কষ্ট করেই জিততে হলো ভারতকে

জয়ের জন্য টার্গেট ১৮৩ রান। বিশ্বমানের ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে এমন টার্গেট বেশ সহজেই ছুঁবে ভারত, এমনটিই ভেবেছিল সবাই। তবে উইন্ডিজ বোলারদের নৈপুন্য তা হতে দেয়নি। ভারতকে বেশ কষ্ট করেই জিততে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। শুক্রবার পার্থে ধোনিদের জয়ের ব্যবধান ৪ উইকেটে। চলতি বিশ্বকাপে ভারতের এটি টানা চতুর্থ জয়। তবে বিশ্বকাপে টানা অষ্টম জয়ে নিজেদের রেকর্ডই ছুয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত।

শুরুতেই দুই ওপেনারের বিদায়। মাঝে নেই কোহলি ও রাহানেও। বেশ চাপে পড়া ভারতকে পথ দেখানোর দায়িত্ব নেয়া রায়নারও বিদায়। শেষ পর্যন্ত লো স্কোরিং ম্যাচে হেরে যাবে ভারত, এমন শংকা যখন চরমে, তখনই ধোনি চমক। যোগ্য অধিনায়ক হিসাবে দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে, ৬৫ বল হাতে রেখেই (৬/১৮৫)। ৫৬ বলে অপরাজিত ৪৫ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেন মাহেন্দ্র সিং ধোনি।

অথচ শুরুটা যাচ্ছেতাই ছিল ভারতের। ইনিংসের শুরুতেই ভারত শিবিরে উইন্ডিজ পেসার জেরম টেইলরের আঘাত। দলীয় ১১ রানে সাজঘরে ফেরেন শিখর ধাওয়ান। টেইলরের বলে সামির হাতে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগ পর্যন্ত ভারতীয় এই ওপেনারের রান ছিল মাত্র নয়। আরেক ওপেনার রোহিত শর্মাও পারেননি আগাতে। তিনি করেছেন মাত্র সাত রান। দলীয় ২০ রানের মাথায় টেইলরের বলে রামদিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।

তবে তৃতীয় উইকেট জুটিতে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন বিরাট কোহলি ও অজিঙ্কা রাহানে। এই জুটি থেকে আসে ৪৩ রান। ক্রমশ ভয়ংকর হয়ে ওঠা কোহলি বিদায় নেন ৩৩ রান করে। দলীয় ৬৩ রানের মাথায় তাকে স্যামুয়েলসের হাতে ক্যাচ বানান আন্দ্রে রাসেল। এরপর ১৫ রান যোগ না হতেই বিদায় নেন অজিঙ্কা রাহানে (১৪) রোচের বলে রামদিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে। এরপর সুরেশ রায়না ও অধিনায়ক ধোনি আগাতে থাকেন ধীরলয়ে। তবে টিকতে পারেননি রায়না। ২২ রান করে তিনি শিকার হন স্মিথের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। দলীয় রান তখন ১০৭। জাদেজা আউট হন ১৩ রান করে রাসেলের বলে।

ছয় উইকেট হারিয়ে তখন রীতিমতো কাঁপছে ভারত। তবে পরে আর অঘটন ঘটেনি। দক্ষতার সঙ্গে মধুর সমাপ্তি করেছেন ধোনি-অশ্বিন জুটি। সপ্তম উইকেট জুটিতে তারা করেন গুরুত্বপূর্ণ ৫১ রান। ধোনি ৪৫ ও অশ্বিন ১৬ রানে থাকেন অপরাজিত। দলও পায় দারুণ এক স্বস্তির জয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে রাসেল ও টেইলর দুটি, রোচ ও স্মিথ নেন একটি করে উইকেট।

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থা ছিল দিশেহারা। রুদ্রমূর্তি ধারণ করতে পারেনিন ক্রিস গেইল। তার পথ ধরে হেঁটেছেন বাকি সবাই। মাত্র ২১ রান করেই দায়িত্বজ্ঞানহীন শটে সাজঘরে ফেরেন তিনি। শেষের দিকে নামা জেসন হোল্ডারের ৫৭ রানের ইনিংসটি না হলে বড় ধরনের লজ্জাতেই পড়তে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। গেইল, হোল্ডারের পাশাপাশি ক্যারিবীয় শিবিরে উল্লেখযোগ্য রান সংগ্রহ কেবল ড্যারেন সামির ২৬। পুরো ৫০ ওভারও খেলা হয়নি তাদের। ৪৪.২ ওভারে অল আউট ১৮২ রানে, যা গেইলেদের সঙ্গে ঠিক মানায় না। তবে প্রতিপক্ষ ভারত বলেই হিসাবটা উল্টে গেছে আজ পার্থে।

আরও কম রানে অল আউট হতে পারত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতীয় ফিল্ডারদের বাজে ফিল্ডিংয়ে সেটা হয়নি। গোটা চারেক ক্যাচ ফেলেছেন তাঁরা। এর মধ্যে দু-একটি তো যথেষ্ট দৃষ্টিকটু। ক্যাচ মিসের মহড়ায় না নামলে ক্যারিবীয়দের ইনিংস শেষ হতো আরও আগেই। ভারতের হয়ে এই ম্যাচে মোহাম্মদ শামি দারুণ বল করেছেন। ইনিংসের শুরুতে মূলত তাঁর বোলিংয়েই খেই হারায় ক্যারিবীয় ব্যাটিং। মাত্র ৩৫ রান দিয়ে তিনি তুলে নেন ৩ উইকেট, ফলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন তিনিই। । মোহিত শর্মাও কম যাননি। নয় ওভার বল করে একটি উইকেট নিলেও রান দিয়েছেন মাত্র ৩৫। উমেশ যাদব, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা—সবাই যথেষ্ট আতঙ্ক ছড়িয়েছেন ক্যারিবীয় শিবিরে। যাদব ও জাদেজার সংগ্রহ ২টি করে উইকেট। অশ্বিন নিয়েছেন একটি উইকেট।



মন্তব্য চালু নেই