কাজের গতি কমে যাওয়ার মূল কারণ

চাকরির বয়সটা হল বেশ। অফিসের শুরু থেকে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সব কিছুর ছন্দ পতন। ঠিক কবে থেকে এবং কেন এমনটা হচ্ছে বুঝে উঠতে পারছেন না। যখন অনেক বড় ব্যর্থতার মাঝে ঠেকে গেছেন ঠিক তখনই কিছু একটা বুঝলেন। নিজের কাজের প্রোফাইল ঘেঁটে দেখলেন, আগের মতো কাজও করছেন না। কাজের গতি নেই তেমনটা। নতুন কিছু সৃষ্টির ইচ্ছা আগের মতো তাগিদ দিচ্ছে না।

এমনটা হলে অবস্থা বুঝে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। নইলে দীর্ঘদিন এভাবে কম কাজ দিয়ে যেমন অফিসের ক্ষতি করবেন ঠিক তেমনি নিজেকেও অযোগ্য করে তুলবেন। তাই নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা বজায় রাখতে অবশ্যই কাজের গতি কমে যাওয়ার মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। তাই আগেই যাচাই করে দেখুন এই সমস্যা গুলো আপনার আছে কিনা?

কর্ম পরিবেশ

পুরো অফিস জুড়ে যে পরিবেশ বিরাজ করে তাকে মোটুমুটি অর্থে কর্ম পরিবেশ ধরে নেয়া যায়। কিন্তু বিশেষ ভাবে আপনার চেয়ারের আশেপাশে যারা নিয়মিত বসেন, তাদের দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত হচ্ছেন। তাদের কারো যদি অতিরিক্ত গল্প করার অভ্যাস, কাজের বাইরের অন্যান্য জিনিসে বেশি আকর্ষণ অথবা অপরের নামে বদনাম করার অভ্যাস থাকে তবে তা এক সময় আপনাকে গ্রাস করবে। প্রথমে এড়িয়ে চললেও পরে ঠিকই তাল দিয়ে ফেলবেন। সৌহার্দ বজায় রাখতে গিয়ে নিজেই কখন তাদের মতো হয়ে যাচ্ছেন টের পাবেন না। পরে দেখা যাবে কাজের চেয়ে এসব জিনিস প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি।

প্রতিশ্রুতি না রাখা

কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের শুরুতে আপনাকে অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে। তিন মাস বা ছয় মাসের লক্ষ্য স্থির করে কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হল। আপনি সে প্রতিশ্রুতি পেয়ে উৎসাহের সঙ্গে সর্বোচ্চ কাজটি করে যাচ্ছেন। কিন্তু অফিসের বেধে দেয় এই সময়ের দ্বিগুন অথবা তিনগুন পার হলেও তার বাস্তবায়ন দেখছেন না। এতে একটু একটু করে কাজের প্রতি অনীহা জন্ম নিচ্ছে। নতুন কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এমনকি নিজের কাজের গতি রুদ্ধ হচ্ছে, যোগ্যতাও ক্ষয়ে যাচ্ছে। ঠিক এমন সময়ে নিজেই লক্ষ্য করবেন আগের সেই কর্মস্পৃহা আর নেই। অফিস থেকেও আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতে পারে।

একই কাজ করা

এক কাজ বার বার করলে দক্ষতা বাড়ে কিন্তু একঘেয়েমিও থাকে। দীর্ঘদিন একই কাজ করলে শুধু সেই কাজটিই নিপুন ভাবে করতে পারবেন। পরক্ষণে কাজের প্রতি তিক্ততা আসবে। বার বার এক কাজ করতে ভালো লাগবে না। কাজে নতুনত্ব না থাকলে সবকিছু পানসে হয়ে যাবে।

অতিরিক্ত কাজের চাপ

আপনার সুযোগ সুবিধা এবং ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশি চাপিয়ে দিলে তা মানসিকভাবে আঘাত হানবে। অল্প সময়ে বেশি কাজ করলে সুন্দর হওয়া সম্ভব নয়। ব্যর্থতা বেশি আসবে। আর তখনই কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যাবে।

বিনোদনের অভাব

একটানা কাজের ফাঁকে বিনোদন না থাকলে সব কিছুই নিরস খটখটে লাগে। বার্ষিক বনভোজন বা বিশেষ উৎসব উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠান কিছুটা সময়ের জন্য মনকে নিয়ে যাবে বিনোদনের জগতে। মাঝে মাঝে মনে পড়লে একটু দোলায়িত হতে পারেন, তবে কাজের একঘেয়েমি থাকবে না। নতুন করে আবার সব শুরু করতে পারবেন। ভালো ভাবে কাজ করার আগ্রহ পাবেন।

মালিক শ্রমিক দুরত্ব

মালিক পক্ষের সঙ্গে যদি শ্রমিক পক্ষের দুরত্ব বেশি থাকে তবে কাজের স্পৃহা কমে আসতে বাধ্য। কোনো শ্রমিকের সুযোগ সুবিধা, অসুস্থতা বা পারিবারিক-সামাজিক অনুষ্ঠানে ছুটির ব্যবস্থা না থাকলে সে কাজে মন বসে না। নিজের বেতনাদি নিয়েও যদি কারো সঙ্গে কথা বলতে না পারেন তবে হতাশায় ভোগা স্বাভাবিক। আর এ দুরত্ব এক সময় শ্রমিকের কর্মস্পৃহা কমিয়ে দেয়।

অপরের চেয়ে কম সুযোগ

একই সঙ্গে কাজ করছেন অথচ অপরের চেয়ে কম সুবিধা ভোগ করছেন। ছুটি, বেতন, পদোন্নতি সবকিছুতেই যদি আত্মীয় করণ চলে সেখানে একজন শ্রমিকের তার আশা ভরসা হারিয়ে ফেলে। আর এই সময় কাজের আগ্রহ কমে যাওয়া স্বাভাবিক।

কাজের যথার্থ সম্মান না পাওয়া

কাজ করছেন অনেক দিন ধরে। আপনার জন্য অফিসের সুনাম বাড়ছে অনেক বেশি। বা লাভ হচ্ছে উল্লেখযোগ্য পরিবান। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আপনাকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আর এমন সময় কাজের স্পৃহা কমে যাওয়াটায় স্বাভাবিক।

নিজের অবস্থানে সন্তুষ্ট থাকা

আপনি যে পদে, যে বেতনে চাকরি করছেন সেখানেই সন্তুষ্ট। হুট করে চাকরিটা চলে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। আবার সুযোগ সুবিধাও বেশি বেশি পাচ্ছেন, এক কথায় না চাইতেই বেশি পেয়ে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিও আপনাকে কর্ম বিমুখ করে তুলতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই