কান থেকে তরল নির্গত হলে কখন দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নেয়া প্রয়োজন
কান থেকে বিভিন্ন ধরনের তরল নির্গত হতে পারে যেমন- রক্ত, স্বচ্ছ বা দুধের মত তরল। কানের ময়লা বা এয়ার ওয়াক্স হচ্ছে কানের সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা। এয়ার ওয়াক্স হলুদ থেকে কমলা – বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে এবং এটি কোন স্বাস্থ্যগত সমস্যার সৃষ্টি করেনা। কিন্তু কান থেকে এয়ার ওয়াক্স ছাড়া অন্য যেকোন ধরনের তরল নির্গত হওয়া স্বাস্থ্য সমস্যাকে নির্দেশ করে যার কারণে চিকিৎসা সহায়তা নেয়া প্রয়োজন। কান থেকে তরল নির্গত হওয়ার কারণ এবং করনীয় সম্পর্কে জেনে নিই চলুন।
১। কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার কারণে
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কানের পর্দা বা কর্ণপটহ ফেটে গেলে বা ছিদ্র হলে জরুরী চিকিৎসা সহায়তা নেয়ার প্রয়োজন হয় না। তারপর ও চিকিৎসকের মাধ্যমে চেক করানো উচিৎ। এক্ষেত্রে কান থেকে স্বচ্ছ তরল নির্গত হয়, এছাড়াও রক্তাভ বা সাদাটে হলুদ বর্ণের তরল ও নির্গত হতে পারে। সাধারণত খুব সামান্য পরিমাণে তরল নির্গত হতে পারে।
কর্ণপটহ ফেটে যাওয়ার কারণগুলো হচ্ছে :
· ব্যারোট্রমা (কানের ভেতরের বাতাসের চাপ খুব দ্রুত পরিবর্তন হলে)
· মধ্যকর্ণের সংক্রমণ
· উচ্চমাত্রার শব্দ
· আঘাত (পেন্সিল এর মত সূক্ষ্ম বস্তুর দ্বারা খোঁচা লাগলে বা মাথায় তীব্র বাতাস প্রবাহিত হলে)। এক্ষেত্রে জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসা সহায়তা নিতে হবে।
কানের পর্দা ফেটে যাওয়া বোঝার লক্ষণগুলো হচ্ছে :
· তীব্র কানের ব্যথা হঠাৎ করেই ভালো হয়ে যাওয়া
· কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ হওয়া (টিনিটাস)
· শ্রবণক্ষমতা হ্রাস পাওয়া
· স্বচ্ছ, রক্তাভ বা সাদাটে হলুদাভ রস নির্গত হওয়া
আপনার যদি এই সমস্যাটি হয়ে থাকে তাহলে মনে রাখবেন যে সাধারণত এটি নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। তারপর ও একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। তিনি আপনার কান পরীক্ষা করে দেখবেন এবং প্রয়োজনে কোন সংক্রমণ দেখা গেলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের নির্দেশনা দেবেন। যদি ইতিমধ্যেই সংক্রমণ না হয়ে যায় তাহলে শুধু কানের অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহারের নির্দেশনা দেবেন ভবিষ্যৎ সংক্রমণ এড়ানোর জন্য।
যদি কয়েক সপ্তাহ পরেও আপনার কানের পর্দা নিরাময় না হয় তাহলে কানের পর্দার ছিদ্র মেরামতের জন্য অন্য কোন উপায়ের বিষয়ে চিন্তা করতে হবে, এজন্য একজন নাক,কান, গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজনে তিনি কানের পর্দার ছিদ্র বন্ধ করার জন্য টিম্পেনোপ্লাস্টি করবেন। তিনি ১% টপিকেল সোডিয়াম হায়ালিউরোনেট দ্রবণ ব্যবহার করেও দেখতে পারেন।
২। কানে অনেকবেশি ময়লা জমার কারণে
কান থেকে ময়লা বেরিয়ে আসাটা স্বাভাবিক ঘটনা, এর জন্য চিকিৎসা সহায়তা নেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে কানে অনেকবেশি ময়লা জমে গেলে কানের ভেতরে চাপ ও অস্বস্তি অনুভব হতে পারে এবং এর পাশাপাশি হালকা শ্রবণ সমস্যাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সহায়তা নেয়া যায়।
৩। সংক্রমণের কারণে
কানে সংক্রমণ হলে দুধের মত সাদা বা হলুদ তরল নির্গত হয় এবং এর দুর্গন্ধও থাকতে পারে। কানে ব্যথা ও জ্বরের মত উপসর্গ ও থাকতে পারে। সংক্রমণ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন।
৪। মাথায় আঘাত পেলে
এটি কান থেকে তরল নির্গমনের সবচেয়ে মারাত্মক কারণ এবং দ্রুত চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে স্বচ্ছ বা রক্তের মত তরল নির্গত হয়। যদি আঘাতের কারণে মাথার তালু, মস্তিষ্ক বা স্নায়ুরজ্জু ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে সেরিব্রাল স্পাইনাল ফ্লুয়িড বের হয় যা দেখতে স্বচ্ছ এবং অনেক বেশি পরিমাণে বের হয়। কেউ যদি মাথায় বা ঘাড়ে আঘাত পেয়ে মাটিতে পড়ে যায় তাহলে তাকে খুব বেশি নড়াচড়া করাবেন না, যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে জরুরী বিভাগে নিয়ে যান।
কান থেকে তরল নির্গত হলে যা করা উচিৎ নয়
কানের তরল পড়ার সমস্যার ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় আপনি হয়তো নিজে নিজেই এটি সারানোর চেষ্টা করবেন, কিন্তু এই কাজগুলো কখোনোই করবেন না –
· কান দিয়ে তরল নির্গত হলে ভেজা তুলা বা অন্যকিছু দিয়ে কান অনেকবেশি পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকুন।
· চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কানে কোন ঔষধ ব্যবহার করবেন না।
· তরল পড়া বন্ধ করার জন্য কানের ছিদ্রের মধ্যে গজ বা অন্য কিছু দিয়ে রাখবেন না।
যে ৬ টি কারণে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নেয়া প্রয়োজন
· তীব্র ব্যথা যা কোনভাবেই যায় না
· নিরবিচ্ছিন্নভাবে উচ্চমাত্রার জ্বর থাকলে
· অনেক বেশি পরিমাণে টকটকে লাল রক্ত বেরিয়ে আসলে
· মাথায় অনেক বেশি আঘাত লাগলে
· হঠাৎ করেই শ্রবণক্ষমতা কমে গেলে
· কানে কোন সূক্ষ্ম বস্তুর খোঁচা লাগলে
ব্যথা ও জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যাসিটামিনোফেন সেবন করা যায়। যদি ৫ দিন পর ও তরল নির্গত হওয়া বন্ধ না হয় তাহলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মারাত্মক কোন সমস্যা হয়না, তারপর ও চিকিৎসকে দেখিয়ে নেয়া ভালো।
সূত্র : ভেরি ওয়েল
মন্তব্য চালু নেই