কাজ না করলে খাবো কী ?
আদর¯স্নেহ ভালোবাসা কথাটির অপর নাম শিশু। সুন্দর সেই ছোট্ট মুখ খানা দেখলেই অনন্দে ভোরে ওঠে অনেকের। মনে হয় কোলে তুলে নিই। ১২জুন শুক্রবার ছিল বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবস। দেশে শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে অল্প বয়সী এসব শিশু অমানবিক পরিশ্রম করছে। দিবস থাকলেও আমরা শুধু পালন করি, তা মানিনা। এ দিবস শুধু কাগজে কলমে শিমা বদ্ধো। শিশুশ্রম দেখলেও তা প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা নাই।
২০০১ সালের মার্চ মাসে সরকার আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার ১৮২ নম্বর ধারায় অনুসমর্থন দেয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সে বছরই জাতীয় শিশুনীতি প্রণয়ন শুরু করে। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ ধারায় শিশুদের সুবিধাপ্রাপ্তি সংক্রান্ত বিশেষ বিধান রয়েছে। শ্রম আইন-২০০৬ অনুসারে কাজে যোগদানের ন্যূনতম বয়স হচ্ছে ১৪ বছর আর ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে তা ১৮ বছর। ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সের মধ্যে হালকা কাজ করলে সেটাকে ঝুঁকিমুক্ত কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা তাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে না।
এদিকে, শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৩৪ ও ৩৫ অনুযায়ী ১৪ বছরের কোন শিশুকে কাজে নিয়োগ করা যাবে না। সেখানে আরও বলা হয়েছে শিশুর পিতা-মাতা কিংবা অভিভাবক শিশুকে দিয়ে কাজ করানোর জন্য কারও সাথে কোনো চুক্তি করতে পারবে না। কিন্তু এইসব নীতিকে পাশ কাটিয়েই শিশুদের নিযুক্ত করা হচ্ছে ঝুকিঁপূর্ণ শ্রমে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শিশুদের অভিবাবকরাই শিশুদের পড়া লেখা বাদ দিয়ে কাজ করতে পাঠাচ্ছেন।
নগরীর সাগর পাড়া এলাকার ১৩ বছর কিশোর মোহাম্মদ রাজুর সংসারে বাবা-মা ভাই বোন মিলে ৫জনের সংসার। কাজ করার মতো বলতে আমিই মা বাড়িতে কাজ করে। বড় সংসার বসে থাকা বা লেখা পড়া করলে তো আর সংসার চলবেনা। তাই বাধ্য হয়ে আমাকে রিকশা চালাতে হচ্ছে। আমি যদি আয় না করি তাহলে হয়তো আমার ছোট ভাই বোনকে না খেয়ে দিন পার করতে হবে।
শুক্রবার সকালে রাজশাহী রেলস্টেশনে দেখা হলো এমনি এক শিশু রাব্বি (১৩) সাথে। বেচে থাকতে হলে কাজ তো করতে হবে। লেখা পড়া করার মত তেমন সুযোগ সে পায় নি। আমার একমাত্র কাজ হল কাগজ কুড়ানো আর রাত হলে ট্রেন যাত্রীদের মালামাল বহন করা। সে বলে আমার পরিবারে তেমন কেউ নেই। কাগজ কুড়িয়ে আর মালপত্র টেনে আমার খাবারের টাকা যোগাড় করি। পড়ালেখা করার বিষয়ে জানতে চাইলে সে বলে, লেখা পড়া তো বড় লোকের ছেলে মেয়েরা করে। পড়াশুনাতো অনেক দূরের কথা আমার থাকার জায়গা টুকুও নেই রাত হলে স্টেশন বা ফুটপাতে শুয়ে থাকি। আমার পড়া লেখা করার অনেক ইচ্ছে কিন্তু কে করাবে বলেন? আর কাজ না করলে খাবো কী?
অপরদিকে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) এর পক্ষ থেকে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালা করা হলেও নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হয় নি এসব ছিন্ন মূল শিশুদের। এদের একটি অংশের প্রতিদিন রাত কাটে রাস্তা ও ফুটপাতে। দেশে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে নানা আইন থাকলেও বেড়েই চলছে শিশুশ্রম।
এ ব্যাপারে হাড টু রিচ এর সাবেক বিভাগীয় প্রধান হাসিবুল হাসান পল্লব বলেন, আজকের শিশু আগামী দিনের ভর্বিষৎ। তরাই তো একদিন এ দেশের নেতৃত্ব দেবে। জাতীয় শিশু নীতি ২০১১ অনুসারে ৫ থেকে ১৮ বছরের শিশু কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে পারবেনা। আর দেশের শ্রম আইন বলছে, ৫ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুশ্রম নিয়োগকর্তার জন্য দন্ডনীয় অপরাধ।
তিনি আরো বলেন, কেবল আইন প্রণয়ন করলেই চলবেনা আইনের প্রয়োগ করতে হবে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিত কাজ করতে হবে এবং সরকারের তরফ থেকে এ শিশুদের জন্য করিগরি স্কুল ও তাদের পূর্ণবাসন কেন্দ্র খোলা হলে এ শিশুরা হয়তো অনেক যতেœ বেড়ে উঠতো।
মন্তব্য চালু নেই