কাজী অফিসে বিয়ের পর সে আমার গর্ভপাত করায়, কিন্তু কিছুদিন পর সে আরেক মেয়েকে…

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।

“আপু আমি চট্টগ্রাম থাকি, একটা প্রাইভেট বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়ি। আমার বাবা নেই, ছোটবেলা থেকেই মায়ের আদরে মানুষ। দুনিয়া সম্পর্কে বেশি ধারণা কখনোই আমার ছিল না। সাড়ে ৩ বছর আগে একটি ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক হয়েছিল। সে একটা বড় ইন্টারনেট কোম্পানিতে চাকরি করে, চট্টগ্রামের নামকরা লোকের ছেলে, ওদের বাড়ি সন্দ্বীপ কিন্তু চট্টগ্রামে নিজেদের বাড়ি আছে। ওর বাবার দুই বৌ, পরিবারে অনেক সমস্যা। আর সে তাঁর বাবার এক মাত্র ছেলে। সে দেখতেও খুব সুন্দর আর আচার ব্যবহার খুবই ভালো। এক বন্ধুর মাধ্যমে আমাকে দেখে সে পাগল হয়ে যায়। অনেকদিন চেষ্টার পর সবকিছু ভেবে আমি হ্যাঁ বলি। ও সবসময় বলতো যে ওর অনেক কষ্ট, ওর মা অনেক দুঃখী। এগুলো শুনে আমি বেশি দুর্বল হয়ে পড়ি।

সে আমাকে বলেছিল আমি তাঁর প্রথম ভালোবাসা। পরে অবশ্য জেনেছিলাম যে অসংখ্য মেয়ের সাতে তাঁর সম্পর্ক ছিল এবং এখনো আছে। অসংখ্য মেয়ের জীবন সে নষ্ট করেছে। এমনকি একটা আপুর সাথে ৭ বছর লিভ টুগেদার করেছে সে। সেই আপুর গর্ভে একটি সন্তানও হয়েছিল, সন্তানটি পরে মারা যায়। এমনকি নিজের মামাতো, চাচাতো বোনেদের সাথেও তাঁর শারীরিক সম্পর্ক ছিল। যাই হোক, প্রথমে আমি কিছুই জানতাম না, কিন্তু তারপরও বিশ্বাস করতে পারতাম না। সে আমাকে একটা হীরার আংটি দিয়ে উত্তরায় এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে বাগদান করে। বন্ধুরা সবাই সাক্ষী থাকে। সেই রাতে আমারা সেখানেই থাকি ও আমাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হয়।

আমরা চট্টগ্রাম ফিরে আসি। কিছুদিন পর সে আমাকে সিলেট বেড়াতে নিয়ে যায়। আমরা স্বামী স্ত্রী হিসাবে কয়েকদিন থাকি। শারীরিক সম্পর্কের পর সে আমাকে ওষুধ খাওয়ায়। কী ওষুধ আমি বলতে পারি না। যাই হোক, চট্টগ্রাম ফেরার কিছুদিন পর আমি গর্ভবতী হয়ে যাই। আমি খুবই ভয় পাই, কান্না করতে থাকি। ওকে বলি বিয়ে করতে। সে বলে এখন বিয়ে করতে পারবে না। সে আমাকে গর্ভপাত করানোর ওষুধ এনে খাওয়ায়। সেই ওষুধ খাওয়ার পর আমার প্রচণ্ড ব্লিডিং হয়, সে আমাকে ডাক্তারের কাছেও নিয়ে যায়। ডাক্তার বলে এম আর করাতে হবে।

আমি রাজি হই না, বিয়ের জন্য কান্না করি। বলি বিয়ে না করলে গর্ভপাত করাবো না। সে তখন আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। উত্তরার বন্ধুর বাসায় আমরা ৫ লক্ষ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করি এবং বিয়ের পরপরই গর্ভপাত করাই। ওর সেই বন্ধুর বাসাতেই দুদিন থাকি। সুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম ফিরে আসি। এর মাঝে সে আবারও শারীরিক সম্পর্ক করে।

চট্টগ্রাম ফিরে সুস্থ হবার চেষ্টা করতে থাকি, এরই মাঝে তাঁর বাসায় কীভাবে যেন জেনে যায় বিয়ের কথা। ওর আপন ৩ বোন, তাঁরা খুবই জঘন্য স্বভাবের। তাঁরা ফোন করে আমাকে গালাগালি করে। আমি সব বলে দেই। এক পর্যায়ে ও আর আমার সাথে যোগাযোগ করে না… সে টেলিফোনে তালাক তালাক তালাক উচ্চারণ করে আমাকে তালাক দিয়ে দেয়। পরে জানতে পারি যে ওই বিয়ে একটা সাজানো নাটক ছিল, আসলে আমাদের কোন বিয়ে হয়নি। তারপর আর কোনভাবেই ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারি না। ওর বন্ধুরা সবাই এই প্রতারণায় ওকে হেল্প করেছে।

