বিশ্ব গুম দিবসের আয়োজন বিএনপির
কাঁদলেন খালেদা জিয়াও
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখেই হাউমাউ করে কাঁদলেন গুমের শিকার হওয়া বিএনপি ও দলের অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের স্বজনেরা। তাদের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া প্রতিটি অশ্রুকণা যেন প্রিয় মানুষটির সন্ধান করেছে। তাদের চোখের জলের ভাষা বুঝতে পেরে হয়তো নিজের অজান্তেই কাঁদলেন খালেদা জিয়া। তবে বেগম খালেদা জিয়ার চোখ বেয়ে অশ্রু না পড়লেও তার মুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় গুম হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীর স্বজনদের জন্য ভেতরে ভেতরে বার বার কেঁদে উঠছে তার মন।
রোববার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত বিশ্ব গুম দিবস উপলক্ষে গুমের শিকার বক্তিদের স্বজনের প্রতি খালেদা জিয়া সহমর্মিতা শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এমন চিত্র দেখা গেছে।
অনুষ্ঠানে স্বজনেরা চোখের জলে তাদের নিখোঁজ বাবা, ভাই ও স্বামীকে নিজেদের কাছে বার বার ফিরে চেয়েছেন। তারা বলেছেন, আমাদের একটি কথা, আমরা আমাদের প্রিয় মানুষকে ফিরে পেতে চাই। সরকার কিভাবে আমাদের প্রিয় মানুষকে ফিরে দেবে সেটা আমরা জানি না। আমাদের একটাই দাবি আমাদের সন্তান, স্বামী, বাবা ও ভাইকে ফিরিয়ে দিন। এক্ষেত্রে আমরা কিছু শুনতে ও বুঝতে চাই না।
‘অনন্ত অপেক্ষা… বাংলাদেশে গুম ২০০৯-২০১৫’ ‘বিশ্ব গুম দিবস উপলক্ষে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনের প্রতি খালেদা জিয়ার সহমর্মিতা’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গুমের শিকার ২৬ পরিবার ও তাদের ৬০/৬৫ স্বজন।
এসময় বিএনপির পক্ষ থেকে সংক্ষিপ্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদির লুনা বলেন, ‘আমার স্বামী ২০১২ সালে ১৭ এপ্রিল নিখোঁজ হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান নেই। এক্ষেত্রে সরকারও কর্ণপাত করছে না।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘স্বামীকে ফিরে পেতে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গেয়েছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে কথা দিয়েছিলেন সে কথা তিনি রাখতে পারেননি। এমনকি আমার স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর আমি থানায় জিডি করেছি। সেটিরও কোনো অগ্রগতি নেই।’
এসময় তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে গুম হওয়া বিএনপি নেতাদের সন্ধান করার জন্য আবারও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানান।
একই অনুষ্ঠানে তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া যুবদলের সভাপতি সাজিদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফা ইসলাম বলেন, ‘ভাইকে হারিয়ে আমরা দূর্বল হয়ে পড়েছি। কিন্তু এরপরও আমরা হাল ছাড়বো না। বাংলাদেশ সরকার আমার ভাইকে ফিরে দিতে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাবো, তবু আমার ভাইকে আমি ফিরে পেতে চাই।’
গুম হওয়া নেতা মো. শামসুউদ্দিনের বাবা মিজান উদ্দিন মুন্না আবেগ ভরা কণ্ঠে বলেন, ‘ছেলের ছবি বুকে নিয়ে আছি কিন্তু ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারছি না। এটা বাবা হিসেবে যে কতোটা কষ্টের তা আমি বোঝাতে পারবো না।’
এসময় গুম হওয়া ছাত্রদলের নেতা সাজেদুল ইসলাম রাসেলের বোন লাবনী আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই নেই। আর যার ভাই নেই সে শুধু এই কষ্টটা বোঝে। আমার মাও তার ছেলে হারানোর যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছে না। আমি আমার মার দিকে তাকাতে পারি না। তাই মায়ের কষ্ট দূর করতে যে কোনো মূল্যেই হোক আমি আমার ভাইকে ফিরে পেতে চাই।’ এই কথা বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আহমদ আযম খান, যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, সাংবাদিক শফিক রেহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য চালু নেই