কষ্টের স্মৃতি কেন ভুলতে পারে না মানুষ?

বলা হয়ে থাকে, প্রসববেদনার স্মৃতি যদি নারীরা ভুলে না যেতো, তাহলে তারা কখনো দ্বিতীয় সন্তানের মা হতে পারতো না। কিন্তু আসলেই কি এমন একটা যন্ত্রনাদায়ক অভিজ্ঞতার কথা নারীরা ভুলে যেতে পারে?

সুইডেনে ২ হাজার নারীর উপর চালানো এক গবেষণা প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। গবেষকরা সন্তান জন্মদানের মাত্র দুই মাস পরে নারীদের স্মৃতির সাথে তার আরো ১২ মাস পরে তাদের একই স্মৃতির তুলনা করেছেন। দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ মা-ই দুই মাস পরে যে যন্ত্রনাদায়ক স্মৃতির কথা বলেছেন, ১২ মাস পরে এসেও একই ধরনের কথা বলছেন। এক-তৃতীয়াংশ মা ১২ মাসের মাথায় এসে তাদের সে যন্ত্রনাদায়ক স্মৃতির কথা কিছুটা হলেও ভুলতে পেরেছেন আর ১৮ শতাংশ মা এই ১২ মাসে তাদের সে স্মৃতি তো ভুলতে পারেনই নি বরং সে স্মৃতি স্মরণ করে এখনো যন্ত্রণা অনুভব করেন।

এর ঠিক ৫ বছর পর এই নারীদের সাথেই আবারো কথা বলেন গবেষকরা। দেখা গেছে এখনো কিছু নারী এখনো যে যন্ত্রনার কথা মনে করতে পারেন। তবে এ পর্যায়ে এসে অর্ধেকের বেশি নারীই বিষয়টি অনেকটাই ভুলতে পেরেছেন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটি সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান জন্ম দিতে পারলে মা তার কষ্টকে মার্থক বলে মনে করেন। কিন্তু দেখা গেছে সুস্থ সন্তান জন্দ দেয়া সত্ত্বেও অনেক মা-ই সেই যন্ত্রনা ভুলতে পারেন না।

কিন্তু কথা হচ্ছে, এত যন্ত্রনাদায়ক এক অভিজ্ঞতার পরেও কেন নারী পুনরায় মা হতে চান? বেশিরভাগ নারীই এ বরক একটা অভিজ্ঞতাকে তাদের অর্জন হিসেবে মনে করেন। তারা মনে করেন, নরী হয়ে তারা যদি এ কষ্ট সহ্য করতে না পারেন তাহলে তাদের দারা কোনো কিছুই সম্ভব নয়।

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সময়ের সাথে সাথে কিন্তু আমাদের দুঃস্মৃতিগুলো হারিয়ে যায় না। প্রায় দশকব্যাপী মানুষের মস্তিষ্কের উপর চালানো মনস্তাত্বিক গবষেণার ফলাফল বলছে, আমরা প্রতিমূহুর্তেই এ স্মৃতিগুলো মনে করার চেষ্টা করি। মানুষের মস্তিষ্ক একটি ডিভিডি প্লেয়ারের মত নয় যে, একটু পেছন থেকে চালালেই সেটা হুবহু আগের মতই চলবে। বরং সময় এবং প্রেক্ষাপট অনুসারে একই গল্পের বিভিন্ন রূপ তৈরী হয় মানুষের মস্তিষ্কে।

সন্তান জন্ম দেয়ার মতো এমন একটি ইতিবাচক যন্ত্রণা ভুলতেই যদি মানুষের এক কষ্ট হয়, তাহলে অন্যান্য ক্ষতগুলোর ব্যাপারে কি হবে?

এই ধরনের যন্ত্রণাগুলো মূলত মানুষের জন্য শিক্ষামূলক। ধরুন আপনি প্রতিদিন কোকা কোলা খান। একদিন ক্যান খুলতে গিয়ে আঙ্গুল কেটে ফেললেন। তাহলে এই ঘটনা পরবর্তীতে ক্যান খোলার সময় আপনাকে আরো সতর্ক করে দেবে। আবার ধরুন আপনি ভুলবশত উত্তপ্ত কোনো লোহার বস্তু হাত দিয়ে ধরলেন। আপনার চার পাঁচটি অঙুল পুড়ে গেলো। এই ঘটনা সারাজীবন লোহার কিছু স্পর্শ করার ক্ষেত্রে আপনার সতর্কতার মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। বা বাসার দরজা খোলার সময় দরজার ফাঁক দিয়ে আপনার আঙুল ঢুকে গেলো, পরেরবার নিশ্চয়ই আপনি একই কাজ করতে যাবেন না। সুতরাং সব যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতার কথা ভুলে যাওয়া কোনো কাজের কথা নয়। তবে কিছু দীর্ঘস্থায়ী ও কঠিন যন্ত্রণা সবাই ভুলতে চাইবে। যেমন ধরুন ডায়াবেটিস। এটা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এই যন্ত্রণার কথা প্রতিমুহূর্তে স্মরণ করে আপনার কোনো লাভ নেই।

কিন্তু কী কারণে মানুষ এই যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতার কথা ভুলতে পারে না? ২০০৬ সালে ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনা কলেজ অব মেডিসিন দাবি করেছে, এর জন্য দায়ী বিশেষ এক ধরনের কোষ PK Mzeta । এই কোষগুলোর সঙ্গে নিউরোন এবং ব্রেনের সরাসরি যোগসূত্র আছে এবং আমরা কোনো ব্যাথা পওয়ার পর শরীরের যে অঙ্গভঙ্গি করি তার জন্যও এই কোষগুলোই দায়ী। বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখেছেন, তাদের শরীরের ওই নির্দিষ্ট কোষগুলো ব্লক করে দিলে তাদের মধ্যে যন্ত্রণার অনুভূতি কমে যায়।



মন্তব্য চালু নেই