কাঁচা আমের অনেক গুণ
কখনও আবার ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়ানোর মধুর স্মৃতি আর সেই গল্পের চরিত্র হয়েই আমাদের শৈশবের সুন্দর সময় কেটেছে। কখনও আবার গ্রীষ্মের কাঠ ফাটা রোদে বসে জিভে জল আনা আমের ভর্তা হয়েছে একমাত্র সেই সময়ের সঙ্গী।
আবার কখনও বা মায়ের হাতের বানানো আম আর কাসুন্দি দিয়ে জমে উঠেছে বিকাল। আমের আচারেও আছে নানা বাহার। টক, মিষ্টি, ঝাল যে কোন স্বাদের আমের আচারই সবার কাছে প্রিয়। এসব কিছু ছাড়াও আমের আছে আরও অনেক গুণাবলী। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
গরম এসে গেছে, আর এখনই কাঁচা আমের মৌসুম। আমকে বলা হয় ফলের রাজা। সব বয়সের মানুষই পাকা আম পছন্দ করে এবং অন্য যেকোন ফলের চেয়ে এই ফলটি বেশিরভাগ মানুষ পছন্দ করে। কিন্তু কাঁচা আমের স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা জানলে আপনি বুঝতে পারবেন কাঁচা আম খাওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা।
কাঁচা আমের গন্ধে মন ভরে যায় সতেজতায়। চাষের ধরণ অনুযায়ী আম বিভিন্ন আকার আকৃতির হয়ে থাকে। আসলে আমের বিভিন্ন রকম সহস্রাধিক প্রজাতি আছে। স্কুলের বাচ্চাদের ও অনেক পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রিয় কাঁচা আম প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, মিনারেল ও পানিতে ভরপুর। কাঁচা আম সাধারণত আচার বানানোর কাজে ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও জুস, চাটনি, সস, জ্যাম এবং ফলি হিসেবে খাওয়া হয়। তবে সবচাইতে আকর্ষণীয় হচ্ছে কাঁচা আমের ভর্তা। আসুন তাহলে জেনে নেই কাঁচা আমের স্বাস্থ্য গুণাবলী সম্পর্কে-
এসিডিটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে : খাদ্যাভ্যাসের জন্য বেশিরভাগ মানুষই এসিডিটির সমস্যায় ভুগে থাকেন। কাঁচা আম খেলে এসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ঔষধ গ্রহণ ছাড়াই আপনার হজমে সাহায্য করবে কাঁচা আম।
পানির ঘাটতি রোধ করে : গরমে আমাদের শরীর থেকে অনেক পানি বাহির হয়ে যায়। শরীরের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য এবং পানির ঘাটতি পূরণের জন্য সামান্য লবণ দিয়ে কাঁচা আম খান।
পেটের সমস্যা দূর করে : গরমের সময় বেশিরভাগ মানুষের পেটে সমস্যা হতে দেখা যায়। ডায়রিয়া, আমাশয় ও বদহজমের মত সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে। খাদ্য হজমে সহায়তা করে কাঁচা আম। অন্ত্রকে পরিষ্কার করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয় কাঁচা আম।
ওজন কমায় : মিষ্টি আমের চেয়ে কাঁচা আমে চিনি কম থাকে বলে এটি ক্যালরি খরচে সাহায্য করে।
স্কার্ভি ও মাড়ির রক্ত পড়া প্রতিরোধ করে : কাঁচা আম খেলে আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি সরবরাহ করে। স্কার্ভি, অ্যানেমিয়া ও মাড়ির রক্ত পড়া কমায় কাঁচা আম। কাঁচা আমের পাউডার বা আমচুর স্কার্ভি নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী।
মুখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে : সবুজ কাঁচা আম খাওয়া মাড়ির জন্য উপকারী। এটি শুধু মাড়ির রক্ত পড়াই বন্ধ করেনা নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।
মর্নিং সিকনেস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে : বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের মর্নিং সিকনেস দূর করতে চমৎকারভাবে কাজ করে কাঁচা আম। সামান্য লবণ মাখিয়ে কাঁচা আম খেলে বমি বমি ভাব দূর হয়।
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায় : কাঁচা আম আলফা ক্যারোটিন ও বিটা ক্যারোটিনের মত ফ্লাভনয়েড সমৃদ্ধ। এই সব উপাদান দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে ও দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়।
লিভারের সবচেয়ে ভালো বন্ধু : লিভারের রোগ নিরাময়ের একটি প্রাকৃতিক উপায় হচ্ছে কাঁচা আম। যখন কাঁচা আম চিবানো হয় তখন পিত্ত থলির এসিড ও পিত্ত রস বৃদ্ধি পায়। এর ফলে যকৃতের স্বাস্থ্য ভালো হয় এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন পরিষ্কার করে।
ঘামাচি প্রতিরোধ করে : গ্রীষ্মকালের সবচেয়ে খারাপ শত্রু হচ্ছে ঘামাচি। ঘামাচির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সবচেয়ে ভালো উপায় কাঁচা আম খাওয়া। কাঁচা আমে এমন কিছু উপাদান আছে যা সান স্ট্রোক হতে বাধা দেয়।
রক্তের সমস্যা দূর করে : শরীরের কোষকে উজ্জীবিত করে কাঁচা আম এবং রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে ও নতুন রক্ত কোষ গঠনে সহায়তা করে। বিভিন্ন রকমের রক্তের সমস্যা যাদের থাকে যেমন- রক্তশূন্যতা, ব্লাড ক্যান্সার, রক্তক্ষরণের সমস্যা ও টিউবারকোলোসিসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে কাঁচা আম।
এনার্জি প্রদান করে : আপনি কি জানেন কাঁচা আম আপনাকে প্রচুর এনার্জি দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে দুপুরের খাওয়ার পরে কাঁচা আম খেলে তন্দ্রা কাটিয়ে উজ্জীবিত হতে সাহায্য করে।
কাঁচা আমের কষ মুখে লাগলে ও পেটে গেলে মুখে, গলায় ও পেটে ইনফেকশন হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।
ঘাম কমায় : গরমের ঘাম থামতেই চায়না। কাঁচা আমের জুস খেয়ে ঘামের মাত্রা কমানো যায়। অতিরিক্ত ঘামের ফলে সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং আয়রন কমতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়াকে প্রতিরোধ করে কাঁচা আম।
মৌসুমি ফল হিসেবে কাঁচা আমের তুলনা হয় না। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি রসালো এবং মুখরোচক একটি ফল। এ ছাড়া মৌসুমের সময় মৌসুমের ফল খাওয়া স্বাস্থ্যর জন্য উপকারী। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আর সুস্থ থাকতে মৌসুমি ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
মন্তব্য চালু নেই