালকে) অপ্রস্তুত না করার জন্য বি চৌধুরীকে অনুরোধ করেছিলেন ড. কামাল।
ড. কামালের দৃশ্যমান কোনো ঐক্যের উদ্যোগ না থাকায় তার দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন বা তাকে ছেড়ে গেছেন। গণফোরামের কর্মীরাই বলছেন ড. কামাল সর্বজন গ্রহণীয় সম্মানিত একজন ব্যক্তি ও দেশের সম্পদ। কিন্তু তিনি রাজনৈতিক দল পরিচালনার যোগ্য নন। বছরের প্রায় অর্ধেক সময়ই তাকে ব্যক্তিগত কাজে দেশের বাইরে থাকতে হয়।
গণফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ মফিজুল ইসলাম খান কামাল জানান, ৯৩ সালে গণফোরাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারা যে কথা বলছেন এখনও তাই বলেন।
রাজনীতি করার মতো খরচ গণফোরামের এখন আওতার বাইরে বলে মফিজুল ইসলাম স্বীকার করেন। তিনি জানান, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর অবসরপ্রাপ্ত আব্দুল মান্নানের সাথে গণফোরামের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। সম্প্রতি জাতীয় ঐক্য নিয়ে মেজর মান্নান ও কাদের সিদ্দিকীর সাথে গণফোরামের একান্ত বৈঠক হয়েছে বলেও জানান মফিজুল।
বিকল্প ধারা কাকে বিশ্বাস করে?
বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে দুলছে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারাও। বিকল্পধারা চোখ বুজে বিশ্বাস করা যায় এমন কোনো মিত্র পাচ্ছে না। আবার বিকল্পধারা ও বি চৌধুরীকেও কেউ সহজে বিশ্বাস করছে না।
জানা যায়, বিএনপির সাথে সিটি করপোরেশন নির্বাচন কেন্দ্রিক মন কষাকষির পর এখন আবার দর কষাকষি চলছে। যথাযথ মূল্যায়ন পেলে বিকল্পধারার বিএনপিতে বিলীন হতে খুব বেশি আপত্তি নেই বলে জানান বি চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজনরা। তবে এ নিয়ে দলে এরইমধ্যে দুই ধারা তৈরি হয়েছে। এমনকি দলের মহাসচিব মেজর অবসরপ্রাপ্ত আব্দুল মান্নানের সাথে দলীয় প্রধানের দূরত্বও বেড়েছে। এ বিষয়ে আব্দুল মান্নানের বক্তব্য জানার জন্য একাধিক দিন একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, স্যারকে জানানো হয়েছে, উনি সময়মতো আপনাকে ফোন করে বক্তব্য জানাবেন।
দলের একটি অংশ চাচ্ছে ড. কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আব্দুর রবসহ ছোট ছোট দল নিয়ে আলাদা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে।
যদিও বিকল্পধারার সাথে ঐক্য প্রসঙ্গে গণফোরাম নির্বাহী চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম খান কামাল বলেন, জিয়ার আদর্শে উদ্বুদ্ধ সাতাশি বছর বয়সী বি চৌধুরীকে বিশ্বাস করা কঠিন। একবার কাদের সিদ্দিকী, একবার ড. কামাল আবার কখনও খালেদা জিয়ার সাথে ঘেষেন বি চৌধুরী। খালেদা জিয়া বা খালেদাঘেষা কারো সাথে গণফোরামের ঐক্য হবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বি চৌধুরীর একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বলেন, বিকল্পধারা বিলীন তো হবেই না। আর বিএনপির সাথে কখনোই যাবে না। বরং খালেদা জিয়াকে বিকল্পধারার গঠন করা নতুন জোটে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে।
কর্নেল অলি : এক দল এক নেতা
আপাতত ২০ দলীয় জোটে বিএনপির ছায়াতলে থাকাই নিরাপদ মনে করছে কর্নেল অলি আহমদের দল এলডিপি। সরকারের সাথে দূরত্বের কারণে যেকোনোভাবেই হোক নিজেকে আগে রাজনীতির মাঠে টিকিয়ে রাখতে চান কর্নেল অলি।
কর্নেল অলি বলেন, ‘এলডিপি বিলুপ্ত করে বিএনপিতে ফিরে যাবার আমার কোনো ইচ্ছে নেই।’ জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে তিনি তেমন আশাবাদী নন বলেও জানান।
এলডিপি চেয়ারম্যান জানান, জামায়াতের সাথে এক টেবিলে বসে রাজনীতি করতে তার এখন তেমন কোনো অসুবিধা নেই। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝি আমার অবস্থা ভালো হতে পারে কিন্তু আমার দলের অবস্থা ভালো না, এটা বাস্তবতা।’ দল টিকিয়ে রাখা ও বড় করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলেও জানান কর্নেল অলি।-পরিবর্তন ডটকম
মন্তব্য চালু নেই