কিছুদিন পর জানতে পারি যে ও একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে। বড়লোকের মেয়ে এবং সেই মেয়েও গর্ভবতী। ঘটনা ক্রমে আমার এক আপু ওই মেয়েটির ফেসবুক ফ্রেন্ড। সে-ই ফেসবুকে এসব দেখে আমাকে জানায়। তারপর জানতে পারি যে তাঁদের একটা মেয়ে হয়েছে, দুজনে খুব সুখে আছে ইত্যাদি আরও অনেক কিছু।

বিশ্বাস করেন আপু, আমি যদি দেখতাম সে শুধরে গিয়েছে, আগের মত খারাপ চরিত্র আর নেই, আমার খারাপ লাগলেও মেনে নিতাম। কিন্তু সে শুধরে যায়নি। সে বউকে ঘরে রেখে আগের চাইতেও বেশি খারাপ কাজ করে বেড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, নিজের সৎ বোনের সাথেও তাঁর যৌন সম্পর্ক আছে। ওর ওই বোন নিজের মখে স্বীকার করেছে সব আমার কাছে, ফেসবুকের চ্যাটে প্রমাণ আছে। সে প্রত্যেক সপ্তাহেই ট্যুরে যাওয়ার নাম করে মেয়ে মানুষ নিয়ে সিলেট বা ঢাকায় যায়।

আমি বোঝাতে পারবো না আপু, সবকিছু জানার পর আমার খুব অস্থির লাগছে। ওর স্ত্রী মেয়েটি অনেক ভালো, সেই মেয়েটির জন্য খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে আমার কিছু করা উচিত। সে আর তাঁর পরিবার মিলে মেয়েটিকে ইউজ করছে। মাড় মনে হছে মেয়েটির জন্য কিছু করা উচিত। আমার খুব খারাপ লাগচে। আমি চাইনা মেয়েটির পরিণতি আমার মত হোক।

আমি কী করবো আপু? প্লিজ একটা উপায় বলুন।”

পরামর্শ:
চিঠিটা পড়ে ঘৃণায় অন্তর ভরে গেলো আপু। মানুষ এত কুৎসিত হয়? ছিঃ ছিঃ ছিঃ। তিমি যদি এই নোংরা ছেলেটির সাথে শারীরিক সম্পর্কে না জড়াতে, আজ অনেক কষ্ট ও আফসোস তোমার কম হতো। এই পরামর্শের মাধ্যমে আমি সব মেয়েকেই সতর্ক করতে চাই এই মর্মে যে মানুষের মন বোঝা খুব কঠিন আপুরা! সম্পর্ক থাকার সময়ে সব কিছুই সুন্দর মনে হয়। কিন্তু আবেগের বশে এমন কিছু করে ফেলো না, যাতে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর বাকি জীবন কাঁদতে হয়।

যাই হোক আপু, তোমার মনের জোর দেখে খুশি হলাম। তুমি যে নিজেকে সামলে নিয়েছো এবং নিজের কথা না ভেবে আরেকটি মানুষের কথা ভাবছো, এটা খুব চমৎকার একটি ব্যাপার। খুব বেশি মানুষ এটা পারে না। তোমার বড় মনের জন্য অভিনন্দন তোমাকে।

আমি কখনোই কারো কোন ক্ষতি হোক, এমন পরামর্শ দিই না। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাপারটি ভিন্ন। সেই মেয়েটির স্বামীর যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে অবশ্যই মেয়েটির জানা উচিত। যে লোকের চরিত্র এত খারাপ, তার কারণে স্ত্রীর যদি একটি খাবার অসুখের সংক্রমন হয় আমি তাহলে মোটেও অবাক হবো না। কিন্তু আপু, আমার মনে হয় তমার নিজের আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে যাওয়া মোটেও উচিত হবে না। কারণ মেয়েটি হয়তো তোমার কথা বিশ্বাস করবে না। তুমি এক কাজ করো, তোমার যে পরিচিত আপু বিয়ে ও বাচ্চার সংবাদ তোমাকে দিয়েছে, সেই আপুকেই সব বিস্তারিত খুলে বলো। এবং তাঁকেই বলো সেই মেয়েটিকে সব জানাতে। তুমি জানানোর চাইতে এটাই বেশি ফলদায়ক হবে। যেটা সত্য, কেবল সেটাই জানাবে। উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ সহ। তারপর মেয়েটি কী করবে সেটা তাঁর ইচ্ছা। তবে হ্যাঁ, তুমি আর পেছন ফিরে অতীতের দিকে তাকাবে না।প্রিয়.কম



মন্তব্য চালু নেই