শ্রমিক দলের কাউন্সিলে খালেদা জিয়া

কারও নির্দেশে নয়, সময় হলেই আন্দোলন হবে

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘কারও নির্দেশে নয়, সময় হলেই আন্দোলন হবে। ’তিনি বলেন, ‘জনগণ প্রস্তুত হয়ে আছে। সংগঠনের প্রস্তুতি চলছে। সংগঠন প্রস্তুত হলেই আন্দোলন।’ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন বেগম খালেদা জিয়া।
ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি রিহান আলীর সভাপতিত্বে কাউন্সিলে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি নজরুল ইসলাম খান, সাবেক সভাপতি ও বর্তমান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, স্থায়ী কমিটির সদ্য  ড. আবদুল মঈন খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শ্রমিকদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি নজরুল ইসলাম খান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুল মান্নান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জাফরুল হাসান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
মহানগর শ্রমিকদলের কাউন্সিল অধিবেশন উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিভিন্ন শ্রমিক নেতাদের ছবি নিয়ে সকাল থেকেই অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত হয়।
আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে যারা টিটকারি করছেন তাদের উদ্দেশে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘এখনও সময় আছে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। বেশি দেরি হলে, জুলুম নির্যাতনের মাত্রা বাড়লে এর পরিণতির জন্য দায়ভার আপনাদেরই নিতে হবে। এরজন্য এদেশের জনগণ কিংবা আমরা দায়ী থাকবো না।
’সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী সরকারের কিছুটা প্রশংসাও করেন।
তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপ ভালো হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপ মোটামুটি ভালো হয়েছে। কিন্তু তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিরোধী প্রার্থীরা অংশ নেয়ার সুযোগ পায়নি। তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে।’
সম্প্রতি দেশে সোনা চোরাচালানের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘সোনার বাংলায় সোনার ছেলে বসে আছে। দেশে সোনা চোরাচালান হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব সোনা ধরা পড়ছে। এতো সোনা যাচ্ছে কোথায় ? কেউ তো ধরা পড়ছে না। এসব কারণে দেশে মাদক বেড়েছে। দুর্নীতি বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৪ ঘন্টায় ৩৬ লাশ পাওয়া গেছে। এসব লাশ পাওয়া যাচ্ছে নদী ডোবায়। অনেকের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। অনেকের পরিচয় মেলে না। দেশের গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র এখন বিপন্ন। গণতন্ত্রের কবর রচনা হয়েছে ৫ জানুয়ারিতে।’
তিনি বলেন, ‘সারাদশে কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা হচ্ছে। সংগঠনকে গতিশীল করতে নতুন নেতৃত্ব দরকার। যখন সময় হবে তখন আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। আর চোখের পানি ফেলে লাভ নেই। এই জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসতে হবে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ করতে।’
বেগম জিয়া বলেন, ‘দেশে এখন লুটপাট, চোরাচালান ও মাদক ব্যবসা চলছে। যুব সমাজকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এটা কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে চলতে পারে না। এসব অবৈধ সরকারের নমুনা।’
শিক্ষাঙ্গণে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্রলীগের গুন্ডারা দখল করে নিয়েছে। হলে আমাদের ছেলেদের থাকতে দেয় না। হলগুলো দখল করে সেখানে বসে তারা খুন, গুম, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান টেন্ডারবাজী করছে। আওয়ামী লীগ এদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। কারণ, এর সঙ্গে তারা জড়িত বলেই তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না।’
সরকার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যর্থ হচ্ছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘মেধাবী ছেলেরা আজ চাকরি পাচ্ছে না। পাবলিক সার্ভিস কমিশন নামে যে একটি সংস্থা আছে তারাও কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। দলীয় পরিচয়ে আওয়ামী লীগের লোকদের চাকরি দেয়া হচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও যোগ্যতার ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করা হয় না।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘জুলুম অত্যাচার ও দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না। এভাবে দেশ চলতে পারে না।’
শ্রমিকদের দূরাবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘শিল্প কারখানা বন্ধ হচ্ছে। শ্রমিকরা চাকরি হারাচ্ছে। বেকার হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে না।’
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করে ১৮দলীয় জোট নেত্রী বলেন, ‘৫ বছরে সরকার বিদ্যুতের দাম ৬ বার বাড়িয়েছে। এতে করে গ্রাহক বিশেষ করে কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আর লাভবান হচ্ছে কুইক রেন্টাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় স্বজন এবং আওয়ামী লীগের নেতারা। আবার শুনছি গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে।’
সরকারের আচরণে দেশ আজ বিশ্ব দরবারে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তাদের কারণে আজ বিদেশে শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকরা ফেরত আসছে। নতুন করে কোনো দেশে শ্রমিক নেয়া হচ্ছে না।’
প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে এই অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘দেশের সব প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে আবার নতুন করে সাজাতে হবে। দলীয় লোকদের বসিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি অনিয়ম করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনকে কীভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক দুর্নীতি করার কারণে একেবারে নষ্ট করে দেয়া হয়েছে।’
সংসদ সদস্যদের বিষেদগার করে তিনি বলেন, ‘সংসদে জনগণের টাকা খরচ করে গালিগালাজ করা হচ্ছে। মানুষের টাকা নষ্ট হচ্ছে। এখনো মানুষ ধৈর্য ধরে আছে। কিন্তু ধৈর্যের একটা সীমা ও পরিসীমা আছে। তারা আর বসে থাকবে না।’

 



মন্তব্য চালু নেই