কানে তালা লাগার সমস্যা নিরাময়ে সাহায্য করে অক্সিটোসিন হরমোন
ব্রাজিলিয়ান গবেষকেরা একটি কৌতূহল উদ্দীপক তথ্য জানিয়েছেন, আর তা হল- “যারা কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ হওয়ার সমস্যায় ভুগছেন তাদের এই সমস্যাটির সমাধানে সাহায্য করতে পারে অক্সিটোসিন হরমোন”। অক্সিটোসিন হরমোনকে লাভ হরমোন ও বলা হয়। কারণ এই হরমোন সামাজিক যোগাযোগকে উদ্দীপিত করে।
চারপাশে কোন শব্দ না হলেও যখন কোন মানুষ তার কানে মৌমাছির গুণ গুণ করার মত শব্দ, ঝিঁঝিঁ পোকার মত শব্দ বা হিস হিস করার মত শব্দ শোনে তখন তাকে টিনিটাস বলা হয়। এই গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, যারা টিনিটাসের সমস্যায় ভুগছেন তাদের নাকে অক্সিটোসিন হরমোনের স্প্রে ব্যবহার করলে তারা কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন।
ইউনিভার্সিটি ফেডারেল দে সাও পাওলো এর অটোল্যারিঞ্জোলজি বিভাগের প্রধান গবেষক আন্দ্রেইয়া অ্যাজেভেডো হেলথ ডে ডট কমকে বলেছেন যে, “অক্সিটোসিন হরমোন মস্তিষ্কের কাজের এবং কানের টিনিটাসের চিকিৎসায় সাহায্য করে এবং অবিলম্বে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেও সাহায্য করে”। কিন্তু ১ জন শ্রবণ বিশেষজ্ঞ এই বিষয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছেন।
অ্যাজেভেডো বলেন, কীভাবে অক্সিটোসিন টিনিটাস উপশমে কাজ করে সে বিষয়টি পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায়নি। তিনি অনুমান করেন যে, সম্ভবত কানের মধ্যকর্ণের তরলের উপর প্রভাব বিস্তার করে এই হরমোন এবং মস্তিষ্কের উপর এর যে প্রভাব পরে তা সম্ভবত নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামিনের উৎপাদনের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।
কিছু রোগীর ক্ষেত্রে টিনিটাস অদৃশ্য হয়ে যায় অথবা কম চাপের স্তরে পৌঁছে যায়। অ্যাজেভেডো বলেন, ‘সাধারণত কিছু রোগীর ক্ষেত্রে টিনিটাসের সমস্যা কমে যায় এবং কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ঔষধ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেই আবার বৃদ্ধি পায় সমস্যাটি”।
অক্সিটোসিন এর ব্যবহারকে নিরাপদই মনে করা হয়। এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে জানা যায়নি।
গবেষক দলটি আরো গবেষণা করছেন অক্সিটোসিনের প্রতিক্রিয়ার উপর। নতুন গবেষণায় ১৭ জন টিনিটাসের রোগীর যাদের গড় বয়স ৬৩ তাদের একদলের নাকে অক্সিটোসিন হরমোন স্প্রে করেন এবং অন্য দলের রোগীদের নাকে প্লাসিবো বা ডিস্টীল ওয়াটার স্প্রে করেন। স্প্রে করার ৩০ মিনিট পরে অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞেস করা হয় তাদের অনুভূতির বিষয়ে। এর ২৪ ঘন্টা পরে আবার ও তাদের এই স্প্রে দুটো প্রয়োগ করা হয়। গবেষক দলটি দেখতে পান যে, রোগীদের যে দলটিকে অক্সিটোসিন হরমোন স্প্রে দেয়া হয়েছিলো তাদের টিনিটাসের সমস্যা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই কমেছে অন্য দলটির তুলনায় যাদের প্লাসিবো দেয়া হয়েছিলো।
গবেষকেরা বলেছেন যে, এই ছোট পরিক্ষাটির ফলাফল দিয়েই চিকিৎসায় অক্সিটোসিন ব্যহহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া তাৎপর্যপূর্ণ নয়।
এছাড়াও এই হরমোনটির কিছু তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করতে পারে যেমন- অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন হওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া, অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া, শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া।
আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সিটির লিনক্স হিল হসপিটাল এবং ম্যানহাটন আই, এয়ার এন্ড থ্রট হসপিটাল এর অটোলজি বা নিউরোটোলজি এর প্রাধান ডারিওস কোহান বলেন, “টিনিটাসে আক্রান্তদের নিরাময়ের আশায় অক্সিটোসিন হরমোন ব্যবহার শুরু করে দেয়া উচিৎ নয়”।
অ্যাজেভেডো বলেন, “আমরা আশা করছি এই ট্রায়েলের ফলে এই ঔষধটির ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে”। আমেরিকান একাডেমী অফ অটোল্যারিঞ্জোলজি এর হেড এন্ড নেক সার্জারি ইন সানডিয়াগো এর মিটিং এ এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
মন্তব্য চালু নেই